বাংলারজমিন

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা সাধারণ মানুষ

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

২৬ মে ২০১৮, শনিবার, ৯:৩৪ পূর্বাহ্ন


চৌদ্দগ্রামে রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষদের জীবন নির্বাহে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী যানজট আর কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বিভিন্ন অনিয়ম কিছুটা কমলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেমে নেই।
সরজমিন ঘুরে জানা গেছে, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের প্রতিটি বাজারে রমজানকে কেন্দ্র করে দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। ফলে তার প্রভাব জনগণের ওপর পড়ছে। চৌদ্দগ্রাম বাজারে বর্তমানে শসা প্রতি কেজি ৩০ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ২০ টাকার পরিবর্তে ৭০ টাকা, ঢেড়স প্রতি কেজি ৩০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৩৫ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা, সিসিঙ্গা প্রতি কেজি ২৫ টাকার পরিবর্তে ৭০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৪০ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা, ধনিয়াপাতা প্রতি কেজি ৬০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৩০ টাকার পরিবর্তে ৭০ টাকা, তেলাপিয়া প্রতি কেজি ১২০ টাকার পরিবর্তে ১৭০ টাকা, পাঙ্গাস প্রতি কেজি ১১০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা, রুইমাছ প্রতি কেজি ১৫০ টাকার পরিবর্তে ২৮০ টাকা, কাতলা প্রতি কেজি ২০০ টাকার পরিবর্তে ৩৫০ টাকা, ছোলা প্রতি কেজি ৬০ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা, পেয়াজ প্রতি কেজি ২৫ টাকার পরিবর্তে ৩৫ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৫৫ টাকার পরিবর্তে ৬৫ টাকা ও মুড়ি প্রতি কেজি ৫০ টাকার পরিবর্তে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজানে প্রতিটি জিনিসের মূল্য দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। এদিকে রোববার বিকালে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে ও ভোক্তা অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল ইসলামের পরিচালনায় উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে অপরিপক্ব কলা পাকানোর অপরাধে কলার আড়তদারকে ৫ হাজার টাকা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অবৈধ উপায়ে খাদ্য তৈরির কারণে ক্যাপিটাল বেকারিকে ২০ হাজার টাকা, কলার আড়তদার কবির হোসেনকে ৫ হাজার টাকা, নাজমা হোটেলকে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া ইফতারি সামগ্রীতে রং মেশানোর কারণে ইফতারি সামগ্রী ধ্বংস করা হয়। অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা করেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্যানিটারি অ্যান্ড নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান।  চৌদ্দগ্রাম বাজারে কাঁচামাল কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সাইফুল ইসলাম জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস। কোম্পানি থেকে যে বেতন পাই, তা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল কেনাও সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে প্রতিটি জিনিস দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলামসহ আরও অনেকেই দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

আবু সাঈদ শুনু, বাগেরহাট থেকে: বাগেরহাটে পবিত্র রমজান মাসের শুরুতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যে ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। রজমানের শুরুতে হু হু করে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার দর। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পিয়াজ, রসুন, বেগুন, চিনিসহ প্রায় সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে জেলার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। যদিও জেলা প্রশাসন, বাজার নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলছেন সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্য তালিকার বাইরে গিয়ে অধিক মুনাফার চেষ্টা করলে নেয়া হবে আইনি ব্যবস্থা। শনিবার সকালে সরজমিনে বাগেরহাটের বাজারে ঘুরে দেখাগেছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যের লাগামছাড়া বৃদ্ধিতে হতাশ ক্রেতারা। মূলত প্রতিবছর রমজান মাস আসলেই কিছু মুনাফাখোর অসাধু ব্যবসায়ীরা পন্য মজুদ করে অধিক মুনাফার আশায় দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায়। এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারেরর বেঁধে দেয়া বাজার মূল্যের কোন তোয়াক্যা করে না। এবারও পবিত্র রমজানের শুরুতেই এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, সবজি, মাছ মাংসসহ চিড়া মুড়ির দাম বাড়িয়েছে। বাগেরহাট বাজার ঘুরে দেখা যায় গত সপ্তাহে আগে যে পেয়াজের দাম ছিল কেজি প্রতি ৩২ টাকা তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ টাকায়, রসুন কেজিপ্রতি ছিল ৫৪ টাকা এখন ৭০ টাকা, বেগুন ছিল ৪০ টাকা তা এখন কেজিপ্রতি ৮০ টাকা, শসা ছিল ৪০ টাকা তা এখন ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ছিল ৪০ টাকা তা এখন কেজিপ্রতি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যে চিনির দাম ছিল ৪৮ টাকা তা এখন কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়ে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৮০ টাকার মুড়ি এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। বেড়েছে মাংসের দামও, সরকারের বেধে দেয়া ৪৪০ টাকার গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা দরে। এছাড়া প্রায় দ্বিগুণ দামে বিভিন্ন জাতের মাছ। বাজার করতে আসা ক্রেতা আহসানুল করিম বলেন, রমজানের শুরুতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ায় আমরা সাধারণ মানুষ বিপাকে আছি। বাজারে আসলাম দেখি মাছের বাজার গরম, পাইকারি ব্যাবসায়ীরা মজুদ শুরু করেছে আমরা বিপদে আছি। সরকারি চাকরিজীবী হেদায়েত হোসেন বলেন, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেশি আমরা যারা সীমিত বেতনে চাকরি করি তাদের মাস চালানো কষ্ট হবে এবার। পিয়াজ ও রসুন দাম বেশি, মাংসের অগ্নিমূল্যে বাজারের মূল্য অস্বাভাবিক। সবজি বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, খেতে মাল কম তাই প্রায় সব সবজিতেই কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাংস বিক্রেতা জুম্মন শেখ বলেন, বাজারে গরুর যে চাহিদা যে অনুযায়ী গরু পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ইন্ডিয়ান গরুও আসে না। তাই কেজিপ্রতি দাম একটু বেড়েছে। জেলা বাজার কর্মকর্তা মো. সুজাত হোসেন খান বলেন, বাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করলে কোনরকম ছাড় দেয়া হবে না। মূল্য তালিকার বাইরে বিক্রি করলে বাজার নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স আন্ড ইন্ডাস্টির সভাপতি মো. লিয়াকত হোসেন লিটন বলেন, আমরা বাজার তদারকি শুরু করেছি। নির্ধারিত মূল্যের বেশি বিক্রি না করার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছি। এর বাইরে কেউ বিক্রি করলে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে। বাগেরহাটেেে জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, বাজার মূল্য তদারকি করা হচ্ছে। বাজার দরের থেকে বেশি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যাতে বিক্রি না হয় তা নিশ্চিত করা হবে। কোনো ব্যবসায়ী যদি বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status