শেষের পাতা

কাঁচাবাজারের তেজিভাব কমে এসেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৬ মে ২০১৮, শনিবার, ৯:৪১ পূর্বাহ্ন

রমজান শুরুর এক সপ্তাহ পর রাজধানীর সবজিসহ ভোগ্যপণ্য বাজারের তেজিভাব কমে এসেছে। বেগুনের উত্তাপ কমে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০-৭০ টাকায়। রোজা শুরুর আগে  বেগুন কিনতে ভোক্তাকে ৮০-১০০ টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়েছে। বেগুনের পাশাপাশি গেল সপ্তাহে দাম কমেছে শসা, গাজার, টমেটো, কাঁচামরিচসহ প্রায় সব সবজির। এছাড়া খেজুর, ছোলা, মুড়ি, চিনি, ডাল ও ভোজ্য তেলের দাম বাড়েনি। তবে সব ধরনের মাছ ও মাংসের দাম চড়া। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। রোজার শুরুতেই পিয়াজের দাম একটু বাড়লেও এখন স্থিতিশীল রয়েছে। জাত ও মানভেদে ৩৫-৫০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পিয়াজ বাজার ও মান ভেদে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা (ভারতীয়) পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে রাজধানীর বাজারগুলোতে দেশি পিয়াজের কেজি ছিল ৫০-৬০ টাকা এবং ভারতীয় পিয়াজের দাম ছিল ৩৫-৪৫ টাকা কেজি।
কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া বলেন, বাজারে এখন পিয়াজের দাম অনেক কম। আমদানি পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় আপাতত পিয়াজের দাম আর বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
এদিকে পিয়াজের পাশাপাশি রাজধানীর বাজারগুলোতে কমেছে সবজির দামও। রোজার শুরুতে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া শসা ও গাজা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। দাম কমার তালিকায় রয়েছে বেগুন, চিচিংগা, করলা, পটোল, ঢেঁড়স, বরবটিসহ প্রায় সকল সবজি। গত সপ্তাহে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া চিচিংগার দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৪০-৪৫ টাকা। বেগুনের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৬০-৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। ৮০ টাকায় ওঠে যাওয়া পেঁপের দামও কমে এসেছে। বাজার ভেদে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা কেজি। এ ছাড়া পটোল, বরবটি, ঢেঁড়সে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০-৬০ টাকা। গত সপ্তাহে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া করলার দাম কমে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কাঁকরল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। রোজার প্রথম দিকে কাঁচামরিচের দাম কিছুটা বাড়লেও তা কমে এসেছে। গত সপ্তাহে ১৫-২০ টাকা পোয়ায় (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচের দাম এখন ১০-১৫ টাকা।
টিসিবির তথ্যমতে, প্রতিকেজি ছোলা ৬৫-৮০, অ্যাংকর ডাল ৪৫-৫৫, মুগডাল ৯০-১৫০, ডাল নেপালি ১০০-১১০, ডাল দেশি ৯০-১০০, ডাল তুরস্ক কানাডা মোটা দানা ৫৫-৬৫, ডাল তুরস্ক-কানাডা মাঝারি মানের ৭০-৮০, ভোজ্য তেল খোলা প্রতিলিটার ৮৫-৮৮, বোতল পাঁচ লিটার ৪৮৫-৫২৫, পামওয়েল লুজ ৭০-৭২, পামওয়েল সুপার ৭৩-৭৫ টাকা ও চিনি ৫৮-৬২ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজারে বর্তমানে চীনা রসুন ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে যা ১০৫ টাকায় গিয়ে ঠেকে। সে হিসেবে পণ্যটির দাম কমেছে অন্তত ৪০ টাকা। আর দেশি রসুন মান ভেদে ৪৪, ৫০ ও ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে দাম কম ছিলো ছোলা, মসুর ডাল ও চিনির। বর্তমানে ছোলা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ছোলার দাম কমেছে অন্তত ৫ টাকা। বিক্রেতা মনোয়ার হোসেন বলেন, তীরের এক বস্তার ছোলার দাম এখন ৩ হাজার ২৫০ টাকা। আগে যা ৩ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, খুচরা বাজারে এই ছোলা এখন ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যা কয়েকদিন আগেও ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মায়ের দোয়া স্টোরের কর্মচারী বাবলু বলেন, ২টাকা কমে চিনি এখন ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুরের ডাল ৫ টাকা কমে ৮৫ টাকা ও ভারতীয় মসুরের ডাল ৫৫ টাকা কেজিতে বেচাকেনা হচ্ছে।
কাপ্তান বাজারের জামশেদ স্টোরের কর্মকর্তা আবদুল গনি মিয়া বলেন, রোজা শুরুর আগে যেসব ছোলা, খেজুর, ডাল ও চিনি আনা হয়েছে তা এখনও বিক্রি করা হচ্ছে। রোজার শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে এসব পণ্যের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এরপর চাহিদা কমতে থাকে। বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি ও মজুদ থাকায় ছোলা, চিনি, খেজুর, ভোজ্য তেল ও ডালের দাম বাড়ার কোন সুযোগ নেই।
এদিকে রমজান উপলক্ষে সিটি করপোরেশন থেকে গরু ও মহিষের মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছেন না রাজধানীর অধিকাংশ মাংস ব্যবসায়ীরা। নির্ধারিত দাম উপেক্ষা করে আগের মতই ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করছেন তারা। রমজান উপলক্ষে এ বছর সিটি করপোরেশন থেকে দেশি গরুর মাংস ৪৫০ টাকা, বিদেশি গরুর মাংস ৪২০ টাকা, মহিষের মাংস ৪২০ টাকা এবং খাসির মাংস প্রতিকেজি ৭২০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তবে মাংস ব্যবসায়ীরা রোজার শুরু থেকেই সিটি করপোরেশনের এ নির্ধারিত মূল্য তালিকা মানছেন না।
বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি করছেন ৪৫০ টাকায়। এছাড়া গরুর কলিজা বিক্রি করছেন ৫০০ টাকা কেজি। আবার কেউ কেউ গরুর মাংস বিক্রি করেছেন ৪৮০ টাকায়। অথচ দোকানে গরুর মাংসের দাম ৪৫০ টাকা লেখা রয়েছে। প্রতিকেজি খাসি ৭৫০-৮০০ এবং প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। এ ছাড়া পাকিস্তানি ও ককটেল মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিজোড়া ৫০০ টাকা পর্যন্ত। গরুর মাংসের দাম বাড়ানো হয়েছে সিন্ডিকেট করে। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাংস বিক্রেতারা বলছেন, রোজা সামনে রেখে আগেই আস্ত গরু ও খাসির দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করা যাচ্ছে না। তবে গাবতলীর হাটে চাঁদাবাজি বন্ধ ও হাসিল ধার্যের হার কমানো হলে মাংসের দাম কমে আসবে।
রোজা শুরুর আগে থেকে চড়া মাছের বাজার। বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের দেশি ও সামুদ্রিক মাছ। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে মাছের দাম। প্রতিকেজি রুই মাছ ২৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। আকার ও সাইজভেদে প্রতিকেজি চিংড়ি ৬০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের একটি ইলিশ কিনতে ভোক্তাকে খরচ করতে হচ্ছে ১২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status