বিশ্বজমিন

জি-৭ আউটরিচে প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ৪ প্রস্তাব

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১০ জুন ২০১৮, রবিবার, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন

বাস্তুচ্যুত নিজ ভূমে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে এবং নিপীড়কদের বিচারের মুখোমুখি করতে জি-৭ জোটসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়ে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে ৪টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (০৯ জুন) কুইবেকে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের আউটরিচ লিডারস অধিবেশনে তিনি ওই প্রস্তাব দেন। সেখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সই হওয়া দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং শর্তহীনভাবে শিগগির রাখাইন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন,  জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিপীড়নের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং রাখইনে বর্বরতায় জড়িত প্রত্যেককে জবাবদিহিতা ও বিচার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

চার প্রস্তাবের বিস্তারিত:
১. জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজস্ব মাতৃভূমিতে সুষ্ঠু ও নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে তাগাদা দেওয়া।
২. রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশগুলো এখনই শর্তহীনভাবে বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে তাগিদ দেওয়া।
৩. জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নিপীড়নের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
৪. রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহারে চালানো অমানবিক নিপীড়নে জড়িতদের জবাবদিহিতা ও বিচার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

প্রধানমন্ত্রী যা বললেন -  এদিকে জি-৭ আউটরিচ অধিবেশনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে বলেন, আমি আগেও বলেছি আবারো বলছি, রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ মিয়ানমারে। মিয়ানমারকেই এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে যাতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা যাতে তাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারে; যেখানে তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী বসবাস করে আসছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ফিরে যাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা ইতোমধ্যে মিয়ামারের সঙ্গে চুক্তি করেছি। রোহিঙ্গাদের স্থানীয় ও টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে আমরা এর সঙ্গে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’কে সম্পৃক্ত রেখেছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারের উচিত তাদের রাখাইন রাজ্যে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। সংকট সমাধানে মিয়ানমারের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন- রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও মানবাধিকার লংঘনের দায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখ্য, জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের আউটরিচ অধিবেশনে যোগ দিতে শুক্রবার সকালে কানাডা পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা ও অন্যান্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কানাডা সফর করছেন। আউটরিচ বৈঠকের স্থান লা মানইর রিচেলিউয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌঁছলে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তাঁর স্ত্রী সোফাই গ্রেগরি ট্রুুুডো তাঁকে স্বাগত জানান। শেখ হাসিনা অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং ফটোসেশনে অংশ নেন। বিশ্বের অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলোর সংগঠন জি-৭-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছেÑ কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। অনুষ্ঠানে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট এবং জি-২০’র সভাপতি মাউরিকো ম্যাকরি, হাইতির প্রেসিডেন্ট ও ক্যারিবিয়ান কমিউনিটির সভাপতি জোভেনেল মইসি, জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী এ্যান্ড্রিউ হোলনেস, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহরো কেনিয়াত্তা, মার্শাল আইল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট হিলদা হেইনি, নওয়ের প্রধানমন্ত্রী এরনা সোলবার্গ, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট ও আফ্রিকান ইউনিয়নের সভাপতি পল ক্যাগামি, সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল, সিসিলির প্রেসিডেন্ট ড্যানি ফেউরি, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা, ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগুয়েন জুয়ান পুউচ, ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন ল্যাগারডি, ইকোনমিক কো-অপারেশন ও ডেভেলপমেন্ট সংস্থার মহাসচিব জোসে এ্যাঞ্জেল গুরিয়া, জাতিসংঘের মহাসচিব এন্টিনিউ গুতেরেস এবং বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টালিনা গিউরগিভা সম্মেলনে যোগ দেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আউটরিচ অধিবেশনের বিভিন্ন সেশনে যোগ দেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য, বৈশ্বিক সন্ত্রাস ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জাতিগত নিধনসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে উঠার জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সহায়তার আহ্বান জানান তিনি। কানাডার কিউবেকে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা ইউএনবি। কিউবেকে লা মালবায়েতে ম্যানোইর রিচেলি হোটেলে এই সম্মেলনে জি-৭ নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জন্য প্যারিস চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে অর্থায়নকে উদ্দীপ্ত করতে হবে এবং বাংলাদেশের জন্য তা সহজতর করতে হবে। বাংলাদেশের মতো দেশের উন্নয়নে সক্ষমতা, প্রযুক্তি বিকাশে কৃষি, জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো খাতগুলোতে  সহায়তা প্রয়োজন। জলবায়ুুর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে দুর্বল ও সবচেয়ে বিপন্ন দেশগুলোর জন্য কানাডা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে আগামী ৫ বছরে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তায় কানাডার ২৬৫ কোটি ডলার ও গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে ৩০ কোটি ডলার অনুদানেরও প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনে যে প্রভাব পড়ছে তা মোকাবিলায় জি-৭ দেশগুলোর কাছে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা চান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা দেখছি ভয়াবহ বন্যা, খরা ও ভারি বৃষ্টিপাত। এমনভাবে ভারি বর্ষণ হচ্ছে যার পূর্বাভাষ করা যায় না। ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর উজানে পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দেশের অভ্যন্তরভাগে মাছের প্রাকৃতিক মজুদ কমে যাজেচ্ছ। আগামী ২০ বছরের মধ্যে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি মানুষকে উপকূলভাগ থেকে সরে আসতে হতে পারে। আমাদের বেশির ভাগ উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও অর্জন জলবায়ুু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে বেশির ভাগই আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে গরিবরা। প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ তার জাতীয় প্রবৃদ্ধির শতকরা প্রায় এক ভাগ খরচ করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status