দেশ বিদেশ

মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

মানবজমিন ডেস্ক

২৩ মে ২০১৮, বুধবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

দক্ষিণ কোরিয়ার গুয়াংজুতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো ন্যায়বিচার বিষয়ক একটি ফোরাম। এর নাম দেয়া হয় ‘দ্য ২০১৮ গুয়াংজু হিউম্যান রাইটস ফোরাম’। এর আয়োজক প্রতিষ্ঠান মে ১৮ ফাউন্ডেশন ও এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। ১৭ই মে অনুষ্ঠিত ওই ফোরামে দীর্ঘ বক্তব্য তুলে ধরেন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন চেয়ারপারসন জ্যাক ক্লানসি। এতে তিনি মানবাধিকার থেকে শুরু করে অপুষ্টি সহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন। এতে উঠে আসে বাংলাদেশও। বলা হয়, বাংলাদেশে রয়েছে প্রি-স্কুল বয়সী শতকরা ৫৪ শতাংশ শিশু। অথবা ৯৫ লাখ শিশু রয়েছে হতবুদ্ধি অবস্থায়। শতকরা ৫৬ ভাগ শিশু অতিরিক্ত ওজনের। শতকরা ১৭ ভাগ শিশু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটছে এমন এক সময়ে যখন সারা বিশ্বে শিশু ও বয়স্ক মানুষের মধ্যে মুটিয়ে যাওয়া বা স্থ্থূলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বে ২০১৫ সালে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ছিল ৭৭ কোটি ৭০ লাখ। ২০১৭ সালে এসে সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮১ কোটি ৫০ লাখ। এ তথ্য খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও’র। এ ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটছে যখন বিশ্বে সবার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সংস্থান দেয়া সম্ভব এ রকম খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে তখন। যথাযথ পুষ্টির অভাবে সবচেয়ে বেশি ভুগছে বেড়ে ওঠা শিশুরা। অপুষ্টির কারণে তাদের বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এর পরে রয়েছে জীবনের যথার্থ অধিকার থেকে তাদেরকে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত করা হচ্ছে। সারা বিশ্বের পরিস্থিতির প্রসঙ্গ এনে বলা হয়, সেনাবাহিনী ও পুলিশ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে অন্যায়ভাবে ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে। এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে ১৯৮০ সালের মে ১৮ গুয়াজু ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট। ওই সময় এই আন্দোলনে অংশ নেয়া কয়েক শ’ যুবককে নৃশংসভাবে হত্যা করে সেনাবাহিনী। ১৯৮৯ সালে বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিলেন যুবক-যুবতীরা। তখন সেনাবাহিনীর ২৭তম শানজি প্রদেশ শাখার সমন্বয়ে হত্যা করা হয় কয়েক শ’ অথবা কয়েক হাজার মানুষকে। ওইসব মানুষ গণতন্ত্র দাবি করছিলেন এবং দুর্নীতির অবসান চাইছিলেন। অতি সম্প্রতি সন্দেহজনক মাদকসেবনকারীদের হত্যার নির্দেশ দেন। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সুষ্ঠু বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অথবা তাদেরকে মাদকাসক্তি থেকে ফেরানোর চিকিৎসা দেয়া হয় নি। এ প্রক্রিয়ায় বহু শিশু সহ অনেক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। রড্রিগো দুতের্তে দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে সেখানে হত্যা করা হয়েছে ৫৫ জন পরিবেশবাদী কর্মীকে। এর মধ্যে রয়েছেন একজন ক্যাথলিক ধর্মযাজক। তাকে হত্যা করা হয়েছে এ বছর এপ্রিলে। এর পরে রয়েছে গুমের বিষয়। এ প্রক্রিয়ায় লোকজনকে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা হত্যা করে। তারপর তা ফেলে আসে অজ্ঞাত স্থানে। এর ফলে একজন মানুষকে তার জীবনের অধিকার থেকেই শুধু বঞ্চিত করা হয় না। একই সঙ্গে এর ফলে তার আত্মীয়-স্বজনরা বছরের পর বছর এমনকি দশকের পর দশক ধরে দুর্ভোগ পোহায়। তারা যথার্থভাবেই সন্দেহ করেন যে, তাদের প্রিয়জনকে মেরে ফেলা হয়েছে। জীবনের অধিকার আরেকভাবে নিয়মিত লঙ্ঘন করা হয়। পুলিশ বন্দিদের ওপর নিয়মিত নির্যাতন করে এটা করে থাকে। যা সব সময়ই বিরাট দুর্ভোগ ডেকে আনে। কখনো কখনো মৃত্যুও হয়। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কা সফর করেন জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর বেন এমারসন কিউসি। তিনি বলেন, নির্যাতন এখনো আছে। ভয়াবহভাবে আছে তা। নিয়মিতভাবে আছে। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে যাদেরকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়েছে তাদেরকে এভাবে নির্যাতন করা হয়। তিনি আরো বলেন, যেসব মানুষকে ২০১৬ সালের শেষের দিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই নির্যাতন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। তার রিপোর্টে বলা হয়েছে, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে প্রহার করে নির্যাতন করা হয়েছে। কেরোসিনে ডুবানো প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। আঙ্গুলের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। পানিতে ফেলে নির্যাতন করা হয়েছে। জননাঙ্গ বা আঙ্গুল ব্যবহার করে কয়েক ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। শুধু শ্রীলঙ্কায়ই নয়, এশিয়ার আরো অনেক দেশের পরিস্থিতি একই। আরেক রকমের নির্যাতনের শিকার ওইসব মানুষ যাদেরকে আটক করে গোপন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তাদেরকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। চীনা আইনজীবী ওয়াং কুয়ান ঝাং রাজনৈতিক অধিকারের পক্ষে কথা বলেছিলেন। ভূমি কেড়ে নেয়া হয়েছে এমন মানুষের পক্ষে কথা বলেছিলেন তিনি। তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। এরপর ১০০০ দিনেরও বেশি সময় তাকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। তার স্ত্রী জানেন না তিনি এখনো বেঁচে আছেন নাকি। অথবা তাকে নৃশংস উপায়ে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা এর কিছুই তার পরিবারের কাছে জানানো হচ্ছে না। চীনের মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী গাও ঝি শেংকে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে আটক রাখা হয়। তিনি জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সরকারের সমালোচনা করে একটি বই লেখেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status