দেশ বিদেশ

খুলনা সিটি নির্বাচনে অনিয়ম চলতি সপ্তাহেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার

২৮ মে ২০১৮, সোমবার, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশই রাজনৈতিক দল সমর্থিত বলে ইসির তদন্ত কমিটি জানতে পেরেছে। তবে পুলিশ তদন্ত কমিটির কাছে অনিয়মে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তদন্ত কমিটির কাছে কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আনসার এবং প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট সবাই সেদিনকার ঘটনার বর্ণনা করেছেন। চলতি সপ্তাহে তদন্ত কমিটি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে ইসিতে। প্রতিবেদনে দায়ীদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কৌশলী সুপারিশ জানাতে পারে তদন্ত কমিটি। গত ১৫ই মে খুলনা সিটিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ২৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে বেশির ভাগ কেন্দ্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোও ভোটের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে। ওই নির্বাচনে অস্বাভাবিক ভোট পড়ে ১১টি কেন্দ্রে। যার মধ্যে ৩টি কেন্দ্রে ৯০-৯৯ শতাংশ এবং ৮টি কেন্দ্রে ৮০-৮৯ শতাংশ ভোট পড়ে। তবে, নির্বাচন কমিশন থেকে ৩ কেন্দ্রের বাইরে ভোট কার্যক্রম স্থগিত না রাখতে মৌখিক নির্দেশ ছিল বলে জানা গেছে। ভোট চলাকালে গুরুতর অনিয়ম পাওয়া মাত্র তিনটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়। এ সিটির মোট কেন্দ্র সংখ্যা ছিল ২৮৯টি। স্থগিত হওয়া কেন্দ্রের অনিয়ম তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। কমিশনের যুগ্ম সচিব খন্দকার মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটির অন্য দুজন হলেন উপ-সচিব ফরহাদ হোসেন এবং সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শাহ আলম। গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার এ তিনদিন সরেজমিন পরিদর্শন করে কমিটি এখন রিপোর্ট প্রস্তুত শুরু করেছে। সূত্রমতে, নানা অনিয়মের অভিযোগে কেসিসি নির্বাচনে তিনটি কেন্দ্র ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। স্থগিত হওয়া কেন্দ্রগুলো হলো- ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (একাডেমিক ভবন-২), ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের লবণচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়। স্থগিত কেন্দ্রে আগামী ৩০শে মে পুনঃভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর আগেই অনিয়ম তদন্তে মাঠে নামে ইসি। তিন সদস্যের কমিটি স্থগিত কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং, পোলিং অফিসার, পুলিশ কর্মকর্তা, আনসার এবং প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের বক্তব্য নিয়েছে। পুলিশ ছাড়া সবাই অনিয়মের বিষয়ে মুখ খুলেছে, তখনও তাদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখতে পেয়েছে কমিটি। পুলিশ কর্মকর্তারা তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা ওই দিন কেন্দ্রে কিছুই হয়নি এমন বক্তব্য রেখেছেন। তারা বলেন, ভোটকেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে সিলমারার ঘটনাটি তাদের ধারণার বাইরে ছিল। কারণ সবাই ভোটার সেজে কেন্দ্রে ঢুকে ভোট মেরে দ্রুতই সটকে পড়ে। কিন্তু তারা কেন্দ্রের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে কিছুই করতে পারেননি। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা বলেন, জোরপূর্বক ১০-১২ জনের একটি দল ভোটকক্ষে ঢুকে ব্যালট ছিনিয়ে নেয় এবং দ্রুত সিল মেরে কেন্দ্র ত্যাগ করেন। প্রত্যেকটি ভোট একটি বড় দলের প্রতীকেই মারা হয়। আনসার সদস্যরা বলেন, আমরা কক্ষের বাইরে ভোটারদের লাইন ঠিক রাখতে কাজ করি। কিন্তু হঠাৎ কিছু লোক কেন্দ্রে ঢুকে কিছুক্ষণ পরে তারা একত্রে বেরিয়ে যায়। আর বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্টরা বলেন, তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে ব্যালটে সিলমারে দুষ্কৃৃতকারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির একজন বলেন, স্থগিত কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সবার বক্তব্য নিয়েছি। পুলিশ ছাড়া সবাই প্রকৃত ঘটনার কথাই জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্যে জড়িতদের রাজনৈতিক পরিচয় উঠে এসেছে। আমরা প্রতিবেদন তৈরি করছি। চলতি সপ্তাহে কমিশনে উত্থাপন করব। দায়ীদের বিরুদ্ধে ঘটনার বর্ণনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি সুপারিশ করবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status