প্রথম পাতা

ওআইসিতে স্থায়ী পর্যবেক্ষক দেয়ার চিন্তা

মিজানুর রহমান

২৪ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

ওআইসির সহকারী মহাসচিব নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি নতুন করে পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ। অবশ্য এ পর্যালোচনাকে সময়ের দাবি বলছেন অনেকে। তাদের মতে, ভোটে হারার পর বিষয়টি সর্ব মহলে আরো বেশি অনুধাবিত হয়েছে। আর এ জন্যই ৫৭ মুসলিম রাষ্ট্রের ওই জোটের জেদ্দাস্থ হেড কোয়ার্টারে বাংলাদেশের একজন স্থায়ী পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এতদিন ধরে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমেই ওআইসি সদর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতই অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ওআইসিতে বাংলাদেশের স্থায়ী পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

সরকারের নীতি নির্ধারণী একটি সূত্র সমপ্রতি মানবজমিনকে জানিয়েছে, জাতিসংঘের আদলে ওআইসির সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে জেদ্দায় স্বতন্ত্র স্থায়ী পর্যবেক্ষক নিয়োগের এ চিন্তা। এ বিষয়ে অনেক দিন ধরে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চললেও সামপ্রতিক নানা ঘটনায় সেই নিয়োগ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দ্রুত এটি কার্যকর হতে যাচ্ছে। তবে ওই পর্যবেক্ষকের পদমর্যাদা কি হবে, তাকে কি রাষ্ট্রদূতের মর্যাদা দিয়ে পাঠানো হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সূত্র মতে, কোনো রকম ঘটনা-দুর্ঘটনা ছাড়া ওআইসির ৪৫তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের (সিএফএম) সফল আয়োজনে আত্মতুষ্টি থাকলেও নির্বাচনের হার ‘ঢাকাইয়া কূটনীতি’কে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। দেড় যুগের মধ্যে ওআইসির সেক্রেটারিয়েটে দু’বার প্রার্থিতা এবং দুটোতেই শোচনীয় পরাজয় মুসলিম রাষ্ট্রের প্রধান ওই জোটে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছে পেশাদারদের। বিএনপির আমলে মহাসচিব পদে আর আওয়ামী লীগ আমলে সহকারী মহাসচিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পদে হারের ঘটনায় রাজনীতি, ভূ-রাজনীতি, কূটনীতি এবং কূটনীতিকদের পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি বাস্তবায়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত সরকারের প্রতিনিধিরাও বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না। মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকদের দীর্ঘ এক পর্যালোচনার বড় অংশজুড়ে ছিল ওআইসিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সমপ্রতি যে শুনানি হয়েছে এবং তাতে যেসব উদ্বেগ ও পরামর্শ এসেছে বৈঠকে তা নিয়েও কথা হয়েছে।

ইউনিভার্সেল পিরিওডিক রিভিউ’র আওতায় দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বসভার মূল্যায়ন বিশেষত ওই শুনানি নিয়ে যেসব প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে তার ব্যাখ্যা ও জবাব দিতে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ওই ব্রিফিং কবে-কোন ফর্মে হবে তা পররাষ্ট্র সচিবের বিবেচনায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সেগুনবাগিচা সূত্র জানিয়েছে- বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইও-উইংয়ের তরফে সিএফএম-এর মতো মেগা ইভেন্ট আয়োজন এবং এ নিয়ে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্জন তুলে ধরা হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই পর্যালোচনা বৈঠকে অত্যন্ত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। কর্মকর্তারা মনে করেন- বাংলাদেশের আয়োজনে সিএফএম’র সফল সমাপ্তি মুসলিম বিশ্ব তথা সারা দুনিয়ায় দেশের মর্যাদা বাড়িয়েছে। আয়োজক রাষ্ট্র হিসেবে সহকারী মহাসচিবের পদে নির্বাচনের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের কোনো ভুল ছিল না।

প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রেও আগাগোড়ায় সতর্ক ছিল ঢাকা। এশিয়া গ্রুপের ১৮ রাষ্ট্রের মধ্যকার ওই নির্বাচনে হোস্ট কান্ট্রি হওয়াসহ নানা কারণে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার আশা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু কাজাখ ও তুর্কি প্রেসিডেন্টের যৌথ প্রচারণায় শুধু বাংলাদেশ নয়, কুয়েতসহ অনেকের আশায় গুড়ে বালি হয়েছে। পেশাদারদের মতে, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতাকে ভালোভাবে নেয়নি তুরস্ক। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তুরস্কের অনেক প্রস্তাবে তাৎক্ষণিক সায় না দেয়ায়ও আঙ্কারা রুষ্ট হয়েছে। সৌদি প্রশ্নে ইরানেরও একটি অবস্থান রয়েছে। যদিও সহকারী মহাসচিব পদের নির্বাচনে ইসলামাবাদের ভূমিকা নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়েই গেছে! সেগুনবাগিচার অনেকে মনে করেন- নানা কারণে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক পর্যালোচনার বিষয়টি সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে আরব, গালফ এবং নন আরব মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট এবং এ সংক্রান্ত জটিল রসায়নের বিষয়টি উন্নয়নশীল মডারেট মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশের কূটনীতিকদের আরো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। তবে অনেকে মনে করেন- বাহ্যিকভাবে যাই মনে হোক না কেন- মুসলিম বিশ্বের রাজনীতিতে বাংলাদেশ রাইট ট্র্যাকেই রয়েছে।

সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী জোটে বাংলাদেশের যোগদানও সময়োচিত সিদ্ধান্ত। তবে মুসলিম দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন সংকট প্রশ্নে বাংলাদেশ বরাবরই ব্যালেন্স অবস্থানে রয়েছে। ওআইসি’র ঢাকা সম্মেলন প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এক কূটনীতিক রোববার মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন- সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক এবং তাদের নিজ নিজ বলয়ে থাকা দেশগুলো মুসলিম রাষ্ট্রের জোটের বৃহত্তর স্বার্থ, প্রস্তাব-সিদ্ধান্ত বিশেষত প্রতিনিধি নির্বাচনে নিয়ামক শক্তি হিসেবে রয়েছে। বাংলাদেশের আয়োজনে সদ্য সমাপ্ত ৪৫তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ওআইসি সম্মেলন (সিএফএম)-এর এজেন্ডা চূড়ান্তকরণ থেকে শুরু করে সেক্রেটারিয়েট নির্বাচন এবং সবশেষ ঢাকা ঘোষণায় প্রভাবশালী ওই ৩ দেশ ও তাদের মিত্রদের গ্রুপিং-লবিং এবং প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টার বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সম্মেলনের আয়োজনের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত ভারসাম্য বজায় রেখেছে। সৌদির ভিন্ন অবস্থান থাকলেও ঢাকায় ইরানের প্রতিনিধিরা সম-মর্যাদা পেয়েছেন। পাকিস্তান প্রশ্নে বাংলাদেশের গণমানুষের মধ্যে রিজারভেশন থাকলেও দেশটির পররাষ্ট্র সচিবসহ অন্য প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফরে মর্যাদা বা আতিথেয়তার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি ছিল না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status