শেষের পাতা

খালেদার জামিন শুনানি মুলতবি

স্টাফ রিপোর্টার

২৫ মে ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লায় হত্যা মামলায় জামিন শুনানি শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে কুমিল্লায় বিস্ফোরক আইনে মামলা এবং নড়াইলে মানহানির মামলায় রোববার শুনানি হবে। বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি হয়। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা দুটি মামলা এবং নড়াইলে মানহানির অভিযোগে করা একটি মামলায় জামিন পেতে ২০শে মে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে  আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। পরে দুটি মামলায় (হত্যা ও মানহানি) জামিনের আবেদন শুনানির জন্য সোমবারের কার্য তালিকায় আসে। মঙ্গলবার শুনানি শুরু হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানি করেন। গতকাল রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করেন। এদিকে গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে সময়ক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়ার  আইনজীবীরা। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, এখানে যেহেতু আইনের প্রশ্ন আছে তাই বিভিন্ন মামলার নজির উল্লেখ করে তাকে বক্তব্য দিতে হচ্ছে। গতকাল আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সানাউল্লাহ মিয়া, আমিনুল ইসলাম, কায়সার কামাল, বদরুদ্দোজা বাদল প্রমুখ।  

গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দুপুর সোয়া ২টায় শুনানি শুরু করেন। এ সংক্রান্ত মামলার বাংলাদেশ, ভারতের উচ্চ আদালতের বিভিন্ন মামলার রায়ের নজির উল্লেখ করেন তিনি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যেখানে এই মামলায় (কুমিল্লায় হত্যা মামলা) জামিনের আবেদন জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন আছে, সেখানে হাইকোর্টে জামিন দেয়া সমীচীন হবে না। শুনানির একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য দীর্ঘায়িত হচ্ছে- এমন অভিযোগ করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা ভেবেছিলাম অ্যাটর্নি জেনারেল যেহেতু রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা তিনি আদালতকে সহযোগিতা করবেন। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই ওইসব সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এরপরও এই রায়ের কপি পড়ার প্রয়োজন আছে কি?  

আদালতের কার্যক্রম শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, অতীতে উচ্চ আদালতের উদাহরণ রয়েছে যে, যখন নিম্ন আদালত বেইল পিটিশন শুনতে বিলম্ব করেন বা বিচারাধীন রাখেন কিংবা আদেশ দেন না, সেই ক্ষেত্রে উচ্চ আদালত হস্তক্ষেপ করেন। আমরা সেই যুক্তি আদালতে উপস্থাপন করেছি এবং এ বিষয়ে আপিল বিভাগে সর্বশেষ যে সিদ্ধান্ত সেটিও আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি। অ্যাটর্নি জেনারেল কালক্ষেপণ করছেন- এমন অভিযোগ করে জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা ভেবেছিলাম গতকাল (বুধবার) তার আর্গুমেন্টের পরে আর কোনো আর্গুমেন্ট তিনি করবেন না। কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ আদালতে যেসব নজির উপস্থাপন করেছিলাম অ্যাটর্নি জেনারেল সেগুলোই পড়তে শুরু করলেন। অর্থাৎ তিনি এভাবে সময়ক্ষেপণ করতে চাচ্ছেন। জয়নুল আবেদীন আরো বলেন, আদালত যাতে যথাযথভাবে জুডিশিয়াল দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেজন্য রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে সহযোগিতা করবেন। কিন্তু সেটা তিনি না করে মনে হচ্ছে তিনি একটি দলের দায়িত্ব পালন করছেন। এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। তিনি বলেন, আদালত সবকিছু শুনে আগামী রোববার তিনটি মামলারই আদেশের জন্য রেখেছেন।

জয়নুল আবেদীন বলেন, এইসব মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই মামলাগুলোর কোনো মেরিট নেই। উচ্চ আদালতের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা অতীতেও ছিল এখনো আছে। আমরা মনে করি খালেদা জিয়া উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসবেন।

বিকালে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, যেখানে এই মামলায় জামিনের আবেদনের জন্য জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন আছে সেখানে হাইকোর্ট ডিভিশনে কোনো আদেশ দেয়া সঠিক হবে না। তিনি বলেন, এই মামলার (কুমিল্লার হত্যা মামলা) প্রেক্ষিতে আজকে শুনানি শেষ হয়েছে। আরো যে দুটি মামলা রয়েছে, একটি গাড়ি পোড়ানো ও একটি মানহানিসহ তিনটি মামলাই আগামী রোববার তালিকায় থাকবে।  এগুলো শুনানির তালিকায় থাকবে আমি যতটুকু জেনেছি এবং অন্য দুটি  মামলার (গাড়ি পোড়ানো ও মানহানি) বক্তব্য শুনে আদালত আদেশ দেবেন।

তিনি বলেন, দুটি মামলার শুনানি এখনো শুরুই হয়নি। আদালত সবক’টি মামলার আদেশ একসঙ্গে দেবেন। এজন্যই রোববারের তালিকায় আসার কথা বলা হয়েছে। এই দুটো মামলার শুনানির পর আদালত যদি একসঙ্গে আদেশ দিতে চান তাহলে ওই দুটো মামলা শুনতে হবে। তবে, রোববারেই আদেশ দেয়া হবে- এটি বলা ঠিক হবে না। কারণ আদেশ দেয়া না দেয়া আদালতের ব্যাপার। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের অভিযোগের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) বুঝতে চাচ্ছেন না। তারা সমস্ত জিনিসটাকে আইনি ব্যাপারটাকে বাদ দিয়ে শুধু খালেদা জিয়ার জামিনের ব্যাপারটা নিয়েই মাথা ঘামাচ্ছেন। এখানে একটা বড় প্রশ্ন হলো- এটি ভবিষ্যতে সব মামলার ক্ষেত্রেই দাঁড়াবে যে, নিম্ন আদালতে একটি জামিনের দরখাস্ত বিচারাধীন থাকা অবস্থায় হাইকোর্টে মুভ করা যাবে কিনা? এটি আইনগত প্রশ্ন এবং আইনগত প্রশ্নে যদি আমি আদালতকে সঠিকভাবে অ্যাসিস্ট না করি তাহলে তো এরপর সবাই সোজা হাইকোর্টে চলে আসবে। তিনি বলেন, আইনের দৃষ্টিতে তো ধনী-গরিব সবাই সমান। আগামীকাল যদি একজন হত্যা মামলার আসামি, ইয়াবা ব্যবসায়ী নিম্ন আদালতে বেইল না চেয়ে সরাসরি হাইকোর্টে চলে আসে, তখন তাকে কীভাবে ঠেকানো হবে? অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিহিত যে, নিম্ন আদালতে বিচারাধীন থাকাবস্থায় হাইকোর্টে একই বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়া ঠিক হবে কিনা? আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে বলতে চাই, বিএনপির আইনজীবীরা নিশ্চয়ই এর গুরুত্ব বুঝতে সমর্থ হচ্ছেন না। যদি সমর্থ হতেন তাহলে এ ধরনের মন্তব্য করতেন না।    

গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে ৫ বছর এবং অন্য আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। রায়ের পর খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে পুরান ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। গত ১২ই মার্চ হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন। গত ১৭ই মে আপিল বিভাগ এক রায়ে খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখেন। পাশাপাশি সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানি আগামী ৩১শে জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। তবে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিন বহাল থাকলেও অন্য মামলায় খালেদা জিয়াকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোয় তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না বলে জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status