দেশ বিদেশ

ইয়াবা পাচারে মিয়ানমারের এক ডজন নাগরিক চট্টগ্রামে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

২৮ মে ২০১৮, সোমবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

ইয়াবা পাচারের সুবিধার্থে মিয়ানমারের এক ডজন নাগরিক বাস করছেন চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে। যাদের রয়েছে বিশাল ফ্ল্যাট, প্লট ও গাড়ি। তাদের বেশির ভাগেরই হাতে রয়েছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র।
এমন তথ্য এখন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের হাতে। গত ৩রা মে নগরীর হালিশহর শ্যামলী হাউজিং সোসাইটির একটি বাসা থেকে ১৩ লাখ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার মো. আশরাফ ও তার ভাই মো. হাসান পুলিশের কাছে এ তথ্য দিয়েছেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ রাশেদ মুন্না নামে মিয়ানমারের আরো এ নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) শহীদুল্লাহ বলেন, গ্রেপ্তার আশরাফ ও হাসানকে গ্রেপ্তারের সময় সৌদি প্রবাসী বলা হলেও তিনি আসলে সৌদি প্রবাসী নন। তাদের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বলে জানা গেলেও তাদের বাড়ি মূলত মিয়ানমারের মংডু এলাকায়। তারা মংডুর মৃত তৈয়ব ওরফে তায়েকের ছেলে। তিনি জানান, আশরাফ মূলত বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে কয়েকবার সৌদি আরবে আসা যাওয়া করেছে মাত্র। কারণ সৌদি আরবের জেদ্দায় রয়েছে তার চারতলা দুটি ভবন। সেখানে থাকেন তার ভাই সাব্বির। সাত ভাইয়ের মধ্যে তার আরেক ভাই মোহাম্মদ আলি মালেশিয়ায়, জোহার অস্ট্রেলিয়া থাকে। সবার ছোট হোসেন থাকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘিলাতলি গ্রামে। আশরাফ পেশায় সাগরে ট্রলার চালক। সাগরে সে মাছ ধরার কাজ করতো। ১৯৯৩ সালে তার সাথে পরিচয় হয় মিয়ানমারের শীর্ষ ইয়াবা পাচারকারী আবদুর রহিমের। এরপর হাসান, হোসেন দুই ভাইকে নিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বসবাস শুরু করে আশরাফ। সেখানে থাকা অবস্থায় জাতীয় পরিচয়পত্র ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যায় তারা।
পরে ইয়াবা পাচার করে কোটিপতি হওয়া আশরাফ ২০১১-১২ সালের দিকে চট্টগ্রামের হালিশহরে ফ্ল্যাট কিনে বসবাস শুরু করে। সেখানে থেকে হাসান-হোসেন দুই ভাইকে নিয়ে ইয়াবা পাচার শুরু করে। ইয়াবা পাচারের জন্য মূলত সৌদি আরব আসা যাওয়া করে আশরাফ। নগরীর নাসিরাবাদে তার আরো দুটি ফ্ল্যাট এবং বাকলিয়ায় তিন কাঠা জমি কিনে সেখানে নয়তলা ভবনের নকশাও পাশ করিয়ে নেয় সিডিএ থেকে। ইয়াবা পাচারকারী রহিমসহ সৌদি আরবে একসাথে হজও করে।
আশরাফের দেয়া তথ্যমতে ইয়াবা পাচারের সুবিধার্থে মিয়ানমারের মংডুর সিকদার পাড়া এলাকার আবদুর রহিম চট্টগ্রামে ফ্ল্যাট কিনেন। রেঙ্গুনে তার নিজস্ব ফ্ল্যাট রয়েছে। তার বাবার নাম আবদুল মতলব। বিয়ে করেছে ফুফাতো বোন আসমা বিবিকে। নেওয়াজ উদ্দিন (২১) ও শাবানা (১৮) নামে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। যাদের থাকার জন্য চট্টগ্রামের বাকলিয়ায় প্লট কিনে তৈরি করেছেন বিশাল বাড়ি। তাদের প্রত্যেকের রয়েছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয় পত্র।
তথ্যমতে, ইয়াবা পাচারে চট্টগ্রামে বসবাস করছে রাশেদ মুন্না নামে মিয়ানমারের মংডু এলাকার আরো এক নাগরিক। যাদের কাছ থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামে ইয়াবা পাচারের মূল হোতাদের অন্যতম আবদুর রহিমের চট্টগ্রামে বসবাসের কথা।
এছাড়া ইয়াবা পাচারের জন্য মিয়ানমারের নাগরিক জুবায়ের ওরফে রিদোয়ান, আলি আকবর ওরফে পট্টিবদ, কামরুল ইসলাম সুমন, শওকত, আনোয়ার, জলিল, আহমদ শফি, রশিদ, খুলুসহ অনেকে চট্টগ্রামে বসবাস করছে। যাদের সঙ্গে আবদুর রহিমের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।
উপকমিশনার (বন্দর) শহীদুল্লাহ বলেন, রহিমের কাছ থেকে ২০ লাখ ইয়াবার একটি চালান সাগরপথে চট্টগ্রামে এনেছিল জোবায়ের। ঐ চালানের ইয়াবার মূল্য বাবদ ১৪ কোটি টাকা এখনো পাওনা আছে জোবায়েরের কাছে। পুলিশ রাশেদ মুন্নাকে গ্রেপ্তার করলেও জোবায়ের ওরফে রিদোয়ানকে খুঁজছে। নগরীর বায়েজিদ মোজাফফর নগরে সাত বছর আগে সে তৈরি করেছে পাঁচতলা ভবন।
এছাড়া আবদুর রহিমসহ মিয়ানমারের অন্য নাগরিককেও পুলিশ খুঁজছে। তবে তাদের হদিস মিলছে না। ধারণা করা হচ্ছে, মাদক বিরোধী অভিযানে টের পেয়ে আবদুর রহিমসহ অনেকে চট্টগ্রাম ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছে।
জানা গেছে, এক দশক ধরে বাংলাদেশের ইয়াবা বাজারের বড় একটা অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে মিয়ানমারের আবদুর রহিম। মংডুতে বাড়ি হলেও নিয়মিত রেঙ্গুনে বসেই ইয়াবা পাচার ও চট্টগ্রামে অবস্থানরত সহযোগীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে রহিম। মিয়ানামার থেকে সাগরপথে আসা রহিমের পাঠানো ইয়াবার বড় চালান চট্টগ্রাম হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, সড়ক কিংবা সাগরপথে যত ইয়াবা বাংলাদেশে আসছে তার সবই আসছে মিয়ানমার থেকে। মিয়ানমার থেকে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি বড় মাপের ইয়াবার চালান বাংলাদেশে পাচার করছে এমন তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে।
সমপ্রতি হালিশহর শ্যামলী আবাসিক এলাকা থেকে উদ্ধার করা ১৩ লাখ ইয়াবা মিয়ানমার থেকে সাগরপথে ভাটিয়ারি হয়ে নগরীতে আনা হয়েছিল। বড় মাপের এ ইয়াবার চালান মিয়ানমার থেকে যে পাঠিয়েছে তার বাড়ি মংডুতে। চট্টগ্রামে যাদের কাছে এ ইয়াবার চালান হস্তান্তর হবার কথা ছিল তাদের বেশ কয়েকজনের নাম ঠিকানা আমরা পেয়েছি। এদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status