বই থেকে নেয়া

এফবিআইয়ের এক্স বস কোমি-র বই(পর্ব-১১)

হিলারির আইনজীবীরা ৩০ হাজার ই-মেইল মুছে ফেলেন

মানবজমিন ডেস্ক

৯ জুন ২০১৮, শনিবার, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি তাঁর সাড়া জাগানো বই ‘‘অ্যা হায়ার লয়্যালটি, ট্রুথ, লাইজ এণ্ড লিডারশিপ’’-এ সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট পদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের আলোচিত ই-মেইল তদন্ত বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।
হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটনের বহুল অালোচিত ইমেইল তদন্তে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর নির্দেশ দিয়েছিল, তখন তার ব্যক্তিগত সার্ভারে প্রায় ৬০ হাজার ইমেইল ছিল। হিলারির ব্যক্তিগত আইনজীবীরা সেগুলো খতিয়ে দেখছিলেন। তারা অর্ধেকটা জমা দিয়েছিলেন। আর বাকিটা (প্রায় ৩০ হাজার) তারা মুছে ফেলেন।
আমি এবং এফবিআইয়ের সংশ্লিষ্ট টিম বিশ্বাস করেছিলাম যে, আমরা যদি মুছে ফেলা ই-মেইলগুলোর বিষয়বস্তু না হাতরাতে পারি, তাহলে আমাদের তদন্ত বিশ্বাসযোগ্য হবে না। আমরা শুধু তাদেরও বক্তব্য শোনার জন্য যেতে পারি না। আমাদের এটা জানার দরকার ছিল, তার আইনজীবীরা কিসের ভিত্তিতে ইমেইলগুলো মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমরা তাদের ডিভাইসেসগুলো, যা তারা ই-মেইল মুছে ফেলার কাজে ব্যবহার করেছিল , সেগুলো দেখতে চেয়েছিলাম। কারণ আমাদের বিশেষজ্ঞগণ সেসব তাহলে পরীক্ষা করে মুছে ফেলা ই-মেইলগুলোর হদিস পেতে পারেন।
বোধাগম্যকারণেই আমাদের প্রস্তাব জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের আইনজীবীদের অত্যন্ত নার্ভাস করেছিল। হিলারির আইনজীবীরা ই-মেইল পরীক্ষা করার কাজে যে ল্যাপটপ ব্যবহার করেছেন, তাতে তাদের অন্যান্য ক্লায়েন্টদেরও ই-মেইল ছিল। আমরা যদি ওইসব ল্যাপটপ পরীক্ষা করতাম, তাহলে হিলারির আইনজীবীদের অন্যান্য মক্কেলদের সঙ্গে তাদের যে পেশাদারি গোপনীয়তার সম্পর্ক ছিল, তার লংঘন ঘটত। হিলারির আইনজীবী বেথ উইলকিনসন জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি এবং তার আইনজীবী দলের যারাই হিলারির জন্য কাজে করেছেন, তারা তাদের ব্যবহৃত ল্যাপটপ এফবিআইয়ের হাতে তুলে দেবেন না।
এ বিষয়টি নিয়ে আইনজীবী উইলকিনসন এতটাই তেজস্বী বক্তব্য রাখেন যে, তিনি বলে বসেন এ নিয়ে তিনি চরম তিক্ততায় পৌছানো পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। এফবিআই জেনারেল কাউন্সেল জিম বেকারের সঙ্গে উইলকিনসনের জানাশোনা ছিল। সুতরাং আমি বললাম আপনি তাঁর সঙ্গে কথা বলুন। তাকে বলুন তার টিমের ব্যবহৃত ল্যাপটপ আমাদের দেখতে দেওয়া দরকার। তিনি তাই করেছিলেন। কিন্তু জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের আইনজীবীদের কাছে মিজ উইলকিনসন নালিশ করলেন যে, এফবিআই তাদের পিছু লেগেছে। এপর্যায়ে দেখা গেল এফবিআই এবং ডিপার্টমেন্টের অ্যাটর্নিদের মধ্যে এই ল্যাপটপ ব্যবহার করা নিয়ে একটা শিতল সম্পর্ক তৈরি হল।
আমরা একটি অচলাবস্থার মধ্যে পড়লাম। এফবিআই সরাসরি আমেরিকার জনগণকে এটা বলতে পারেনি যে, ইমেইল রিভিউ এবং তা মুছে ফেলার প্রক্রিয়াটা সম্যক উপলব্ধি করতে আমরা যদি স্বর্গ্যমর্ত তল্লাশি না চালাতে পারি তাহলে আমরা একটি দক্ষ তদন্ত পরিচালনা করেছি, তা বলতে পারি না। আমাদের কাছে এটা ম্যাটার করেনি যে, এরসঙ্গে হিলারির আইনজীবীরা যুক্ত ছিলেন। আমি আসলে একমত হতে পারিনি যে, ল্যাপটপ দেখতে দেওয়া এবং আইনজীবী টিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেওয়া ছাড়া কোনো তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলাটা দাবি করা সম্ভব। যদি সেক্রেটারি হিলারি আগামী দুবছরের জন্য একটি ফৌজদারি তদন্তের অধীন থাকতে চান,  সেটা তো ভালো। মধ্য মে পর্যন্ত এসব যুক্তিতর্কে জোর থাকলেও তখনও পর্যন্ত আমাদেরকে ল্যাপটপ দেখতে দেওয়া হয়নি। তবে গ্রীষ্মকাল ঘনিয়ে এলে এবং পলিটিক্যাল কনভেনশনের ( যখন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীতার মনোনায়ন দেওয়া হয়) পরেও আমরা হিলারির ইমেইল তদন্তের প্রকৃত সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলাম।
মে মাসে আমি সেলি ইয়েটসের কাছে গিয়েছিলাম। এবং তাকে বলেছিলাম এটা কিন্তু দীর্ঘ পথ তাড়া করে ফিরছে। তখন কনভেনশন হতে আর মাত্র কয়েকটা সপ্তাহ বাকি। এবং আমি আমার পরিকল্পনার স্থির ছিলাম এবং একজন স্পেশাল প্রসিকিউটর নিয়োগ দিতে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া কাছাকাছি ছিলাম। আমার পূর্বসূরীরা এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যেমন পরিচালক লুইস ফ্রি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের তহবিল গঠনের বিষয়ে কাউকে তদন্তের দায়িত্ব দিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে লিখিতভাবে সুপারিশ করেছিলেন। আমি বললাম জনগণের মধ্যে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাটি সম্পর্কে আস্থায় বড় ধরনের চিড় ধরার আগেই ইমেইল তদন্ত শুর’ করা দরকার।, এটা না করতে পারলে তা খুব বেশি দেরী হয়ে যাবে। এই তদন্তের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাবের বাইরে থাকা কোনো প্রসিকিউটরকে নিয়োগ করা দরকার। আমি এটা কবে কখন করব তা জানতাম না। কিন্তু ল্যাপটপগুলো পাওয়া সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিলাম আমরা।

চলবে-
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status