প্রথম পাতা

মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান

‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত আরো ৮

বাংলারজমিন ডেস্ক

২৪ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

মাদকবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আরো আট ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত আট দিনে অন্তত ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে যাদের সবাই মাদক ব্যবসায়ী বলে র‌্যাব ও পুলিশ দাবি করেছে। সারা দেশে চলা অভিযানে সহস্রাধিক গ্রেপ্তার ও বিপুল মাদকদ্রব্য উদ্ধারের তথ্য দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল ফেনী, কুষ্টিয়া, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও জামালপুরে পৃথক ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যু হয়।

ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফারুক (৩৫) নিহত হয়েছে। র‌্যাব ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, পাঁচ রাউন্ড কার্তুজ ও ২২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ফেনী শহরের দাউদপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফারুক চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এলাকার অলি আহম্মেদের ছেলে। তার নামে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন থানায় মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। র‌্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার শাফায়াত জামিল ফাহিম জানান, চট্টগ্রাম থেকে মাদক বহন করে ঢাকা যাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের ফেনীর দাউদপুর কাঁচা বাজার এলাকায় র‌্যাব সদস্যরা চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি তল্লাশি করে। এ সময় একটি প্রাইভেটকার যোগে মাদক ব্যবসায়ীরা সড়ক অতিক্রম করার সময় র‌্যাব তাদের গতিরোধ করে। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে র‌্যাবও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলে মো. ফারুক গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ফারুককে উদ্ধার করে ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুমারখালীতে পুলিশের সাথে পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ফটিক ওরফে গাফ্‌ফার (৩৭) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এ সময় পুলিশের এক এসআই সহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে উপজেলার লাহিনী পাড়ায় গড়াই নদীর উপরস্থ ব্রিজের নিচে এই বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে ৭শ পিস ইয়াবা, আধা কেজি গাঁজা এবং একটি শুটার গান উদ্ধার করেছে পুলিশ। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে একদল মাদক ব্যবসায়ী উপজেলার লাহিনী পাড়া গড়াই নদীর ব্রিজের নিচে অবস্থান করছে। সংবাদ পেয়ে কুমারখালী থানা পুলিশ সেখানে অভিযানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শীর্ষ সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ী ফটিক ওরফে গাফ্‌ফার গুলিবিদ্ধ হয়।

উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে গতকাল বুধবার ভোরে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাজু নিহত হয়েছে। এ সময় দুই জন র‌্যাব সদস্য আহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে গাঁজাসহ বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১৩। র‌্যাব জানায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার বিশ্রামগাছী গ্রামে অভিযানে নামে র‌্যাব। এ সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাবের উপর গুলি চালালে র‌্যাব পাল্টা গুলি চালায়। এতে র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হয়। ঘটনাস্থলে মাদকদ্রব্য ও গোলাবরুদসহ রাজুকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পলাশবাড়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। নিহত রাজু মিয়া পলাশবাড়ী উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের রাইগ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে।

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পারুয়া গ্রামের মাদক ব্যাবসায়ী আফতাফুল কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। পুলিশের দাবি তার নামে ১৫টি মাদক মামলাসহ ২০টি মামলা চলমান। বালিয়াডাঙ্গী থানার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার সময় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পারুয়া গ্রামে মাদক উদ্ধারে যায় পুলিশ। এ সময় ওই গ্রামের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ভলসা মোহাম্মদের পুত্র আপতাফুল (৩৮) কে আটক করে। তাকে আটকের পর তার দেখানো মতো ১০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে পুলিশ। পরে থানায় নিয়ে আসা হলে তার তথ্যমতে পীরগঞ্জে আরো মাদক উদ্ধারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথিমধ্যে বুধবার ভোর ৩টা ৫০ মিনিটের সময় ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ সড়কের পীরগঞ্জ ভাতারমাড়ী ফার্মের কাছাকাছি গেলে তাকে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে এবং পুলিশের উপর গুলি চালায় তার সহযোগীরা। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে আফতাফুল গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তারা পালিয়ে যায়। এসময় বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ এবিএম সাজেদুল ইসলাম ও সাব ইন্সপেক্টর খায়রুজ্জামান আহত হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী লিটন শেখ (৪৫)। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ৩ রাউন্ড গুলি, ৫শ পিস ইয়াবা, ২ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি এ ঘটনায় তাদের ৩ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ভেড়ামারা উপজেলার হাওয়াখালী মাঠের মধ্যে একটি ইটভাটার কাছে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম বন্দুকযুদ্ধের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মাদকদ্রব্য ক্রয় বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে একদল মাদক ব্যবসায়ী রাত ২টার দিকে উপজেলার হাওয়াখালী মাঠের মধ্যে যায়। এমন গোপন সংবাদ পেয়ে ভেড়ামারা থানার এস আই আশরাফুল ইসলাম পুলিশের একটি টহল দল নিয়ে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে বন্দুকযুদ্ধে একজন গুলিবিদ্ধ হলে তাকে উদ্ধার করে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গত সোমবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় লিটন। পরদিন সকালে তার মা রেহানা খাতুন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রাতে সেহরীর কিছু পূর্বে বাড়িতে ধুপধাপ শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। পরে ঘরের দরজা খুলে ছেলে লিটন কে ঘরে দেখতে না পেয়ে পরদিন সকালে র‌্যাব কার্যালয়, ডিবি সহ অন্যান্য স্থানে তার স্বজনেরা খোঁজ খবর করে কোন প্রকার সংবাদ জানতে পারেন নি।

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, ধরলা নদীর চর শিবেরকুটিতে গভীর রাতে লালমনিরহাট থানা পুলিশের গুলিতে ফুলবাড়ীর এক মাদক চোরাকারবারি নিহত হয়েছে। নিহত ওই মাদক চোরাকারবারির নাম নুর আলম এশার (৩৭)। সে ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের জকুরটল এলাকার মৃত এন্তাজ আলীর ছেলে। বুধবার ভোরে ধরলা নদীর ওপারে লালমনিরহাট সদর থানাধীন চর শিবেরকুটি খেয়া ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এশারের বিরুদ্ধে প্রায় ৪টি মাদক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে জানান, রংপুরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শাহিন নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এক বস্তা ফেনসিডিল ও একটি রিভলবার উদ্ধার করেছে। কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোক্তারুল ইসলাম জানান, বুধবার ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর হাজিরহাট এলাকায় অভিযান চালালে পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী শাহীনের বন্দুক যুদ্ধ হয়। এসময় পুলিশ গুলি ছুড়লে শাহিন নিহত হয়। আহত হয় কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি রিভলবার ও একটি বস্তায় ১২৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। শাহিনের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক মাদকব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। জামালপুরের পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন জানান, বুধবার ভোর পৌনে তিনটার দিকে জামালপুর শহরতলির ছনকান্দা মাদরাসা বালুঘাট এলাকায় একদল মাদক ব্যবসায়ী মাদক ক্রয় বিক্রয় করছে এমন খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি ছুড়ে। পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে অজ্ঞাত এক মাদক ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হয়। এ সময় অন্য মাদক ব্যবসায়ীরা ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে পালিয়ে যায়। হাসাপাতালে নেয়ার পর ডাক্তাররা ওই মাদক ব্যবসায়ীকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে নিহত মোশারফ হোসেন বিদ্যুতের স্ত্রী শিল্পী বেগম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ‘ক্রসফায়ারের নামে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে’। তিনি বলেন, সোমবার রাত ১টার দিকে পুলিশ তার স্বামীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার খোঁজ মিলছিল না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status