শেষের পাতা

বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে ক্ষোভ সমন্বয়হীনতা

দীন ইসলাম

২৯ মে ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:১০ পূর্বাহ্ন

অর্থ ব্যয়ে স্বাধীনতা না থাকা, ভ্রমণ ও চিকিৎসা-ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যাসহ নানা কারণে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের উইং কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এছাড়া উইংগুলোর জন্য আলাদা ব্যাংক হিসাব না থাকায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। কাজের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতাও বিরাজ করছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে, কয়েকটি বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মকর্তাদের   
 মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ রয়েছে।
নিজেদের এসব ক্ষোভের কথা সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় খোলামেলাভাবে উল্লেখ করেন বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের মিনিস্টার, কাউন্সেলর, প্রথম সচিব, দ্বিতীয় সচিব ও অন্যান্য পদে কর্মরত কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের সমস্যাগুলো পয়েন্ট আকারে চিহ্নিত করে কার্যবিবরণী তৈরি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক উন্নয়ন ও সমন্বয়-১ অধিশাখা। এসব সমস্যা সমাধানে স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শের মাধ্যমে কীভাবে নিষ্পত্তি করা যায় তার সুপারিশ দিতে গত ১৬ই মে ১১ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত কর্মকর্তারা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনায় তারা বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। ওই সভায় উপস্থিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে মিশনের উইংগুলো তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য উইং প্রধানদের পরিদর্শন ও অভ্যন্তরীণ সফর অত্যাবশ্যক। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে পরিদর্শনে যাওয়া যায় না। কোনো কোনো দূতাবাসের অফিস ব্যবস্থাপনা যথাযথ নয়। তাতে কোনো রেজিস্ট্রার নেই, গার্ড ফাইল নেই, দাপ্তরিক ব্যবস্থাপনায় সচিবালয় নির্দেশমালা/কার্যপ্রণালী বিধিমালা বা সরকারি অন্য কোনো বিধি মানা হয় না। অনেক সময় দূতাবাস থেকে জারি করা পত্রে স্মারক নম্বর না থাকায় পত্রের জবাব দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। জরুরি প্রয়োজনে কোনো কোনো দূতাবাসে ফোন বা ই-মেইল করলে উত্তর পাওয়া যায় না। অনেক মিশনে ইনস্টিটিউশনাল মেমোরি বা পরম্পরা ধরে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে পুরনো কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা জানান, মিশনের বিভিন্ন উইংয়ের কর্মকর্তারা নিজ নিজ মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে বাজেট বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। এ বাজেটের অর্থ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাজেটের অর্থের সঙ্গে মিলিয়ে একই ব্যাংক হিসাবে রাখা হয়। এ অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে উইংয়ের কর্মকর্তাদের কোনো স্বাধীনতা থাকে না। তাদেরকে যেকোনো ব্যয় নির্বাহের জন্য মিশনের হেড অব চ্যান্সারির ওপর নির্ভর করতে হয়। অনেকক্ষেত্রে উইং কর্মকর্তাদের অজ্ঞাতে তাদের বাজেট বরাদ্দ থেকে দূতাবাসের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এর ফলে বাজেট ব্যবস্থাপনায় জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং উইং প্রধানরা অনভিপ্রেত অডিট আপত্তির সম্মুখীন হন। এ জন্য মতবিনিময় সভায় উইং প্রধানরা নিজেদের ড্রয়িং অ্যান্ড ডিজভার্সিং অফিসার (ডিডিও) হিসেবে নিয়োগ করা এবং প্রতিটি উইং-এর জন্য বাজেটভিত্তিক আলাদা ব্যাংক হিসাব রাখার প্রস্তাব করেন। কর্মকর্তারা জানান, দূতাবাসের প্রতিটি উইংকে নিয়ে সমন্বিত দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো চার্টার অব ডিউটিজ নেই। এজন্য সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করা যাচ্ছে না। কর্মকর্তারা জানান, অনেক মিশনে সমন্বয়হীনতা বিরাজ করে। কোনো কোনো মিশনে কোনো বিষয়ে বিভিন্ন উইংয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে তেমন আলোচনা করা হয় না। দলগত টিম স্পিরিটের অভাবে মিশনগুলো সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করতে পারে না। মিশনের কর্মকর্তারা ছুটির বিষয়ে অনেক জটিলতার সম্মুখীন হন। মিশনের প্রতিটি উইংয়ের কর্মকর্তারা নিজ নিজ মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে বাজেট বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। মাঝে মধ্যে দেখা যায়, কর্মকর্তারা ‘পরিবার ভাতা’ খাতের অর্থ কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই অন্যখাতে ব্যয় করেন। এতে কর্মকর্তারা নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হন। এজন্য তাদেরকে অডিট আপত্তির মুখোমুখিও হতে হয়।
কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতনদের জানান, কোনো কোনো মিশনে স্থানীয় ও স্বদেশভিত্তিক স্টাফদের বেতন- ভাতার বৈষম্য রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ভ্রমণ ও চিকিৎসা ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে থাকে। কখনো কখনো বাড়ি ভাড়া ভাতার ক্ষেত্রে পদ অনুসারে বৈষম্য দেখা দেয়। বিভিন্ন উইং-এর গাড়িগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে উইং কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয় না। কখনো উইং সংশ্লিষ্ট কাজে গাড়িগুলো ব্যবহারের সুযোগ না দিয়ে অন্য কাজে গাড়ি ব্যবহার করা হয়। মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পাসপোর্ট ও ভিসা খাতে যে অর্থ আয় হয় তা একটি আলাদা হিসাবে জমা করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে সুরক্ষা সেবা বিভাগ সহজেই সরকারি কোষাগারে ওই অর্থ জমা করতে পারবে ও সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব বিষয় নিষ্পত্তির জন্য স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শ নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব, অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রতিনিধিকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status