বাংলারজমিন

খুলনায় আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

২৬ মে ২০১৮, শনিবার, ৯:৩১ পূর্বাহ্ন

তুচ্ছ কারণেই আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর পথ বেছে নিচ্ছে তরুণীরা। আর সহজ উপায় হিসেবে বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক ও হারপিক পানে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে তারা। চলতি মাসেই শুধুমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিষপানে অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছে ৫০ জন তরুণী। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন সামাজিক অবক্ষয় থেকে মানসিক বিষণ্নতায় ভুগেই তরুণীরা এমন ভয়ংকর পথ বেছে নিচ্ছে।
খুমেক হাসপাতালের বিভিন্ন সূত্রে খুলনার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী শিক্ষার্থী গত ২০শে মে সন্ধ্যার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বসে একাধিক ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আগের দিন কীটনাশক পানে মুমূর্ষু অবস্থায় মণিরামপুর ও মংলার দুই তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের স্বজনরা। ১৮ই মে সোনাডাঙ্গা গল্লামারী এলাকার বাসিন্দা পারভীন আক্তার বিষপানে আত্মহত্যা করে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্ট্রার পর্যালোচনা করে দেখা যায় চলতি মাসের শুরুর দিকে খুলনায় বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক পানে গত ২১শে মে পর্যন্ত ৫০ জন তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করে মুমূর্ষু অবস্থায় ভর্তি হয়। ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ৪ জন। তরুণীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিচার্স বাংলাদেশ-এর ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। ২০২০ সালে যা দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিবছর গলায় ফাঁস ও কীটনাশক পানে গড়ে ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করছেন। এর বাইরে আছে ঘুমের ওষুধ খাওয়া, ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়া, রেললাইনে পড়ে। তাদের হিসাবের বাইরে দেশের বড় বড় হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগে যত রোগী ভর্তি হয়, তার সর্বোচ্চ ২০ ভাগ আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া লোকজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক, প্রেমে ব্যর্থতা, পারিবারিক কলহ, অতিরিক্ত উচ্চ আকাঙ্ক্ষার কারণে তরুণ-তরুণী বেশি হারে আত্মহত্যা করছেন।
বাংলাদেশ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, আত্মহত্যার দু’টি ধরন আছে-পরিকল্পিতভাবে এবং আবেগতাড়িত হয়ে আত্মহত্যা। বাংলাদেশে অধিকাংশ আত্মহত্যার ঘটনা আবেগতাড়িত। তরুণ-তরুণীরাই বেশি আত্মহত্যা করেন। তাছাড়া নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার কারণ আমাদের আর্থ সামাজিক অবস্থা, নির্যাতন, ইভটিজিং, যৌতুক, সম্ভ্রমহানি, অবমাননা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা না থাকা ইত্যাদি।
খুলনাঞ্চলে আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক উপাধ্যক্ষ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ধীরাজ মোহন বিশ্বাস বলেন, তরুণ-তরুণীরাই বেশি আত্মহত্যা করেন। তাছাড়া নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার কারণ আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, নির্যাতন, ইভটিজিং, যৌতুক, সম্ভ্রমহানি, অবমাননা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা না থাকায় সৃষ্ট মানসিক বিষণ্নতা থেকেই তরুণ-তরুণীরা এ ভয়ংকর পথ বেছে নেয়। তবে এক্ষেত্রে তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে মানসিক সুস্থতা জরুরি। আনন্দের মধ্যে থাকা। আলোচনা করা জরুরি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status