প্রথম পাতা

ট্রাম্প প্রশাসনের রাডারে ঢাকার মার্কিন নীতি

নিজস্ব প্রতিনিধি

২৩ মে ২০১৮, বুধবার, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য বাংলাদেশকে সাহায্য দিতে গিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের মনে পড়ছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের বিরুদ্ধে গোটা মুসলিম জাহানকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আরো মনে পড়েছে, গত বছর ট্রাম্প প্রশাসন শুধু স্বাস্থ্যখাতেই বাংলাদেশকে প্রদেয় সাহায্য থেকে ৩৩ মিলিয়ন ডলার কমিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেছিল। আর ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে মাত্র ১২ শতাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনুকূলে  ভোট দিয়েছে। এই একটি তথ্যই বাংলাদেশে ট্রাম্প প্রশাসনের সাহায্য কাটছাঁট করার জন্য যথেষ্ট।
গতকাল ওয়াশিংটনভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় থিঙ্কট্যাঙ্ক আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ওই তথ্য ও পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করা হয়েছে।  জেসিকা ত্রিস্কো দারদেন এবং  কেভিন রেগ্যানের যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে ইউএসএইডের প্রশাসক মার্ক গ্রিন বাংলাদেশ সফরে গিয়ে রোহিঙ্গা এবং এই সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদের জন্য অতিরিক্ত ৪৪ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য ঘোষণা করেছেন। এর ফলে এই খাতে মোট মার্কিন সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়ালো ৩শ’ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশকে দেয়া এই অতিরিক্ত সাহায্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট নীতিকে খাটো করছে কিনা? ট্রাম্পের বিদেশনীতির সারকথা হলো- যারা আমেরিকার পাশে দাঁড়াবে, আমেরিকাও তার পাশে দাঁড়াবে।  
ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হিলি সমপ্রতি ট্রাম্পের জন্য জাতিসংঘে ভোটিং প্যাটার্নে সাহায্যের বিনিময়ে ভোট পাওয়ার নীতি বজায় রাখতে চাইছেন। এর অর্থ সাহায্য শর্তযুক্ত করা।  যদিও এরকম মার্কিন নীতি খুব নতুন কিছু নয়, যাকে সর্বদাই ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেঞ্জ  মোকাবিলার কারণ হিসেবে দেখা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একই নীতি আঁকড়ে ধরা একটি রুঢ় বাস্তবতা হিসেবে হাজির হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ একটি অনন্য অবস্থা মোকাবিলা করছে।  দেশটির জনসংখ্যা আমেরিকার অর্ধেক। কিন্তু তারা সবাই আইওয়া অঙ্গরাজ্যের মতো একটি আয়তনের মধ্যে বসবাস করে। এই দেশটি ভয়ানকভাবে দুর্যোগপ্রবণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভঙ্গুর। ৭ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু ব্যবস্থাপনার সামর্থ্য দেশটি রাখে না। উপরন্তু  দেশটির প্রবৃদ্ধি সমপ্রতি কিছু উপরের দিকে গেলেও বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত বিশ্বের ৫০টি দরিদ্রতম  দেশের কাতারেই রয়ে গেছে। বাংলাদেশের প্রাথমিক ত্রাণ বিতরণ প্রশংসনীয় কিন্তু তৃণমূলের অবস্থা  টেকসই নয়। আর বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে আসায় বন্যা এবং মহামারির প্রকোপ আসন্ন। এর বাইরে রয়েছে নিরাপত্তা ইস্যু। আল কায়েদা পরিস্থিতি থেকে দাও মারার জন্য ওত পেতে আছে।
রিপোর্টে সতর্ক করা হয় যে, শুধু যদি রোহিঙ্গাদের ওপর মনোযোগ দেয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তা বর্ধিত সহিংসতা বয়ে আনতে পারে। যদি স্থানীয়রা ধরে নেন যে, বহিরাগতদের কারণে তাদের চাহিদা উপেক্ষিত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশি বিশেষ করে স্বাগতিক সমপ্রদায়কে অব্যাহতভাবে উন্নয়ন সহায়তা দান অপরিহার্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ হুমকি মোকাবিলায় সামর্থ্য বৃদ্ধি করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা দিতে পারে। কিন্তু সেজন্য তাকে সাহায্য শুধুই বন্ধুর জন্যই তার এই নীতিতে পরিবর্তন আনার কথা ভাবতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status