বাংলারজমিন

হতাশায় মেঘনা নদীর জেলেরা

আব্বাছ হোসেন, লক্ষ্মীপুর থেকে

২৮ মে ২০১৮, সোমবার, ৮:৫৫ পূর্বাহ্ন

লক্ষ্মীপুরে গত এক সপ্তাহে ধরে মেঘনা নদীতে ইলিশের আকাল দেখা দিয়েছে। মাছ না পাওয়ায় হাজার হাজার জেলে পরিবারের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। মাছ ঘাটগুলোতে ইলিশের আমদানি না হওয়ায় অলস সময় কাটাচ্ছেন  জেলে ও আড়তদাররা। তবে, নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ার কারণে নদীতে মাছের আকাল। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মাছ আরো বেশি ধরা পড়বে বলে আশা করেন জেলা মৎস্য বিভাগ।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, এ জেলায় প্রায় ৪৬ হাজার জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে নিবন্ধিত রয়েছে ২৭ হাজার ৮শ’ জেলে। এদের অধিকাংশই মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১শ’ কি.মি. পর্যন্ত মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে থাকেন এখানকার জেলেরা। জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদনের লক্ষ্য মার্চ-এপ্রিল দু’মাস সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার ২৬ দিন পার হলেও জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ। মতিরহাট, মজুচৌধুরী হাট, লধুয়াঘাট ও মোল্লারহাটসহ বিভিন্ন হাটে ঘুরে দেখা যায়, ঘাটে তেমন মাছ নেই বললে চলে। জেলে ও আড়তদাররা অলস সময় পার করছেন। এ সময় জেলে কবির হোসেন, মনির মাঝি, সালামত উল্যাহ ও আড়তদার লিটন মেম্বারসহ অনেক জেলে অভিযোগ করে বলেন, নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে অনেক আগে কিন্তু নদীতে মাছ নেই। সারাদিন নদীতে জাল ফেলে এবং মাছ শিকার করলে দুই/চারটার মাছ পাওয়া যায়। এ দিয়ে ইঞ্চিন চালিত নৌকার তেলের খরচও জোগাড় করা যায় না। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার সময় দুই মাস ও মে-জুন দুই মাসসহ চার মাস ৪০ কেজি হারে চাল দেয়ার কথা। কিন্তু এসব ঘাটের আশপাশের তেমন কোনো জেলেই চাল পায়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা নিজেদের আত্মীয়স্বজনদের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে তাদের চাল দেয়া হয়। এসব তালিকার বেশিরভগই জেলে নয় বিভিন্ন পেশার লোকজন বলে দাবি তাদের। সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত  ভিজিএফের কার্ড নিতে এক হাজার টাকা করে আদায় করছেন চেয়ারম্যানরা। এরপরও চাউল দেয়া হয়নি। পুরোটায় আত্মসাৎ করে নেন ইউপি চেয়ারম্যানরা। গত এক সপ্তাহে ধরে হঠাত করে নদীতে মাছ নেই। জেলেদের জালে ইলিশ মাছ ধরা না পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছে।  অপরদিকে জেলেদের দাদন দিয়ে এখন বেকাদায় পড়ছে দাদন ব্যবসায়ীরা। মাছ ধরা না পড়ায় তারা মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। বর্তমানে জেলেরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এ ছাড়া জাটকা নিধনের ফলে মাছের আকাল বলেও দাবি করেন তারা।
এ দিকে সদর উপজেলার চরমনী মোহন ও চরকালকিনির ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ও মোহাম্মদ সাইুফল্লাহ এসব অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব এলাকায় যে পরিমাণ জেলে রয়েছে, তার অর্ধেকও নিবন্ধিত নয়। এ কারণে কার্ড পায়নি। যারা কার্ড পায়নি তারা চাল না পাওয়ার অভিযোগ করছেন। পর্যায়ক্রমে সব জেলে যেন তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে পারে, সে চেষ্টা করা হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচএম মহিব উল্যাহ জানান. জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্র্যে ওপর ভারসাম্যহীন আঘাতের ফলে মেঘনা নদীর গভীরতা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ায় ইলিশের প্রজনন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে নদীতে ভরা মৌসুমে ইলিশ মাছের অকাল দেখা দিয়েছে। জাটকা ইলিশ যেখানে প্রতিপালিত হয় সে ৮/১০টি স্পট আছে সেগুলো দিন দিন ভরাট হয়ে গেছে ওই স্পটগুলো ড্রেজিং করলে আবার নদীতে ইলিশের দেখা মিলতে পারে এমনটাই মনে করেন জেলা মৎস্য বিভাগ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status