শেষের পাতা

চট্টগ্রামে অভিযানেও থেমে নেই মাদক পাচার ও বিক্রি

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

২৭ মে ২০১৮, রবিবার, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামে সাঁড়াশি অভিযানেও থেমে নেই মাদক পাচার ও বিক্রি। গত ১৪ই মে থেকে অভিযানের পর চট্টগ্রামে র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে ৫ মাদক কারবারি নিহত হয়। অথচ এর মধ্যেও মাদক পাচার ও বিক্রির সময় গ্রেপ্তার হয়েছে নারীসহ ২৬ মাদক কারবারি। উদ্ধার করা হয়েছে অর্ধলাখেরও বেশি ইয়াবা ও ফেনসিডিল। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সৈয়দ আবদুর রউফ জানান, মহানগরীর সবচেয়ে বড় মাদকের আখড়া সদরঘাট থানার বরিশাল কলোনিতে অভিযান চালিয়ে ৬৫৩ বোতল ফেনসিডিলসহ দুই নারী মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । বৃহস্পতিবার রাত দুটা থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত এই কলোনিতে অভিযান চালায়। অভিযানে সদরঘাট থানার ওসিসহ প্রায় ২০০ পুলিশ সদস্য অংশ নেয়।
সদরঘাট থানার ওসি নিজাম উদ্দিন বলেন, গত ১৪ই মে বরিশাল কলোনির মাদক সম্রাট হাবিবুর রহমান প্রকাশ মোটা হাবিব (৪২) ও তার সহযোগী মোশাররফ (২২) র‌্যাবের অভিযানে গোলাগুলিতে নিহত হয়। এরপর গত ২৩শে মে বরিশাল কলোনির গিরা খ্যাত মাদক বিক্রির শতাধিক স্পট গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এরপরও থেমে নেই মাদক বিক্রি ও পাচার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ মাদক বিক্রির খবর পেয়ে এই কলোনিতে অভিযান চালানো হয়।
রাতভর তল্লাশি চালিয়ে কলোনির বিভিন্ন আস্তানা থেকে ৬৫৩ বোতল ফেনসিডিল এবং মাদক সম্রাজ্ঞী পারুল ও জহুরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই দুই নারীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ১৭ই মে গভীর রাতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় শুক্কুর আলী (৪৫) নামে চট্টগ্রামের এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। নগরীর বায়োজিদ থানাধীন ডেবারপাড় এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের এ ঘটনা ঘটে। এ অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটার গান,৩ রাউন্ড গুলি ও বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করে র‌্যাব।
শুক্কুর ব্রাহ্মণবাড়িয় জেলা সদরের আউলিয়া বাজার মুকুন্দপুর গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিনের ছেলে। নগরীর বায়েজিদ থানা ডেবার পাড় ব্যাংক কলোনিতে গাঁজা শুক্কুর হিসেবে সুপরিচিত ছিল সে। তার বিরুদ্ধে মহানগরীর বিভিন্ন থানায় অন্তত ১০টি মাদক মামলা আছে।

একদিন পর ১৯শে মে বায়েজীদ থানা ডেবারপাড় থেকে ১০ হাজার ইয়াবাসহ চার মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। মাদকারবারিরা এসব ইয়াবা পাচারে জড়িত ছিল। এদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বায়েজীদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জসিম উদ্দিন।

এছাড়া ১৭ই মে নগরীর বাকলিয়া থেকে পুলিশ ইয়াবাসহসহ ৬ মাদকারবারিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে এ সময় ৬ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে। এই চার মাদক কারবারি ফেনীর দাউদপুর এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত মাদক সম্রাট ফারুকের সহযোগী।
এাদক সম্রাট ফারুক গত মঙ্গলবার রাতে ইয়াবা নিয়ে প্রাইভেটকার যোগে ঢাকা যাওয়ার পথে র‌্যাবের নজরে পড়ে। র‌্যাবের একটি দল প্রাইভেটকার থামানোর সংকেত দিলে ফারুক র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায় এতে নিহত হয় ফারুক।
এ সময় তার প্রাইভেটকার তল্লাশি করে ২২ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট, একটি ওয়ান শুটার গান, ৫ রাউন্ড গুলি, ৫ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা হয় কারটিও। ফারুকের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় মাদকসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে বলে র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক মিমতানুর রহমান।
মিমতানুর রহমান আরো জানান, অভিযানে ফেনীর লেমুয়া বাজার এলাকায় র‌্যাবের একটি টিমের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত চট্টগ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু (৪৬)। চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন তিনি।
বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, সাত রাউন্ড গুলি, পাঁচটি খালি খোসা ও দশ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র‌্যাব। মঞ্জু চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মৃত হাজী আবদুল করিমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি। অথচ গত শুক্রবার কক্সবাজার থেকে ইয়াবা পাচারের সময় ২০ হাজার ইয়াবাসহ তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তিনি বলেন, অভিযানের মধ্যেও শনিবার সকালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ইয়াবা পাচারের সময় একটি বাসের চালক মাসুদ রানা (৪০), চালকের সহকারী জয়নাল আবেদিন (২০) ও সুপারভাইজার আবুল কালামকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৪ হাজার ইয়াবা।
শুক্রবার রাতেও সালাহউদ্দিন দুলাল নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে নগরীর চাদগাঁও এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয় সাধুবাবাসহ দুজন মাদক কারবারিকে।

তিনি বলেন, মাদকের ভয়াবহতায় সারা দেশের কিশোর ও তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যুবকরা অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে শুরু করে হত্যার মত জঘন্য খেলায়ও মেতে উঠছে। বিগত সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঝুঁকি নিয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করলেও কুচক্রী মহলের ইশারায় কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে আবারো ফিরে আসে অপরাধ জগতে। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা হাতে নিয়েই এবার মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশজুড়ে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। কিন্তু এর মাঝেও থেমে নেই মাদক পাচার ও বিক্রি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status