শেষের পাতা

সিটি নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণা

যে কারণে একমত হতে পারেননি এক নির্বাচন কমিশনার

স্টাফ রিপোর্টার

২৮ মে ২০১৮, সোমবার, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ন

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণার সুযোগ রেখে সিটি নির্বাচন আচরণবিধি-২০১৬ এর সংশোধনী অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেয়ার বিপক্ষে ছিলেন একজন নির্বাচন কমিশনার। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সভায় সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালার ২(১৩) সংশোধনের বিরোধিতা করে লিখিত মতামত দেন ওই কমিশনার। কমিশন সভায় একটি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ পড়ে শোনান তিনি। ‘নোট অব ডিসেন্টে’ তিনি উল্লেখ করেছেন, বিগত ১২ই এপ্রিল আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারকার্যের বিধি-নিষেধ তুলে দেয়ার প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবে বলা হয়, সিটি নির্বাচনে নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে এমপিদের অংশগ্রহণ অবারিত করা আবশ্যক। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দিতে সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালার ২(১৩) সংশোধন করার প্রয়োজন হবে। বিগত ১৩ই মে আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির সুপারিশে ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকা থেকে এমপিদের বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আমি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিদের অংশগ্রহণে ভিন্নমত পোষণ করি।
ওই কমিশনার নোটে আরো বলেন, এমপিদের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হলে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হবে। এতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির উদ্যোগ নস্যাৎ হবে। এর আগে কাজী রকিব উদ্দীন কমিশন এমপিদের সিটি নির্বাচনে প্রচারের সুযোগ দিয়ে আচরণ বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে তারা পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়। বর্তমান সরকারের আমলে ২০১০ সালে সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি সংশোধন করেছিল। তার আওতায় এমপিসহ সব সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এই নির্বাচনে প্রচারণার সুযোগ নেই। নোটে আরো বলা হয়, সংসদ সদস্যদের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞা থেকে বাদ দেয়া ঠিক হবে না। আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এমপিরা স্থানীয় পর্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এমপিদের নামে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। বিশেষত নির্বাচনের আগে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম তাদের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। প্রশাসন ও অনেক স্থানীয় প্রতিষ্ঠানই তাদের আদেশ-নির্দেশে চলে। শিক্ষায়তনগুলো তাদের করায়ত্ত বলা যায়। এ দেশে বাস্তবতা হচ্ছে এমপিরা নিজেদের এলাকায় সর্বেসর্বা। এমতাবস্থায় এমপিদের স্থানীয় নির্বাচনের প্রচারে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হলে স্থানীয় প্রশাসনের অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের নির্দেশ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন। এমপিদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিরপেক্ষভাবে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। আমার জানামতে জাতীয় সংসদ সদস্যদের কোনো দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হওয়ার জন্য ম্যান্ডেট দেয়া হয় না। এমপিরা সরকারি সুবিধাভোগী নন বলে যে বক্তব্য রাখা হয়েছে তা নিতান্তই পরিহাসমূলক। তারা সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন না, এ কথা সত্য। কিন্তু তারা এমপি হিসেবে কোটি টাকার গাড়ি ক্রয়ে ট্যাক্স রেয়াত পেয়ে থাকেন। এটা কি সরকারি সুবিধাভোগ নয়? এ ছাড়া তারা রাজউক, চউক ইত্যাদি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যক্তিগতভাবে যে প্লট বা জমি পেয়ে থাকেন তা কি সরকারি সুবিধাভোগ নয়? এ বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। ওই নির্বাচন কমিশনার বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি করে আইন ও বিধিমালা পরিবর্তন করে যেভাবে মাননীয় এমপিদের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকা থেকে বাদ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা অভিনব। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে আমরা সর্বমহলে নিন্দিত হয়ে পড়বো। আজ পর্যন্ত এই সংশোধনের পক্ষে কেউ অভিমত প্রকাশ করেছেন বলে আমার জানা নেই। আমি মনে করি না যে, এমপিরা নির্বাচনকালে তাদের নিজস্ব এলাকায় না গেলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়বে। বরং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাদের উপস্থিতিতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status