প্রথম পাতা

খুলনা ‘শান্তিপূর্ণ কারচুপির’ নির্বাচনের নতুন মডেল

স্টাফ রিপোর্টার

২৩ মে ২০১৮, বুধবার, ৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

দেশে কয়েকটি ভালো নির্বাচনের পর খুলনা সিটি করপোরেশনে একটি অস্বচ্ছ ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে বলে মনে করছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পর সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, খুলনায় শান্তিপূর্ণ   
কারচুপি হয়েছে যা দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় নতুন মডেল। এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে বলেও মনে করে সুজন। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘বিজয়ীদের তথ্য উপস্থাপন ও সুজনের দৃষ্টিতে নির্বাচন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান। এতে লিখিত বক্তব্যে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায় খুলনা ছাড়া সব নির্বাচন ভালো হয়েছে। তবে কয়েকটি ভালো নির্বাচনের পর খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি অস্বচ্ছ ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক ভোটার ভোট দিতে পারেননি। কোনো কোনো কেন্দ্রে প্রতীকে অবৈধভাবে সিল দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। যে ব্যালটগুলোতে কোনো স্বাক্ষর ছিল না। কিন্তু আগে থেকে সিল দেয়া ও স্বাক্ষরবিহীন ব্যালটকেও বৈধ ভোট হিসেবে গণনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, কারসাজিমুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। নির্বাচনে দৃশ্যত বড় কোনো ধরনের অঘটন ও সহিংসতা ছাড়া অনুষ্ঠিত হলেও স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেননা, অনেক ভোট কেন্দ্রে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্ট না থাকা, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্রের সামনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর কর্মীদের জটলা সৃষ্টি করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি, ভোটের আগেই বিরোধী দলের প্রার্থী-সমর্থকদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করার ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের ওপর যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে সহায়তাকারী হিসেবে নিয়োগ করা, নির্বাচন পর্যবেক্ষক নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তার ওপর চড়াও হওয়ার মতো ঘটনাবলী এই নির্বাচনকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। নির্বাচনে ইসির প্রস্তুতি ভালো ছিল বলা হচ্ছে। তবে নির্বাচনের আগে রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তখন রিটার্নিং অফিসারকে সহায়তার জন্য যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজনকে খুলনা পাঠানো হয়। বিষয়টি একদিকে যেমন নজিরবিহীন, পাশাপাশি তা কতটুকু যৌক্তিক ও আইনসম্মত তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। এর মাধ্যমে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হয়েছে।  
সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বিকাশ ঘটবে। কিন্তু দিন দিন আমরা এই গণতান্ত্রিক বিকাশের চর্চা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে সব প্রার্থী হলফনামার মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ছিল তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া। নির্বাচনে যে সব অনিয়ম হয়েছে তার জন্য কারও অভিযোগ দায়ের করার অপেক্ষা না করে নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেয়াটা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে আমরা তা করতে দেখিনি। সত্যিই এটা হতাশাজনক। সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুজন নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ না করলেও পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছে। এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, তথা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কমিশন প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করেনি এবং হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিল।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সদ্য সমাপ্ত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পিচফুলি রিগিং (শান্তিপূর্ণ কারচুপি) হয়েছে। এটিকে একটি নতুন মডেলের নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করা যায়। নির্বাচনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া বা সহিংসতা হয়তো ততটা দেখা যায়নি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে নানা ধরনের অনিয়ম ঠিকই হয়েছে। নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তার অভাব দেখা যায় এবং ভোটারদের এক ধরনের ত্রাসের মধ্যে রাখা হয়েছিল। যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে তারাও তাদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারেনি। কারণ তাদের সরকারের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন করে সংস্থা চালাতে হয়। তবে মিডিয়া এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। মিডিয়াগুলোকে অনেক বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদন করতে দেখা গেছে, যা ইতিবাচক। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে ইসি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্র ভোট দিয়েছে। তার ভোট দেয়ার কথা ছিল আরো ১২ বছর পরে। খুলনা সিটি নির্বাচন আয়োজন করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। তারা তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয়মাস আগে এই নির্বাচনটা ছিল কমিশনের জন্য একটা পরীক্ষা। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন করার ক্ষেত্রে তাদের যে সাহস দেখানো দরকার ছিল তা তারা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এই নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে পারবে এটা জনগণ মনে করে না, আমিও করি না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status