বই থেকে নেয়া
এফবআিই-র এক্স বস কোমরি নতুন বই (পর্ব-৬)
মস্কোর পতিতা বা নির্বাচনী সম্পৃক্ততা নিয়ে ট্রাম্পকে ‘কাবু’ হতে দেখেছি
মানবজমিন ডেস্ক
৩০ মে ২০১৮, বুধবার, ৬:৩২ পূর্বাহ্ন
উইলিয়াম কোমি, যিনি এফবিআইয়ের পরিচালক হওয়ার আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটর্নি জেনারেল ছিলেন, তিনি তার বহুল আলোচিত নতুন বই (‘এ হায়ার লইয়ালটি, ট্রুথ, লাইজ অ্যান্ড লিডারশিপ’) এ অনুপুক্সক্ষ বর্ণনা করেছেন, সেই দিনের কথা, যখন তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে অপেক্ষমাণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে মস্কোর বেশ্যা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন।
এফবিআই পরিচালকের নিচের জবানি থেকে এটাই সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে যে, মস্কোর বেশ্যা প্রসঙ্গ বা মার্কিন নির্বাচনে রাশানদের সম্পৃক্ততা বিষয়ে যখন সত্যিই ট্রাম্প ও তার সমগ্র টিমের সামনে তুলে ধরা হলো তখন ট্রাম্প তেমন কোনো বিস্ময়কর বা অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখাননি। তিনি ছিলেন ভাবলেশহীন, কিন্তু কোমি ট্রাম্পকে ‘পরাভূত বা কাবু’( সাবডিউড) হতেই দেখেছিলেন।
ইন্টেলিজেন্স হলো একটি সামর্থ্য, যার ভিত্তি হলো দলিল ও সাক্ষ্য নির্ভর। আর জাজমেন্ট হলো তেমন সামর্থ্য, যা ওইধরণের অভিন্ন তথ্যের মানে কি সেটা বলতে পারা। এবং অন্যান্য দর্শক-শ্রোতার ওপর তার কি প্রভাব পড়তে পারে, সেটাও নিরুপণ করতে পারা।
ট্রাম্পের সঙ্গে আমার প্রথম বৈঠকে আমি এটা দেখতে উৎসুকভরে অপেক্ষমাণ ছিলাম যে, তিনি কিভাবে সেই আস্থা এবং সৌজন্যবোধের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হন। এবং তিনি আসলে কতোটা সাউন্ড জাজমেন্টের বহিপ্রকাশ ঘটাতে পারেন। কিন্তু আমি সেদিন ট্রাম্প টাওয়ারে এতটা পর্যাপ্ত কিছু দেখিনি, যা থেকে আমি ওই ধরনের কোনো মূল্যায়ন ঠিক না বেঠিক তা নির্ধারণ করতে পারি। প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট যথাযথভাবেই পরাভূত এবং সিরিয়াস ছিলেন।
পরিচালক ক্লাপার ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির মূল্যায়ন পেশ করলেন, যেমনটা তাকে প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং গ্যাং অব এইটের জন্য করতে হয়েছিল। কিছু প্রশ্ন এবং মন্তব্য এল, কিন্তু তার অধিকাংশই করেছিলেন পেছনের সারিতে বসা টম বোসার্ট। নির্বাচনে রাশিয়ার সম্পৃক্ততার বিষয়টি আলোচনাকালে আমি স্মরণ করতে পারি, ট্রাম্প কোনোভাবে বাধাদান ছাড়াই শ্রবণ করছিলেন। এবং শুধু একটি প্রশ্ন করেছিলেন, যা ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি বিবৃতির চেয়ে বেশি কিছু। ‘‘ কিন্তু আপনারা এটা দেখতে পেয়েছিলেন যে, নির্বাচনের ফলাফলের ওপর তার কোনো প্রভাব পড়েনি, ঠিক নয় কি?’’ এর উত্তরে ক্লাপার বলেছিলেন, আমরা সেধরণের কোনো বিশ্লেষণ করিনি, সেটা আমাদের কাজ নয় এবং তেমন বিশেষজ্ঞ জ্ঞানও আমাদের নেই। আমরা যেটা বলতে পারি, সেটা হল ভোট গণনায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে আমারা কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ পাইনি।
কিন্তু আমি যেটা লক্ষ্য করলাম সেটা হলো ট্রাম্প ও তার টিম একটি বিষয় সম্পর্কে জানতেই চাইলেন না। তারা একটি দেশের নেতৃত্ব দিতে চলেছেন, যে দেশটি বিদেশী শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল, এবং ভবিষ্যত রাশান হুমকি কি হতে পারে সে বিষয়ে তাদের মনে কোনো প্রশ্ন নেই। এমনকি সেধরণের সম্ভাব্য হুমকি এলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে নিজকে প্রস্তুত করতে পারে সে বিষয়েও কোনো প্রশ্ন তোলা হলো না। আমরা তখনও চারজন যার যার আসন ছেড়ে যাইনি, আমরা বসেই ছিলাম। যারমধ্যে ছিলেন ওবামা প্রশাসনের দুই বিদায়ী কর্মকর্তা। আমরা দেখলাম, প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ও তার টিম অবিলম্বে রাশিয়ার উপর কিভাবে বার্তা তৈরি করা যায়, সেই বিষয়ে তারা চলমান সভাকে একটি কৌশলগত অধিবেশনে রুপান্তরিত করলেন। আমরা এই মাত্র যা তাদেরকে বললাম, সেবিষয়ে তারা কিভাবে মোকাবেলা করতে পারেন, সেবিষয়ে তারা আলোচনায় মগ্ন হলেন। তারা এমনভাবে কথা বলছিলেন যেন আমরা সেখানে উপস্থিতই ছিলাম না। পিরিবাস এটা বর্ননা করতে শুরু করলেন যে, আজকের এই সভা সম্পর্কে দেওয়া একটি প্রেস বিবৃতির চেহারা কেমন হতে পারে। পিরিবাসের নেতৃত্বাধীন টিমের সদস্য হিসেবে পেন্স, স্পাইসার এবং ট্রাম্প বিতর্কে ঝাঁপিয়ে পড়লেন, কিভাবে তারা বিদ্যমান পরিস্থিতি (যা তারা অবহিত হলেন) থেকে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ফায়দা তুলবেন। তারা এই ভাবনায় বুঁদ হওয়ার দিকেই ঝুঁকলেন যে, ভোটের ওপর এসবের কোনো প্রভাব নেই। যার অর্থ হলো রাশানরা তো আর ভোট দিয়ে ট্রাম্পকে নির্বাচিত করেনি। এই পর্যায়ে ক্লাপার পুনরায় মাত্র ৬০ সেকে- আগে বলা তাঁর কথাটিরই পুনরুক্তি করলেন। তাদেও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলো যে, গোয়েন্দা সম্প্রদায় মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষণ করেন না। এবং এই বিষয়ে আমরা কোনো মতামত তুলে ধরতে চাই না।
এর আগের দুই প্রেসিডেন্টের আমলের বহু ব্রিফিংয়ে আমি অংশ গ্রহণ করেছিলাম। এবং কখনও আমি প্রেসিডেন্ট বুশ কিংবা প্রেসিডেন্ট ওবামাকে কখনও দেখিনি যে, তারা কমিউনিকেশন্স এবং রাজনৈতিক স্ট্রেটেজি কি হবে , সেটা তারা কখনও গোয়েন্দা কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সামনে আলোচনা করেছেন।
(চলবে)
(চলবে)