শেষের পাতা

দুই রোগী শনাক্ত

ফের আসছে চিকুনগুনিয়া

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

২৭ মে ২০১৮, রবিবার, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন

আবারো চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ বছর ইতিমধ্যে ঢাকার ওয়ারীর দুই বাসিন্দা আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম । চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্তরা হলেন, রাজধানীর পুরান ঢাকার ৮নম্বর র‌্যাংকিং স্ট্রিটের মিসেস লিপি ইসলাম। বয়স ৩৪ বছর। তিনি চলতি মাসে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হয়ে ১৫ তারিখে সালাউদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হন। একদিন পর ছাত্রপত্র নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। তার আইজিএম (পজিটিভ) চিকুনগুনিয়া। অপরজন একই এলাকার বেবী হেলেন। বয়স ৯ বছর। ২৩ নম্বর কেএম দাশ লেনে তাদের বাসা। ৯ই মে সালাউদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয় হেলেন।

১৬ই মে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছে বেবী হেলেন। গত বছর ডেঙ্গুর পাশাপাশি ঢাকাসহ সারা দেশে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে চিকুনগুনিয়া নামক ভাইরাসবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কোনো কোনো ঘরে চার-পাঁচ জনেরও এই জ্বর হয়েছিল। এটি মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া রোগ। এডিস ঈজিপ্টাই অথবা এডিস অ্যালবুপিক্টাস মশার কামড়ের মাধমে ছড়ায়।
গত বছর থেকে রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে চিকুনগুনিয়া আতঙ্ক। এ দুই রোগের জন্য দায়ী এডিস মশার লার্ভা এ বছরও পাওয়া গেছে দুই সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত বাসাবাড়িতে। সিটি করপোরেশন মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম নিলেও বাসিন্দাদের অসচেতনতায় বাড়ির ভেতরে, আনাচে-কানাচে বেড়ে উঠছে চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক এডিস মশা। সমপ্রতি ধানমণ্ডি, কলাবাগান ও পরীবাগ এলাকার ১৮টি বাড়ি পরিদর্শন করে ১১টিতেই এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। আরো কয়েকটি এলাকায়ও পাওয়া গেছে এডিস মশার লার্ভা বলে সূত্র জানিয়েছে।
৮ই এপ্রিল থেকে এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংসের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সহায়তায় ডিএসসিসির পাঁচটি অঞ্চলে একটি করে কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। ডিএসসিসির অঞ্চল-১-এর মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা-সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কমিটি ধানমণ্ডি, কলাবাগান, পরীবাগ ও এলিফ্যান্ট রোডের ১৮টি বাসা পরিদর্শন করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন পাঠায়, তাতেই এডিস মশা পাওয়ার এ চিত্র উঠে আসে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৮ই এপ্রিল ধানমণ্ডি এলাকার সাতটি বাড়ি পরিদর্শন করে কমিটি। এর মধ্যে তিনটিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। ২২শে এপ্রিল কলাবাগানের ছয়টি বাড়ি পরিদর্শন করে চারটি বাড়িতে লার্ভা পায়। ৬ই মে পরীবাগের পাঁচটি বাড়ি পরিদর্শন করে চারটিতেই লার্ভা পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব বাড়ির পানির ড্রাম, ফুলের টব, ঘরের আশপাশে পড়ে থাকা মাটির ভাঙা হাঁড়ি-পাতিল, পরিত্যক্ত কলসি, বালতি, বোতল, কনটেইনার, টায়ার, পলিথিন ব্যাগ, ছোট-বড় গর্ত, নালা ও পুকুরে জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা দুই সিটি করপোরেশনের ৯৩টি ওয়ার্ডের ১০০টি জায়গায় জানুয়ারি মাসে জরিপ চালায়। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪১টি জায়গায় জরিপ হয়। জরিপ শেষে ১৯টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বিস্তারে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বনানী, গাবতলী, মগবাজার, মালিবাগের একাংশ, মিরপুর-১, মহাখালী ডিওএইচএস, নাখালপাড়া, পূর্ব শেওড়াপাড়া, টোলারবাগ ও উত্তরা-৯ নম্বর সেক্টর। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ধানমণ্ডি-১, এলিফ্যান্ট রোড, গুলবাগ, কলাবাগান, মেরাদিয়া, মিন্টো রোড, বেইলি রোড ও শান্তিনগর।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আর সব ভাইরাসজনিত জ্বরের মতোই এর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। প্রচুর পানি, শরবত, ওরস্যালাইন, ডাবের পানি পান করতে হবে। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল। চিকুনগুনিয়ার কোনো ভ্যাক্সিন এখন পর্যন্ত নেই। চিকিৎসকরা জানান, এডিস মশাই এ রোগের বাহক। এ মশা দিনে কামড়ায়, বিশেষ করে বিকালে। দিনের বেলা ঘুমোনোর অভ্যাস থাকলে মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। তাছাড়া মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করতে হবে। দীর্ঘ সময় আটকে থাকা খোলা পানির আধারগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।

মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক ড. মাহমুদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, এবার চিকুনগুনিয়া বেশি হওয়ার আশঙ্কা কম। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যাদের একবার এই জ্বর হয় তাদের পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই জ্বরে মৃত্যু নাই বললেই চলে। তবে যাদের অন্যান্য অসুখ আছে, তাদের জন্য ভয় আছে। তবে ডেঙ্গু থাকবে। এই জ্বরের ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মাথাব্যথা, সর্দি, বমিবমিভাব, হাত ও পায়ের গিটে এবং আগুলের গিটে ব্যথা হতে পারে। এ ভাইরাস মশা থেকে মানুষের শরীরে আসে।

আবার আক্রান্ত মানুষকে কামড় দিলে মশাও আক্রান্ত হয় এবং বাহক হিসেবে আবার মানবদেহে প্রবেশ করে।
এদিকে, আইইডিসিআর ওয়েব সাইটের তথ্য মতে, চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাস জনিত জ্বর যা মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। এ রোগটি ডেঙ্গু, জিকা এর মতই এডিস প্রজাতির মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। রোগটি প্রথম ১৯৫২ সালে আফ্রিকাতে দেখা যায়। পরবর্তীতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন-ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার এবং ইন্দোনেশিয়াতে এর বিস্তার দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রথম ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে ঢাকার দোহার উপজেলায় এই রোগ দেখা যায়। তবে, এর পরে বিচ্ছিন্ন দু-একটি রোগী ছাড়া এ রোগের বড় ধরনের কোনো বিস্তার আর বাংলাদেশে লক্ষ্য করা যায়নি। বর্ষার পর পর যখন মশার উপদ্রব বেশি হয় তখন এ রোগের বিস্তার বেশি দেখা যায়। লক্ষণ- হঠাত জ্বর আসার সঙ্গে প্রচণ্ড গিটে গিটে ব্যথা, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, চাড়ড়ায় লালচে দানা, মাংসপেশী ব্যথা। এ ছাড়াও চিকুনগুনিয়া ভাইরাস আক্রান্ত রক্তদাতার রক্ত গ্রহণ করলে এবং ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার সময় অসাবধানতাবশত এ রোগ ছড়াতে পারে। এদিকে এ বছর ডেঙ্গুতে এই পর্যন্ত ৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন একজন। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন একজন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status