বাংলারজমিন

মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ-চ্যানেলে খনন শুরু, রক্ষা পাবে সুন্দরবন

বাগেরহাট প্রতিনিধি

২৮ মে ২০১৮, সোমবার, ৮:৩২ পূর্বাহ্ন

মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক প্রোটকলভুক্ত নৌ-চ্যানেলে সংযোগ ৮৩টি খাল ও নদীখনন কার্যক্রম অবশেষে শুরু হয়েছে। এই নদী ও খালগুলো পরিপূর্ণভাবে সচল করা হলে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-চ্যানেলটি নাব্য ফিরে পাবে এবং রক্ষা পাবে এলাকার প্রতিবেশ-পরিবেশসহ সমুদ্রবন্দর মংলা ও ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রামপাল উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের মুন্সির খাল খননের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ৮৩টি নদী ও খাল খনন কার্যক্রম। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. জহুরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গত ১৪ই মে এ খনন কাজের কথা থাকলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তাই বৃহস্পতিবার ৫৫০ কোটি টাকার চুক্তিমূল্যে এ খনন কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় গ্রুপ খাল খনন কাজ শুরু করেছে। খাল খনন কাজ সার্বক্ষণিক তদারকিতে থাকছে নৌবাহিনী। বিআইডব্লিউটিএ এবং রামপাল উপজেলা প্রশাসন জানায়, মংলা বন্দরের সঙ্গে সারা দেশের দূরত্ব কমাতে ১৯৭৪ সালে ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ মোংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ চ্যানেলটির খনন কাজ শেষে চালু হয়। ’৮০-দশক থেকে ‘সব সরকারের আমলে’ শাসকদলের প্রভাবশালী নেতারা আন্তর্জাতিক নৌ-চ্যানেলটি সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোতে অবৈধ বাঁধ দিয়ে চিংড়িঘের (খামার) করা শুরু করলে ভাটার সময়ে পানির প্রবাহ কমে গিয়ে পলি পড়ে ভরাট হতে শুরু করে। দ্রুত পলি পড়ে ২২ কিলোমিটার হওয়ার কারণে ২০১০ সালের পর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এই চ্যানেলটি। পরে ২০১৪ সালে ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে পলি অপসারণ এবং দখল করে রাখা সংযুক্ত কয়েক শ’ সরকারি খাল খনন কাজ শুরু করে নৌপথটি পুনরায় চালু করা হয়। তবে চ্যানেলের সঙ্গে সংযুক্ত ৮৩টি সরকারি খাল স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা দখল করে চিংড়ি চাষ করায় নৌ-চ্যানেলটির পানি প্রবাহ আবারও বাধাগ্রস্ত হতে থাকে। এতে করে আবার পলি পড়ে চ্যানেলটি কার্যকারিতা হারানোর আশঙ্কা দেখা দেয়। মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ-চ্যানেল খননের কাজে নিয়োজিত বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকৌশলী (ড্রেজিং বিভাগ) মো. আব্দুল মতিন জানান, মোংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক চ্যানেল সংযুক্ত খালগুলো দখলে থাকায় নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এসব কারণে মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ-চ্যানেলের সঙ্গে সংযুক্ত ৮৩টি নদী ও খালখনন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। খালগুলো পুরোপুরি খনন করা হলে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে এবং নৌ-চ্যানেল সচল থাকবে। রামপাল উপজেলার নির্বাহী অফিসার তুষার কুমার পাল জানান, মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ-চ্যানেল খননের পরও প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এ চ্যানেল সংযুক্ত ৮৩টি খাল দখল করে রাখায়। এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা এসব খাল আটকে চিংড়ি খামার করতেন। এতে করে নৌ-চ্যানেলের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে নাব্যসংকট দেখা দেয়। প্রভাবশালীরা তারপরও খালগুলো দখলে রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন, প্রভাবশালীরা যত শক্তিশালী হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপরে ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদপ্তর থেকে রামপাল উপজেলায় খাল কাটার জন্য ২৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলে এ চ্যানেলের সংযুক্ত খালের ১৫০৮টি অবৈধ বাঁধ অপসারণ করা হয়েছিল। এরপরও প্রভাবশালীরা ওইসব অবৈধভাবে খাল দখল করে রাখেন। তাদের কবল থেকে এ খাল উদ্ধার করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সার্ভের দায়িত্ব দেয়া হলে তারা খালখননের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠান। পরে প্রস্তাবনা যাচাই করে খাল খননের জন্য ২০১৭ সালের ১০ই জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটি একনেক সভায় ৭০৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় খাল খনন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মো. আবুল হোসেন জানান, প্রথম পর্যায়ে ৫৫০ কোটি টাকা চুক্তিমূল্য নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ কাজটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় গ্রুপ ৮৩টি খাল ও নদী খননের কাজ পেয়েছে। তারা তিন বছরের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করবে। প্রথমে মুন্সির খাল খনন করা হচ্ছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে খালগুলি খনন করবে তারা। মেসার্স জয় গ্রুপের পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, খালগুলো যাতে কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে খনন করা যায়, সেজন্য তিনি নৌবাহিনী ও প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। নদী গবেষক মো. শাহাবুদ্দিন শিকদার জানান, এই আন্তর্জাতিক প্রোটকলভুক্ত নৌ-চ্যানেলে নাব্য রক্ষায় যা করণীয় সেটি হলো, চ্যানেলর সঙ্গে সংযুক্ত ৮৩টি নদী-খাল দ্রুত খনন করা, চ্যানেলের অন্যতম শাখা নদী দাউদখালীর ওপর নির্মিত স্লুইসগেট ও বক্স কালভার্টসহ সব বাঁধ অপসারণ করা, ড্রেজিং অব্যাহত রাখা, জলাভূমি উন্মুক্তকরণ ও ‘টাইডাল বেসিন’ নির্মাণ করে স্বাভাবিকভাবে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য তিনি কর্তৃপক্ষের আরও নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান। মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ-চ্যানেল রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব এমএ সবুর রানা জানান, চ্যানেরের সঙ্গে সংযুক্ত ৮৩টি খাল খনন করলেই হবে না, এর পাশে আরো বিল ও জলাভূমি আছে সেগুলোও উন্মুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, খাল খননের জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে তা যেন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। তবেই রক্ষা পাবে মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ-চ্যানেলটি,  স্বাভাবিক থাকবে নৌ-চলাচল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status