বই থেকে নেয়া
এফবিআই’র এক্স বস কোমির নতুন বই (পর্ব-৭)
এফবিআই-কে হেয় করতেই আমাকে ডিনারে ডাকেন ট্রাম্প
মানবজমিন ডেস্ক
৩১ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:০০ পূর্বাহ্ন
এফবিআইয়ের চাকরিচ্যুত পরিচালক জেমস কোমি তাঁর সাড়া জাগানো বই ‘ এ হায়ার লয়্যালটি, ট্রুথ, লাইজ এন্ড লিডারশিপ’ এ লিখেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন নির্বাচন এবং মস্কোর বেশ্যা ব্যবহারের প্রসঙ্গ ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ ঘটেছিল। কিন্তু সেটাই শেষ ছিল না। সবথেকে বিস্ময়কর ছিল, ঐতিহ্য ও প্রথা ভেঙ্গে ট্রাম্প একদিন তাঁকে হোয়াইট হাউসে এক নৈশভোজে আমন্ত্রণ করে বসলেন। শোনা যাক কোমির নিজের জবানিতে:
২৭ জানুয়ারি, ২০১৭ । শুক্রবার। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আমার সম্পর্কের ততোদিনে ২১ দিন পার হয়েছে। আমি হোয়াইট হাউসে ফিরে এসেছি। স্বাভাবিক নিয়মেই আমি আমার ডেস্কে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। আমার সহকারী অলথা জেমস টেলিফোনের অপর প্রান্তে একজন নারীকে মিলিয়ে দিলেন। ফোনটি হোয়োইট হাউসের। নারীকন্ঠের বার্তা, প্রেসিডেন্ট আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। ট্রাম্প বললেন, সেই রাতে আমি তার সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দিতে আসতে চাই কিনা। আমন্ত্রণটি স্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু আমি ভাবলাম যে, কবুল বলা ছাড়া আমার সামনে অন্য বিকল্প ছিল না। আমি উত্তর দিলাম: ‘অবশ্যই , স্যার।’ তিনি জানতে চাইলেন, ছয়টা নাকি সাড়ে ছয়টা আমার জন্য সহজ হবে। বললাম, আপনার সময়ই আমার সময়, স্যার। তিনি সাড়ে ছয়টা বেছে নিলেন। আমি টেলিফোন রাখলাম। এবং প্যাটরিসকে জানালাম, থাই ফুড দিয়ে ডিনারের পূর্ব নির্ধারিত উপলক্ষটি বাতিল করতে হবে।
সেই অপরাহ্নে আমি সম্প্রতি অবসর নেওয়া ন্যাশনাল ইন্টিলেজেন্সের পরিচালক জিম ক্লাপারকে দেখলাম, এফবিআই-তে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমরা তাকে সম্মানসূচক স্পেশাল এজেন্টের পুরষ্কার দিয়েছিলাম। মঞ্চের দিকে একত্রে পা বাড়াতে আমরা উদ্যত হতেই তাঁকে আমার নৈশভোজে আমন্ত্রণের বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলাম। বললাম, এটা আমাকে খুবই অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। তিনি ধারণা করলেন, উপলক্ষটি একটি গ্রুপভিত্তিক কোনো একটি বিষয় হবে। কারণ তিনি এটা শুনেছেন যে, হোয়াইট হাউসের সেই ডিনারে অন্যদেরও ডাকা হয়েছে। সেটা শুনে আমি কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
কারণ একজন প্রেসিডেন্ট একাকী এফবিআই পরিচালকের সঙ্গে ডিনার করতে পারেন না। হোয়াইট হাউস থেকে কেউ হয়তো তাকে বলেছে, অন্তত নিক্সন ও হুভারের আমল থেকে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। আমি স্মরণ করতে পারি যে, আমাকে এফবিআই পরিচালক হিসেবে মনোনায়ন দেওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট ওবামা আমাকে একবার ব্যাপকভিত্তিক বিষয় আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউসে ডেকেছিলেন। তখনই তিনি আমাকে বলেছিলেন, এফবিআই-র পরিচালক হওয়ার পরে তাঁর সঙ্গে আর এভাবে কথা হবে না। তিনি বরেছিলেন, ‘একবার আপনি যখন পরিচালক হবেন, তখন আমরা আর এভাবে কথা বলতে পারবো না।’ এর অর্থ ছিল, তিনি আর আমার সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক দর্শনগত বিষয় নিয়ে বিতর্ক করতে পারবেন না। এফবিআই-এর প্রধান হোয়াইট হাউসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করছেন এবং তারা একত্রে খোশগল্প করছেন, এটা হতে পারে না। বিশেষ করে ২০১৬ সালের মতো একটি নির্বাচনের পরে তো নয়ই। জনমনে এরকম একটি ধারণাই ব্যুরোর কষ্টার্জিত সততা ও স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমার আশংকা ছিল, ট্রাম্প ঠিক সেটাই চেয়েছিলেন।
হোয়াইট হাউসের পশ্চিম প্রান্তের এক্সিকিউটিভ ড্রাইভ দিয়ে আমি প্রবেশ করলাম। ওই একই প্রবেশ তোরণ দিয়ে আমি সিচুয়েশন রুমে যেতে অভ্যস্ত ছিলাম। যথাস্থানে যথারীতি কর্তব্যরত এফবিআই টিম আমার গাড়িটিকে দাঁড় করালো। আমি গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। এবং কর্তব্যরত সিক্রেট সার্ভিস কর্মকর্তাকে বললাম, আমি এখানে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দিতে এসেছি। তিনি কিছুটা বিভ্রান্ত চোখে আমার দিকে তাকালেন এবং আমাকে বসতে দিলেন। এর একটু বাদেই, এক তরুণী আমাকে রোজ গার্ডেনের পথে ওয়েস্ট উইং দিয়ে অনেকটা পথ হাঁটিয়ে আমাকে নিয়ে চললেন। আমি হোয়াইট হাউসের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে পৌঁছালাম। এরপর মেয়েটি আমাকে এমন একটি সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে চললেন, যে সিঁড়ি আমি আগে কখনও দেখিনি। সিঁড়িটি মেইন ফ্লোরের গ্রিন রুমে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে।
দরোজার পথে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমাণ থাকতে থাকতে কথা বলছিলাম নৌবাহিনীর দুই স্টুয়ার্ডের চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলাম, কারণ আমার নজর ছিল, এই ডিনারে আর কারা আমন্ত্রিত হতে পারেন, সেটা দেখে নেওয়ার জন্য। ওই স্টুয়ার্ডরা ছিলেন আফ্রিকান-আমেরিকান। বয়সে আমার কাছাকাছি। হোয়াইট হাউসে তারা ১০ বছর ধরে কাজ করছেন। তাঁরা উভয়ে উচ্চতায় ছয় ফুটের বেশি। আর সার্ভিসে থাকতে উভয়ে সাবমেরিনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
(চলবে)
২৭ জানুয়ারি, ২০১৭ । শুক্রবার। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আমার সম্পর্কের ততোদিনে ২১ দিন পার হয়েছে। আমি হোয়াইট হাউসে ফিরে এসেছি। স্বাভাবিক নিয়মেই আমি আমার ডেস্কে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। আমার সহকারী অলথা জেমস টেলিফোনের অপর প্রান্তে একজন নারীকে মিলিয়ে দিলেন। ফোনটি হোয়োইট হাউসের। নারীকন্ঠের বার্তা, প্রেসিডেন্ট আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। ট্রাম্প বললেন, সেই রাতে আমি তার সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দিতে আসতে চাই কিনা। আমন্ত্রণটি স্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু আমি ভাবলাম যে, কবুল বলা ছাড়া আমার সামনে অন্য বিকল্প ছিল না। আমি উত্তর দিলাম: ‘অবশ্যই , স্যার।’ তিনি জানতে চাইলেন, ছয়টা নাকি সাড়ে ছয়টা আমার জন্য সহজ হবে। বললাম, আপনার সময়ই আমার সময়, স্যার। তিনি সাড়ে ছয়টা বেছে নিলেন। আমি টেলিফোন রাখলাম। এবং প্যাটরিসকে জানালাম, থাই ফুড দিয়ে ডিনারের পূর্ব নির্ধারিত উপলক্ষটি বাতিল করতে হবে।
সেই অপরাহ্নে আমি সম্প্রতি অবসর নেওয়া ন্যাশনাল ইন্টিলেজেন্সের পরিচালক জিম ক্লাপারকে দেখলাম, এফবিআই-তে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমরা তাকে সম্মানসূচক স্পেশাল এজেন্টের পুরষ্কার দিয়েছিলাম। মঞ্চের দিকে একত্রে পা বাড়াতে আমরা উদ্যত হতেই তাঁকে আমার নৈশভোজে আমন্ত্রণের বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলাম। বললাম, এটা আমাকে খুবই অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। তিনি ধারণা করলেন, উপলক্ষটি একটি গ্রুপভিত্তিক কোনো একটি বিষয় হবে। কারণ তিনি এটা শুনেছেন যে, হোয়াইট হাউসের সেই ডিনারে অন্যদেরও ডাকা হয়েছে। সেটা শুনে আমি কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
কারণ একজন প্রেসিডেন্ট একাকী এফবিআই পরিচালকের সঙ্গে ডিনার করতে পারেন না। হোয়াইট হাউস থেকে কেউ হয়তো তাকে বলেছে, অন্তত নিক্সন ও হুভারের আমল থেকে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। আমি স্মরণ করতে পারি যে, আমাকে এফবিআই পরিচালক হিসেবে মনোনায়ন দেওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট ওবামা আমাকে একবার ব্যাপকভিত্তিক বিষয় আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউসে ডেকেছিলেন। তখনই তিনি আমাকে বলেছিলেন, এফবিআই-র পরিচালক হওয়ার পরে তাঁর সঙ্গে আর এভাবে কথা হবে না। তিনি বরেছিলেন, ‘একবার আপনি যখন পরিচালক হবেন, তখন আমরা আর এভাবে কথা বলতে পারবো না।’ এর অর্থ ছিল, তিনি আর আমার সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক দর্শনগত বিষয় নিয়ে বিতর্ক করতে পারবেন না। এফবিআই-এর প্রধান হোয়াইট হাউসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করছেন এবং তারা একত্রে খোশগল্প করছেন, এটা হতে পারে না। বিশেষ করে ২০১৬ সালের মতো একটি নির্বাচনের পরে তো নয়ই। জনমনে এরকম একটি ধারণাই ব্যুরোর কষ্টার্জিত সততা ও স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমার আশংকা ছিল, ট্রাম্প ঠিক সেটাই চেয়েছিলেন।
হোয়াইট হাউসের পশ্চিম প্রান্তের এক্সিকিউটিভ ড্রাইভ দিয়ে আমি প্রবেশ করলাম। ওই একই প্রবেশ তোরণ দিয়ে আমি সিচুয়েশন রুমে যেতে অভ্যস্ত ছিলাম। যথাস্থানে যথারীতি কর্তব্যরত এফবিআই টিম আমার গাড়িটিকে দাঁড় করালো। আমি গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। এবং কর্তব্যরত সিক্রেট সার্ভিস কর্মকর্তাকে বললাম, আমি এখানে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দিতে এসেছি। তিনি কিছুটা বিভ্রান্ত চোখে আমার দিকে তাকালেন এবং আমাকে বসতে দিলেন। এর একটু বাদেই, এক তরুণী আমাকে রোজ গার্ডেনের পথে ওয়েস্ট উইং দিয়ে অনেকটা পথ হাঁটিয়ে আমাকে নিয়ে চললেন। আমি হোয়াইট হাউসের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে পৌঁছালাম। এরপর মেয়েটি আমাকে এমন একটি সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে চললেন, যে সিঁড়ি আমি আগে কখনও দেখিনি। সিঁড়িটি মেইন ফ্লোরের গ্রিন রুমে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে।
দরোজার পথে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমাণ থাকতে থাকতে কথা বলছিলাম নৌবাহিনীর দুই স্টুয়ার্ডের চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলাম, কারণ আমার নজর ছিল, এই ডিনারে আর কারা আমন্ত্রিত হতে পারেন, সেটা দেখে নেওয়ার জন্য। ওই স্টুয়ার্ডরা ছিলেন আফ্রিকান-আমেরিকান। বয়সে আমার কাছাকাছি। হোয়াইট হাউসে তারা ১০ বছর ধরে কাজ করছেন। তাঁরা উভয়ে উচ্চতায় ছয় ফুটের বেশি। আর সার্ভিসে থাকতে উভয়ে সাবমেরিনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
(চলবে)