বই থেকে নেয়া

এফবিআই’র এক্স বস কোমির নতুন বই (পর্ব-৯)

গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রধান নির্বাহীর আনুগত্য আশা করা বৈধ নয়

মানবজমিন ডেস্ক

৪ জুন ২০১৮, সোমবার, ৯:৫০ পূর্বাহ্ন

চাকরিচ্যুত এফবিআই পরিচালক ও যুক্তরান্ট্রের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল জেমস কোমি তার সাড়া জাগানো বই ‘ অ্যা হায়ার লয়্যালটি : ট্রুথ, লাইজ এ- লিডারশিপ’ এ স্পষ্ট করেছেন যে, কোনো সরকার প্রধান তার দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আনুগত্য দাবি করাটা আসলে অবৈধ । অথচ হোয়াইট হাউসে ডিনারে ডেকে নিয়ে ট্রাম্প তাঁর কাছে আনুগত্য দাবি করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইন মন্ত্রনালয়কে স্বাধীন সংস্থা হিসেবে মনে করা হয়। তারা প্রেসিডেন্ট প্রশাসনের উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে পারে। আর সাধারনত তার বিশ^াসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না। জেমস কোমির জবানিতেই শুনুন, ট্রাম্প কি ধরণের পরিস্থিতিতে তাঁর কাছে লয়্যালটি বা আনুগত্য আশা করেছিলেন।

আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, কি ঘটতে যাচ্ছে। প্রাইভেট ডিনারের নকশা এবং তিনি যে ইতিমধ্যেই আমাকে বহু উপলক্ষ পেয়েও স্বীয় পদে বহাল থাকার কথা একটিবারের জন্যও বলেননি, তাতে আমি আশ^স্ত হয়েছি যে, ট্রাম্প আমার সঙ্গে একটা উপযাচকের সম্পর্ক গড়তে চাইছেন। কেউ হয়তো তাকে বলে থাকবে যে, তিনি আমাকে যদি এফবিআইয়ের পরিচালক পদে বহাল রাখেন, তাহলে সেটা আমাকে ‘ফ্রি’ দেওয়া হবে, আর আমাকে তার বিনিময়ে কিছু দিতে হবে। এটা হলো অভিজ্ঞতার ঝুলিতে একটা অদ্ভুত কিছু যুক্ত হওয়া।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আমাকে ডিনারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আর তার মেনু ছিল আমারই চাকরির নিরাপত্তা।
আমি তাঁকে বললাম, মাকিৃন প্রেসিডেন্ট যে কোনো সময় এফবিআইয়ের পরিচালককে চাকরিচ্যুত করার ক্ষমতা রাখেন।কিন্তু এই পদে আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে চাই। কারণ এই কাজ আমি ভালোবাসি। এবং আমি মনে করি কাজটি আমি দায়িত্বশীলতার সঙ্গেই পালন করে চলছি। আমি আরো বললাম, আমি কখনও ভাবিনি যে আমি সরকারে আবার ফিরব। কিন্তু ২০১৩ সালে যখন পরিচালকের দায়িত্ব পেলাম, তখন মনে হল কাজটি বিপুলভাবে প্রশংসনীয়।আমি আমার পুরো মেয়াদ কাজ করতে চাই। বুঝতে পারি ট্রাম্প আমার কাছে আরো বিস্তারিত জানতে চান। তখন আমি বললাম, তিনি আমার ওপর আস্থা রাখতে পারেন। আমি ‘বিশ^স্ত’ থাকবো। এই ‘বিশ^স্ত ’ থাকার মানে অবশ্যই রাজনৈতিক দল যেভাবে অনেক সময় একটি টিমের কাছ থেকে ভোট দাবি করে থাকে, সেই অর্থে নয়। টিমের ওপর আস্থা রাখার অঙ্গি, সেভাবে নয়।আমি তাঁকে নির্দিস্ট করে বলি, তিনি আমার ওপর আস্থা রাখতে পারেন যে, আমি সর্বদাই তাঁর কাছে সত্য প্রকাশ করব।
আমি ট্রাম্পকে আরো বলি, আমি কখনও ধূর্ততা পছন্দ করি না। আমি কখনও লিক করি না। আমি তাকে এও বলি, রাজনৈতিক অর্থে আমি কারো সাইডে থাকি না। ঐতিহ্যগত রাজনৈতিক অর্থে আমাকে কোনো পক্ষের গণ্য করা যাবে না। আমি তাকে ব্যাখ্যা করে বলি, আর গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানের এরকম একটি অবস্তানই প্রধান নির্বাহীর স্বার্থের সবথেকে বড় রক্ষাকবচ। এফবিআই এবং আইন মন্ত্রণারয়কে সাধারনত সব থেকে বিতর্কিত তদন্তের প্রক্রিয়া, যার মধ্যে প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের আচরণের বিষয় থাকে, তার মধ্যে টেনে আনা হয়। যেমনটা আমরা বুশ প্রশাসনের আমলে কার্ল রোভ ও স্কুটার লিবির তদন্তে দেখেছিলাম। এফবিআই এটা বিশ^াসযোগ্যতার সঙ্গে করতে পারে, কারণ এই গোয়েন্দা সংস্থাকে কোনোভাবেই প্রেসিডেন্টের দ্বারা ব্যবহার্য কোনো একটি টুল হিসেবে দেখা হয় না। এফবিআই এবং আইন মন্ত্রণালয়ের এতটা সুনাম আছে বলেই কোনো প্রেসিডেন্টের পক্ষেই তেমন কোনো অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত না করে আড়ালে রাখতে পারেন না। বরং তখন তারা বিশেষ প্রসিকিউটর নিয়োগ করে থাকেন।
আমার এধরনের বাতচিৎ নিশ্চয় ট্রাম্পের ভালো লাগেনি। একটু বিরতি দিয়ে ট্রাম্প তার চোখেমুখে কিছুটা কাঠিন্য টেনে বললেন, ‘‘ আমার আনুগত্য দরকার। আমি আনুগত্য আশা করি।’’
এরপর নিরবতা নেমে আসে।আমি নড়াচড়া পর্যন্ত করিনি। কথা বলিনি। কোনোভাবেই আমি আমার অভিব্যক্তিতে কোনো পরিবর্তন আনিনি। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট সবেমাত্র এফবিআই পরিচালকের কাছে তার আনুগত্্য দাবি করেছেন। এটা একেবারেই নিরানন্দের বিষয়। যারা ট্রাম্পকে এবিসয়ে সমর্থন করতে চাইবেন, তারা দয়া করে একটু ভাবুন যে, প্রেসিডেন্ট ওবামা এমন একটি সময়ে এফবিআই পরিচালককে একটি একক ডিনারে ডেকেছেন, যখন তার প্রশাসনের একজন উর্ধতন কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে, আর বারাক ওবামা তখন এফবিআই পরিচালকের চাকরিগত নিরাপত্তানিয়ে আলোচনা এবং তার আনুগত্য আশা করছেন।কোনো সন্দেহ নেই যে, এরকম বহু লোক পাওয়া যাবে যারা ফক্স নিউজে বসে যাবেন শুধু এই আওয়াজ তুলতে যে, প্রেসিডেন্ট ওবামার অনতিবিলম্বে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন চাই। অবশ্য এধরনের পরিস্থিতিতে ওবামা কিংবা বুশ এরকম কিছু একটা করে বসতে পারেন, তা আমি কল্পনাও করতে পারি না।

(চলবে )
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status