দেশ বিদেশ

জলবায়ু পরিবর্তনে প্রতি মিনিটে ৪১ জন মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে

মানবজমিন ডেস্ক

২৬ মে ২০১৮, শনিবার, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়ে প্রতি সাতজন বাংলাদেশির মধ্যে একজনকে গৃহহারা হতে হবে বাধ্য হয়ে। ২০০৮ সাল থেকে আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে গড়ে প্রতি বছর ২ লাখ ১৭ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর অর্থ হলো- প্রতি এক মিনিটে ৪১ জন মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস ফাউন্ডেশনের (ইজেএফ) তাদের নতুন এক রিপোর্টে এ কথা বলেছে। ইজেএফ হলো বৃটেনভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা। তারা পরিবেশ ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে যে মানবিক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে বাংলাদেশে। এতে বলা হয়েছে, বন্যা ও ঝড়ের কারণে ২০০৮ সাল থেকে গড়ে প্রতি বছর ৬ লাখ ১৪ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হচ্ছে বাধ্য হয়ে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন যেমন একটি মানবিক তেমনি পরিবেশগত একটি সংকট। এর ফলে যারা উদ্বাস্তু হচ্ছে তাদের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক ভিত্তিতে জলবায়ু বিষয়ক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়ার এটাই বড় কারণ। তাই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ তার মূল ভূখণ্ডের শতকরা প্রায় ১১ ভাগ হারাতে পারে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ মানুষ। এতে মানুষগুলো বন্যার কারণে যে শুধু বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে তেমন নয়। একই সঙ্গে তারা লবণযুক্ত দূষিত পানি পান করছে। তাতে নানা রকম স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে ফসল। ২০১৭ সালে ইজেএফ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল কারামুড়ার গোপাল মুণ্ডা। তিনি বলেছেন, এক সময় গ্রামে গ্রামে ছিল সবুজ ধানের ক্ষেত। কিন্তু এখন পানি লবণাক্ত। গাছগুলোও মরে যাচ্ছে। এখন শুধু চিংড়ি চাষ করতে পারি আমরা। যখন মনে হয় আমাকেও এক সময় এখান থেকে সরে যেতে হবে তখন হৃদয় ভেঙে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মুষলধারে বৃষ্টি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নদীতীর  ভেঙে যাচ্ছে। মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার এটা হলো আরেকটি বড় ফ্যাক্টর। এসব কারণে গ্রামে বসবাসকারী মানুষদের অর্ধেককে ছুটে আসতে হতে পারে শহরে। বাড়িঘর হারিয়ে ঢাকার মিরপুরে একটি বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছেন রেনু বিবি। তিনি বলেছেন, নদী ভাঙনে আমরা সবকিছু হারিয়েছি। শুধু জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছি আমরা। বন্যায় বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ঢাকার একটি বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছেন কমলা বেগম। তিনি বলেন, আমাদের একটি ছোট কৃষিফার্ম ছিল। সেখানে আমরা বাদাম, লাউ, শস্য ও আখ চাষ করতাম সারা বছর। আমরা খেতাম টাটকা খাবার। আর এখন আমি ফেলে দেয়া জিনিস কুড়িয়ে বেড়াই অথবা শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। ইজেএফের নির্বাহী পরিচালক স্টিভ ট্রেন্ট বলেছেন, বাংলাদেশের মতো অনেক দেশ ও মানুষকে আমরা জানি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তাদের অবদান সবচেয়ে কমদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু তাদের ওপরই সবচেয়ে বেশি খারাপ প্রভাব পড়ছে। পূর্ণাঙ্গ একটি মানবিক সংকটে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করতে আমাদেরকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাস্তব নেতৃত্ব প্রদর্শনের জন্য বিশেষ করে সুযোগ রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিনিয়োগ করতে হবে মোটা অর্থ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনগতভাবে অবশ্যই বাধ্যতামূলক চুক্তি  করতে হবে, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্বাস্তুতে পরিণত হওয়া মানুষদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জীবন-জীবিকা, অবকাঠামো ও মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করছে। মানুষকে তার বাড়িঘর, শহর এমন কি দেশ ত্যাগে বাধ্য করছে। এসব প্রভাবে বিশেষ করে বাংলাদেশ যখন বিপন্ন তখন তার প্রভাব সারা বিশ্ব থেকে অনুধাবন করা যাচ্ছে। ২০০৮ সাল থেকে আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে গড়ে প্রতি বছর ২ লাখ ১৭ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হলেও ধীরগতিতে চলমান আবহাওয়াজনিত কারণে বিশেষত খরা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে যেসব মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে তাদেরকে এর মধ্যে ধরা হয় নি। এ অবস্থায় জলবায়ুর প্রভাবে উদ্বাস্তুতে পরিণত হওয়া মানুষদের সুরক্ষা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইজেএফ। এক্ষেত্রে কার্বন নির্গমনের জন্য যে আসক্তি আমাদের গ্রাস করেছে সেদিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অবিলম্বে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে। প্যারিস চুক্তির অধীনে আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে। ওই চুক্তিতে তাপমাত্রা শিল্পায়ন যুগের থেকে ১.৫ ডিগ্রির নিচে রাখার কথা বলা হয়েছে।
মূল পয়েন্ট: পানিবাহিত বিপর্যয় থেকে যত মানুষ মারা যাচ্ছে বিশ্বে তার মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগই অনুন্নত দেশগুলোর। তবে এসব দেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য শতকরা মাত্র ১ ভাগ দায়ী। যদি জলবায়ু মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয় মানব জাতি তাহলে ৭২ কোটি মানুষ চরম দরিদ্রসীমায় নিপতিত হবে। ১৮৫০ সালের পর যেকোনো সময়ের চেয়ে গত তিনটি দশক ছিল সবচেয়ে বেশি উষ্ণ। ২০১৫ সাল এমন একটি বছর, যে সময়ে তাপমাত্রা বেড়ে যায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৮৫ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে গেছে শতকরা ১৩.৭ ভাগ। অথচ ১৯৬৪ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে এই মাত্রা ছিল মাত্র ৬.৭ ভাগ। উল্লেখ্য, ইজেএফ ২০১৭ সালের ২২ শে সেপ্টেম্বর থেকে ৪ঠা অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করে। এ সময় এর টিম সফর শুরু করে ঢাকা থেকে। এরপর যায় যশোর, সাতক্ষীরা, শ্যামনগর ও গাবুয়া। শেষ পর্যন্ত তারা যান সুন্দরবনে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status