শেষের পাতা

যে কষ্টে হাসপাতাল ছেড়েছেন বৃক্ষমানব

স্টাফ রিপোর্টার

৩০ মে ২০১৮, বুধবার, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ন

‘হাতেতে যদিও না মারিত তারে, শত যে মারিত ঠোঁটে!’ বার্ন ইউনিটের জুনিয়র ডাক্তার, সিস্টার, ওয়ার্ড বয় আর আয়াদের অবহেলা, বিরক্তিকর আচরণ ও অভুক্তির কারণেই হাসপাতাল ছেড়েছেন বলে দাবি ‘বৃক্ষমানব’ খ্যাত আবুল বাজানদার । গত শনিবার কাউকে কিছু না জানিয়েই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছেড়ে নিজ বাড়ি খুলনার পাইকগাছায় চলে যান আবুল। আবুল বাজানদার মানবজমিনকে বলেন, ‘আমি ভালো নাই আপা। ভালো থাকলে কি আর হাসপাতাল থেকে চইলে আসি। হাসপাতালের কেবিনে আমার সঙ্গে মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস তাহিরা ও স্ত্রী হালিম আক্তার থাকত।
প্রথমদিকে আমাদের তিনটা (তিনজনের) খাবার দেয়া হতো। কিছুদিন পর দুটা খাবার দেয়া শুরু করে। শেষের দিকে মাত্র ১টা খাবার দিত। আমরা মানুষ তিনজন আর খাবার যদি একজনের হয়, তাহলি কেমনে চলে বলতি পারেন? না খেয়ে কয় দিন থাকা যায় বলেন। তার ওপর জুনিয়র স্যারেরা, সিস্টার আপারা তো এখন আমাকে সহ্য করতিই পারতেন না। তারা মুখে সরাসরি না বললিও আচরণে বুঝিয়েছেন, যে তুমি হাসপাতাল ছেড়ে চলি যাও। তার ওপর কেবিন থেকে ১ মিনিটের জন্য বের হতে দিতেন না আমাকে। জানালার পাশে দাঁড়ালে চিল্লাচিল্লি করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার ভয় দেখাতেন। বলতেন, আমাদের কথা না শুনলে পুলিশ ডেকে ধরাইয়া দেবনে। কেবিনে আমার বাচ্চাটা একটু খেলাধুলা করলেই সিস্টাররা ধমক দিয়ে বলতেন, এখানে কোনো বাচ্চা রাখা যাবে না। বাচ্চা বাড়িতে পাঠিয়ে দিন।’
হাসপাতালের কাউকে কিছু না বলে এভাবে চলে গেলেন কেন জানতে চাইলে বাজানদার বলেন, ‘কী করবো? দীর্ঘ আড়াই বছর চিকিৎসার পর এখন ডাক্তাররা বলছেন যে এটা তোমার জেনেটিক সমস্যা। তোমার এই সমস্যা আর কোনো দিনই সমাধান হবে না। এটা অস্ত্রোপচার করে কমিয়ে রাখতে হবে। বাকিটা জীবন তোমাকে হাসপাতালেই কাটাতে হবে। এ কথা শোনার পর আমি কোন ভরসায় হাসপাতালে থাকি আপা। একে তো ওখানে থাকার কোনো পরিবেশ নেই। তার ওপর সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছি না। হাতের যে অংশের মূল শিকড়গুলো অপারেশন করে কেটে ফেলা হয়েছে সেখানে আর নতুন শিকড় গজায়নি। আর যে অংশে শিকড় রয়ে গেছে সে অংশে আবার আধা ইঞ্চি পরিমাণ বেড়ে গেছে। প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। ঠিক মতো ঘুমাতি পারি না, খাতি পারি না। খাওয়া ঘুম সব হারাম হয়ে গেছে। অথচ উনারা বলছেন, জেনেটিক সমস্যা।

হাসপাতাল থেকে আসার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর বা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল বলেন, না আমি আসার সময় কোনো কাগজপত্রে স্বাক্ষর করিনি। কারণ, সেই কাগজে লেখা ছিল আমি স্বেচ্ছায় যাচ্ছি এবং আমি আর কোনো চিকিৎসা করাবো না। আমার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। কিন্তু আমি তো চিকিৎসা করাতে চাই, তবে ওই হাসপাতালে না। ওই কাগজে স্বাক্ষর করলে আমি তো আর চিকিৎসার দাবি করতে পারবো না। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে জানাবো যে আমার মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে দেশে বা বিদেশে এই রোগের যদি উন্নত কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকে, আমাকে যেন উক্ত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।

বাবা মো. মানিক বাজানদার কিছুদিন আগে স্ট্রোক করেছেন। এখন বড় ভাই মো. আইয়ুব বাজানদারই তাদের একমাত্র ভরসা। ভ্যান চালিয়ে পুরো পরিবারের ভরণপোষণ করেন আবুলের বড় ভাই।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আবুল বাজানদার কাউকে কিছু না জানিয়েই চলে গেছে। সে যেতে চেয়েছিল, তাকে আমরা বলেছি, তোমার আরও অস্ত্রোপচার করতে হবে। শনিবার তার মতামত জানানোর কথা থাকলেও ওইদিন ডা. লতা আমাকে জানায়, আবুল চলে গেছে। ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আবুলের কাগজপত্রে তাকে ফেরারি হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবুল বাজানদার এই হাসপাতালে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। এত বেশি সময় কোনো রোগীর অবস্থান ঢাকা মেডিকেলে নেই বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ খান আবুল কালাম আজাদ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status