দেশ বিদেশ

সিলেটে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

হুমকির মুখে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৭ মে ২০১৮, রবিবার, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

মালিকানা দ্বন্দ্বে হুমকির মুখে পড়েছে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষা কার্যক্রম। এই দ্বন্দ্বের কারণে চলতি সেশন থেকে ছাত্রভর্তি বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই ঘোষণার পর আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষাজীবন হুমকির আশঙ্কায় গতকাল থেকে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে এসে যোগ দিয়েছেন সাবেক শিক্ষার্থীরাও। তারা দিনভর ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে দুই দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিয়েছেন। দুই দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- দ্রুত মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দুই একর ভূমি প্রতিষ্ঠানের নামে বুঝিয়ে দেয়া। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস নগরীর শামীমাবাদ আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। সিলেটের প্রথম নিজস্ব ক্যাম্পাসের দাবিদার সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। মালিকপক্ষ তাদের জমির উপর ক্যাম্পাস স্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সিলেটের উচ্চশিক্ষার অন্যতম আলোকবর্তিকা, শাবির সাবেক ভিসি প্রফেসর সদরউদ্দিন আহমদ। তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সিলেটের ধণাঢ্য কুতুব উদ্দিন আহমদ। প্রফেসর সদরউদ্দিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পাঁচ একর ভূমি প্রতিষ্ঠানের নামে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন কুতুব উদ্দিন আহমদ। এই অবস্থায় নিজেদের জমিতে ক্যাম্পাস গড়ে তুলে শিক্ষা কার্যক্রমও শুরু হয়েছিল। প্রতিষ্ঠাতা ভিসি হন প্রফেসর সদরউদ্দিন আহমদ। ওদিকে- বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া জমি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। কুতুব উদ্দিনের পর তার ছেলে শামীম আহমদ প্রায় ১০ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্ট্রি হিসেবে রয়েছেন। এদিকে, দীর্ঘদিন থেকে মালিকানার দ্বন্দ্বের অভিশাপ বয়ে বেড়ানো শিক্ষার্থীদের দুঃচিন্তায় ফেলে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি বন্ধের চিঠি। ২০১৭ সালের আগস্টে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্তৃক ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান বরাবর মালিকানা দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য এক চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০শে জুনের মধ্যে ইউনিভার্সিটির চলমান মালিকানা দ্বন্দ্ব নিরসন করতে হবে। কিন্তু দীর্ঘ ১০ মাসেও সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। নির্ধারিত সময় শেষ হতে আর বেশি দূরেও নয়। ২০১০ সালে ইউনিভার্সিটির সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর কেটে গেছে আরো আট বছর। এরমধ্যে সমাবর্তন তো দূরের কথা ইউনিভার্সিটির ভিসি, প্রো ভিসি, ট্রেজারার নিয়োগ দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি পদ চলছে ‘ভারপ্রাপ্ত’ দিয়ে। এদিকে, স্থায়ী ক্যাম্পাসের ব্যবস্থাসহ দুই দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা বলছেন, দীর্ঘ আট বছর থেকে সমস্যা নিরসনে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলে কার্যত কোনো ভূমিকা পালন করছে না। দুই একর ভূমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সমঝে দেয়া হচ্ছে না। মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের বিরোধ মিটছে না। এ কারণে গতকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যয়নরত প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে এসে যুক্ত হয়েছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। তারা ক্যাম্পাসে দিনভর অবস্থান নিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করেছে। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসির সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি তুলে ধরেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাগর আহমদ জানিয়েছেন- শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ব্যবস্থায় নিশ্চয়তা চায়। মালিকানা মিটিয়ে ফেলতে বার বার শিক্ষার্থীরা দাবি জানালেও সেটি করা হয়নি। এ কারণে এখন কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত ভিসি মনির উদ্দিন জানিয়েছেন- আগামী ৩০শে জুনের মধ্যে মালিকানা দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে ভার্সিটিতে নতুন কোনো ছাত্র ভর্তি করা হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত বছর আমাদের মালিকানা দ্বন্দ্বের অবসানের জন্য চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু আগামী ৫ই জুন পর্যন্ত মামলাটিতে আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আদালতের কাছে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান শামীম আহমদ কিছুদিন পূর্বে যুক্তরাজ্যে চলে যান। আমরা তাকে ৩০শে জুনের মধ্যে দেশে আসার কথা বলেছি। তিনি আসবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status