এক্সক্লুসিভ

ভারতীয় শাড়ির আধিপত্য টিভি সিরিয়ালের প্রভাব নেই

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ মে ২০১৮, শনিবার, ৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর শপিংমল, মার্কেট, ফুটপাতসহ সবখানে জমে উঠেছে কেনাকাটা। কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, এলিফ্যান্ট রোড, গাউছিয়া, ফার্মগেটসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
দুপুরে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা রিহানা বেগম জানান, পুরান ঢাকা থেকে পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে এসছি। একসঙ্গে একই দিনে সবার কাপড় কেনা সম্ভব নয়। তাই আজ মেয়ে আর বিয়ানকে নিয়ে কেনাকাটা একটু এগিয়ে রাখছি।
নিউমার্কেট এলাকায় ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে জননী শাড়ি বিতানের বিক্রেতা মো. আসিফ আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, আমাদের দোকানে সব শাড়িই ভারতীয় কালেকশান। এরমধ্যে রয়েছে কাতান, তসর, বম্বে বুটিকসসহ একাধিক শাড়ি। এসবের ভারতের কিছু উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিল রেখে পুরস্কার পাওয়া কিছু শাড়ির নামকরন করা হয়েছে। ইতালিয়ান ক্রেফ শাড়িতে এক্সপেনসিভ মুগাসুতায় কাজ করা শাড়ি। কন্যাকুমারি নামের সিফন শাড়িতে হ্যান্ডমেইড স্টাইলিস্ট ডিজাইনের শাড়ি রয়েছে। তসরের উপর ক্যাটওয়াটের কাজ, এটাকে বলা হয় জয়পুর স্পেশাল ব্র্যান্ড। এসব শাড়ির মূল্য ২ হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার পর্যন্ত। ১০ রোজা থেকে বিকিকিনি জমে উঠে যেটা ২৮ রোজা পর্যন্ত চলতে থাকে। তবে প্রতিবছরের তুলনায় এ বছর ক্রেতাদের সংখ্যা অনেক কম।
নিউমার্কেটের সিনথিয়া শাড়িজ-এর বিক্রেতা শাওন জানিয়েছেন, এ বছর ইন্ডিয়ান শাড়ি কালেকশান বেশি। তবে প্রতিবছরের মতো এবছর কোন টিভি সিরিয়ালের নামের সঙ্গে মিল রেখে শাড়ির নামকরণ করা হয়নি। সত্যি বলতে এই নামকরণ মূলত দোকনদার বা যারা পণ্য সরবরাহ করে থাকে তারা নিজেরাই ভারতের জনপ্রিয় টিভি সিরিয়ালের কিছু উল্লেখযোগ্য চরিত্রের নাম ব্যবহার করে থাকে। ১০ রোজা থেকে বেচাকেনা শুরু হয় যেটা ২৯ রোজ পর্যন্ত চলতে থাকে বলে জানান তিনি। মায়ের দোয়া শাড়ি হাউজের বিক্রেতা মো. ইউসুফ বলেন, এবছর ঈদের বাজার মন্দার থেকেও বেশি খারাপ। ক্রেতা নাই বললেই চলে। সকাল থেকে একটি শাড়িও এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়নি। নিজ চোখেই তো দেখতে পাচ্ছেন নরমাল বন্ধের দিনেও এর থেকে ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকে।    
আধুনিকা জামদানি ফ্যাশনের বিক্রেতা মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন, আমাদের দোকানে সব ঢাকাই জামদানি শাড়ি। যার মূল্য ৮৫০ থেকে শুরু করে ৮০-৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ঢাকাই জামদানি শাড়ির এতো বেশি মূল্য কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্মান, সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য সব মিলিয়ে ঢাকাই জামদানি বিশ্ববাজারে প্রথম স্থানে রয়েছে। এছাড়া এই শাড়ির বিশেষত্ব হচ্ছে- সাধারণ জামদানি তৈরি করতে ১০-১৫ দিন সময় লাগে। কিন্তু দামি জামদানি শাড়ি তৈরি করতে প্রায় আড়াই থেকে তিন মাস সময় লাগে। সময়, হাতের কাজ, শ্রমিকদের পারিশ্রমিক সব মিলিয়ে ঢাকাই জামদানির শাড়ির দাম অন্যান্য শাড়ির তুলনায় একটু বেশিই হয়ে থাকে।  বেবি শাড়িজ স্টোরের বিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, বর্তমানে ভারতীয় কাবেরী শাড়ির চাহিদা বেশি। এছাড়া রয়েছে সিল্ক, হাফ সিল্ক। যার মূল্য ৩,৫০০ টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অভিযোগের সুরে তিনি মানবজমিন-এর প্রতিবেদককে বলেন, এ বছর তেমন কোনো বিক্রি-বাট্টা নেই বললেই চলে। অন্যান্য ঈদে আজকে দোকানে এতোটাই ভিড় থাকতো যে আপনার সঙ্গে কথা বলারই সময় পেতাম না। ‘অহন দেহেন মাছি মারতাছি’।
নিউমার্কেট সংলগ্ন নূর ম্যানশন শপিং সেন্টারের ফয়সাল টেক্সটাইলের বিক্রেতা আশরাফুল জানান, এ বছর বাংলাদেশি সুতি থ্রি-পিসের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ইন্ডিয়ান থ্রি-পিসের সংখ্যা খুবই কম। শুধুমাত্র ইন্ডিয়ান এলিজা থ্রি-পিসের চাহিদা একটু বেশি। এ বছর ভারতীয় নাটকের চরিত্রের সঙ্গে মিল রেখে কোনো পোশাক বাজারে এসেছে কিনা জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, ভারতের বাজারের ডিমান্ডের সঙ্গে মিল রেখেই আমাদের দেশের বাজারের পোশাকের ডিমান্ড নির্ভর করে। গত বছর ভারতের বাজারে জরজেটের শাড়ির চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি যার প্রভাব আমাদের দেশের বাজারেও পড়েছিল। এ বছর ভারতে সুতি থ্রি-পিস বেশি চলছে বিধায় আমাদের দেশীয় মার্কেটেও সুতিটাই বেশি চলছে। বৃষ্টির কারণে কাস্টমার কম থাকলেও শবেবরাতের পর থেকেই আমাদের বেচাকেনা শুরু হয়েছে, যেটা চলবে চাঁদ রাত পর্যন্ত।  রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ক্রেতাদের তেমন একটা ভিড় নেই। মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, এখনো সেভাবে বিক্রি শুরু হয়নি। অনেকে আসছেন জিনিস পছন্দ করতে। আবার অনেকে এসেছেন জিনিসপত্রের দাম দেখতে। বসুন্ধরা শপিং মলে কেনাকাটা করতে আসা রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মনিকা মনি বলেন, নতুন বিয়ে করেছি।

ঈদের ছুটিতে ১৬-২০ রোজার পরেই গ্রামের বাড়িতে চলে যাব। তাই খুব দ্রুত কিছু কেনাকাটা করতে হচ্ছে। প্রথমে শ্বশুর বাড়ির লোকদের কেনাকাটা শেষ করেছি এখন বাবা মা ভাই বোনদের জন্য কেনাকাটা করছি। জিনিসপত্রের দামের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বছর জামাকাপড়ের দাম তুলনামূলক একটু বেশি। দাম প্রথমে একটু বেশি চাইলেও দামাদামি করলে কিছুটা কমে পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে ফার্মগেট এলাকার ফুটপাতগুলোতে ছোটখাটো দোকান বা ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে নিউমার্কেটের ফুটপাত পুরোটাই হকার শূন্য। এসব ফুটপাতের কিছু হকার অস্থায়ীভাবে ইডেন মহিলা কলেজের সামনে দোকানে পশরা সাজিয়েছে। যেখানে গজ কাপড়, মেয়েদের প্রয়োজনীয় গার্মেন্টস, অর্নামেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান রয়েছে। যার অধিকাংশ কাস্টমার হচ্ছে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রীরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status