বাংলারজমিন

পটুয়াখালীর রসুলপুর স. প্রাথমিক বিদ্যালয় এক শিক্ষক ১৫৫ শিক্ষার্থী!

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

২৬ মে ২০১৮, শনিবার, ৯:০৭ পূর্বাহ্ন

হাজিরা খাতায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৫৫ জন হলেও ছাত্রছাত্রী উপস্থিত ১২২ জন। এই শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য শিক্ষক মাত্র একজন। পটুয়াখালীর রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের (৭ই এপ্রিল) এ চিত্র। এই একজন শিক্ষক দিয়ে এ বছরের শুরু থেকেই পাঠদান চলছে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
জানাযায়, এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ৬টি পদ থাকলেও চারজন শিক্ষক পদায়ন করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন গত এক বছর সাময়িক বরখাস্ত। সহকারী শিক্ষক আরিফুর রহমানও মামলার কারণে গত চার মাস সাময়িক বরখাস্ত। অপর সহকারী শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম জানুয়ারি মাস থেকে পিটিআই প্রশিক্ষণে। তাই গোটা স্কুলের দায়িত্বে এখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাসেম।
স্কুলে শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ থেকে শুরু করে ক্লাস নেওয়া, বিস্কুট বিতরণ সবই করতে হচ্ছে একজন শিক্ষককে। সেই সঙ্গে শিক্ষা অফিসের মাসিক সভা ও বিভিন্ন সরকারি ও জাতীয় অনুষ্ঠানেও তাকে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। এ কারণে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধের পথে। শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকলেও একজন শিক্ষকের পক্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির পর্যন্ত ক্লাস নেওয়া অসম্ভব হওয়ায় শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরা হাজিরা কল করতেই সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে তার।
শনিবার বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকে ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ১৭ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৩২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ২৮ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ২৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ২০, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২১, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ১৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৬ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাবেয়া জানায়, চরপাড়া দিয়া খেয়া পার হইয়া রোজ স্কুলে যাই। কিন্তু ভালো করে ক্লাস হয় না। কোনোদিনও সব বিষয় পড়ানো হয় না। রোল ডাকে, আর বাসার পড়া দেয়। ক্লাসে বোঝানোও হয় না।
বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিকের শিশু শিক্ষার্থীরা নতুন বছর স্কুলে ভর্তি হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত অ আ ক খ ও শিখতে পারেনি অধিকাংশ শিশু। এ কারণে এ স্কুলে সন্তান ভর্তি করে বিপাকে পড়েছে অনেক অভিভাবক। স্থানীয় রমজান হোসেন জানান, এই গ্রামে একটাই স্কুল। কিন্তু শিক্ষক নেই। তাহলে আমাদের সন্তানদের কি হবে। সকাল হলেই বই-খাতা নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে শিশুরা স্কুলে আসে। কিন্তু তারা কিছুই শিখতে পারছে না। এভাবে কি একজন শিক্ষক দিয়ে একটা স্কুল চলতে পারে? তার মতো এ প্রশ্ন রসুলপুর গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের। একাধিক অভিভাবক ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, এভাবে আর বেশি দিন চললে তারা তাদের সন্তানকে অন্য স্কুলে নিয়ে ভর্তি করবেন। বছরের তিন মাস শেষ চার মাসে পড়লো। এখনো অনেক শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের প্রথম-দ্বিতীয় অধ্যায় শেষ করতে পারেনি। কিভাবে তারা পরীক্ষা দেবে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কাসেম বলেন, তিনি একা আর কি করবেন। তারপরও চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস নিতে। এ বছর জানুয়ারি থেকে তিনি একদিনও সরকারি ছুটিও নিতে পারেননি শুধু একার ওপর গোটা স্কুলের দায়িত্বের কারণে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া, বিস্কুট বিতরণ, হোমওয়ার্ক দেয়া ও নেওয়া ছাড়াও সরকারি ও জাতীয় দিবসও তাকে একাই পালন করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিয়ে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দিন মোল্লা জানান, দু’জন শিক্ষক বরখাস্ত থাকায় শিক্ষক সংকটের কথা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক পদায়ন হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে বলে জানান। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিলাল সিকদার বলেন, তিনি এ বিষয়টি অবগত আছেন। তবে অগামী দু-একদিনের মধ্যে ডেপুটেশনে শিক্ষক দিয়ে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status