এক্সক্লুসিভ

হরমোনজনিত রোগী প্রায় ৫ কোটি

শহরের ২০ থেকে ৩০ ভাগ গর্ভবতী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ মে ২০১৮, শনিবার, ৯:০৭ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে সম্ভাব্য থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) নামক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সংগঠন। সংগঠনটি বলছে, প্রায় তিন কোটি রোগীই জানে না তাদের এই সমস্যা রয়েছে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে বিইএস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে ছয়টি মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। কিন্তু উন্নত বিশ্বে সাতটি মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সপ্তমটি হচ্ছে থাইরয়েড হরমোন বিষয়ক তথ্য অধিকার। থাইরয়েডজনিত রোগ বিশ্বের ১ নম্বর রোগ। সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা বলেন, তাই এই রোগ প্রতিরোধ কিংবা চিকিৎসার ক্ষেত্রে জনসচেতনতাই মুখ্য। থাইরয়েড হরমোন কম বা বেশি নিঃসৃত হওয়া উভয়ই রোগের সৃষ্টি করে। তাই বিয়ের আগে কিংবা গর্ভধারণের আগে নারীদের অবশ্যই থাইরয়েড পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। এ রোগের সম্ভাবনা থাকলে যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে তারপর গর্ভধারণ করা উচিত। নাইলে বাচ্চাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ হরমোনের তারতম্যের ফলে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, হঠাত করে শরীর মোটা ও চিকন হওয়া, মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হার্টের সমস্যা, চোখ ভয়ঙ্কর আকারে বড় হয়ে যাওয়া, বন্ধ্যাত্ব, এমনকি ক্যানসারের সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণত একজন পুরুষের বিপরীতে ১০ জন নারী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে  চিকিৎসকরা বলেন, সব বয়সের মানুষের স্ক্রিনিং, আয়োডিনের অভাব, ভেজাল খাদ্য ও আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করা এ রোগের প্রধান প্রতিরোধক। এ ছাড়া সরকার খুব সহজে থাইরয়েডের বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিং চালু করতে পারে। পাশাপাশি বাজারের লবণগুলোর আয়োডিনের মান নিশ্চিত করতে পারে। আমাদের গবেষণা অনুসারে বাজারের লবণে সঠিক আয়োডিনের মাত্রা নেই। এ ছাড়া প্রতিটি বাচ্চার জন্মগ্রহণের পর বাধ্যতামূলকভাবে থাইরয়েড পরীক্ষা নিশ্চিত করা উচিত। কেননা বিকলাঙ্গ বাচ্চা আমাদের কারও কাম্য নয়। আর বাবার এ সমস্যা থাকলে কোনো ঝুঁকি নেই বরং মাদের ক্ষেত্রে রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে শহরের ২০ থেকে ৩০ ভাগ গর্ভবতী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। আর গ্রামের পরিস্থিতির কোনো রেকর্ড নেই। তাই ধারণা করা যায়, সেখানকার অবস্থা আরো করুণ। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এই রোগের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। দেশে আয়োডিনের ডোজ মাত্র ৩০০ টাকা আর সিঙ্গাপুরে এ খরচ ৫০ হাজার টাকা। আর অন্যান্য দেশে আরো বেশি। এদিকে এই রোগের পরীক্ষা করাতে দেশের সরকারি হাসপাতালে খরচ মাত্র ২৫০ টাকা আর বেসরকারিতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এ ছাড়া দেশের সরকারি বেসরকারি সব হাসপাতালে হরমোন বিষয়ক চিকিৎসক রয়েছেন। পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগের ডাক্তাররা চিকিৎসা সম্পন্ন করতে পারেন। তবে, আমাদের দেশের চিকিৎসকদের প্র্যাকটিসের অভাবে তারাও সঠিকভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারেন না। এক্ষেত্রে সচেতনতামূলক কার্যক্রমে চিকিৎসকদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিইএসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. হাফিজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিম প্রমুখ।


   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status