প্রথম পাতা

এবার ইভিএম নিয়ে ইসি’র তোড়জোড়

সিরাজুস সালেকিন

২৯ মে ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণের জন্য আইন সংশোধন করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধন করে এতে ইভিএম যুক্ত করছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। ইতিমধ্যে ইসি’র আইন সংস্কার কমিটি আরপিও সংশোধনে একগুচ্ছ প্রস্তাব তৈরি করেছে। প্রস্তাবগুলো কমিশন সভায় অনুমোদন হলে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের পর সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করা হবে।

ইসি সূত্র জানায়, আইন সংস্কার কমিটির প্রস্তাবে প্রচলিত ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের পাশাপাশি ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়, সংজ্ঞায় ইভিএম সংজ্ঞায়িত করার প্রয়োজন আছে। তবে বর্তমান ইভিএম শুধু ভোট কাস্টিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হবে না। ইভিএম আঙ্গুলের ছাপ বা এনআইডি কার্ড নম্বর দিয়ে ভেরিফিকেশন করবে। যদি ভোটার ভেরিফিকেশনে উত্তীর্ণ না হয় তবে ভোট দিতে পারবে না। আরপিও’র বিভিন্ন অনুচ্ছেদে ইভিএম ব্যবহারের সুপারিশ এসেছে আইন সংস্কার কমিটির পক্ষ থেকে। আরপিও’র ২৮ (ক) অনুচ্ছেদের সংশোধনীতে ব্যালট বাক্সের সঙ্গে ইভিএম যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ভোটগ্রহণের আগে ব্যালট বাক্স অথবা ইভিএম শূন্য অবস্থায় আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। একই সঙ্গে ২৮ (গ) অনুচ্ছেদে খালি ব্যালট বাক্স ও ইভিএম সিল করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ২৮ (৬) অনুচ্ছেদে ইভিএমে ভোটদানের সময় বাটন গোপনে যেন পরিচালনা করা হয় সে বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। ৩১ (৩) অনুচ্ছেদে হাতে অমোচনীয় কালিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে ব্যালট সরবরাহ না করার এবং ভোটদান থেকে বিরত রাখার বিষয় যুক্ত করতে বলা হয়েছে। ৩৩ (১) অনুচ্ছেদে ভোট চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে ইভিএমকে বাইরে রাখার বিষয়টি যুক্ত করতে বলা হয়েছে। ৩৪ (১) অনুচ্ছেদের সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নষ্ট ব্যালটের বিষয়টি ইভিএমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ৩৬ (৬) অনুচ্ছেদে সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ইভিএম ভোটিংয়ের ফলাফলের নথি হচ্ছে স্টোরেজ ডাটা কার্ড। অন্যদিকে ১২ (৩) অনুচ্ছেদে অনলাইনে মনোনয়ন জমা এবং এর প্রাপ্তিস্বীকারপত্র প্রদানের বিষয়টি যুক্ত করতে সুপারিশ করেছে আইন সংস্কার কমিটি।

একাদশ জাতীয় সংসদের রোডম্যাপে ইভিএম-এর বিষয়টি উল্লেখ নেই। তাছাড়া ইভিএম ব্যবহার নিয়ে ইসির কাছে পাল্টাপাল্টি প্রস্তাব এসেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। অপরদিকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বিএনপি বলেছে, জাতীয় নির্বাচনে কোনোভাবেই ইভিএম বা ডিভিএম পদ্ধতি বা এ জাতীয় কোনো যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। শুধু বিএনপি নয়। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছে। ইসির সংলাপে সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, খেলাফত মজলিস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাগপা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগসহ আরো বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ- আলোচনার পর ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন সিইসি কেএম নূরুল হুদা। সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দল এবং ভোটাররা যদি সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদেরকে বলেন, তাহলেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব। বর্তমানে ইভিএম ব্যবহারে ইসি প্রস্তুত নয় বলেও জানান সিইসি। সম্প্রতি রংপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করে ইসি। এরমধ্যে রংপুর সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ত্রুটি দেখা দেয়ায় কিছু সময়ের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। ঈদের পর গাজীপুরসহ আরো তিন সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ইসি। আজ নির্বাচন কমিশনের সভায় গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করবে কমিশন। সিটি নির্বাচনের পর জাতীয় নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার করতে চায় বর্তমান কমিশন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর সংসদে বিল আকারে উপস্থাপন করতে হবে। ইসি’র এসব সংশোধনী প্রস্তাব সংসদে পাসের ওপরই নির্ভর করছে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, আরপিও সংশোধনে প্রস্তাবগুলো নিয়ে কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর তা পর্যালোচনা আইন পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে ‘খসড়া বিল’ প্রস্তুত করে কমিশনের চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার  বৈঠকের অনুমোদন পেলেই বিল আকারে সংসদে উপস্থাপন করা হবে। স্থায়ী কমিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সংসদে সংশোধনী বিল পাস হলেই চূড়ান্ত হবে আরপিও সংশোধন।  

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status