খেলা
বিদায়ী ম্যাচে ভালোবাসায় সিক্ত ইনিয়েস্তা
স্পোর্টস ডেস্ক
২২ মে ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন
বার্সেলোনা ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে সতীর্থ, সমর্থকদের ভালোবাসায় সিক্ত হন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। তাকে বিদায় জানাতে প্রস্তুতির কমতি ছিল না ন্যু ক্যাম্পে। গত শনিবার রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে ইনিয়েস্তার বিদায়ী ম্যাচে ১-০ গোলের জয়ে মৌসুম শেষ করে বার্সা। খেলা শুরুর আগে চার ম্যাচ হাতে রেখে শিরোপা জয়ী বার্সাকে গার্ড অব অনার দেয় সোসিয়েদাদ। প্রতিপক্ষের অধিনায়ক জাভি প্রিয়েতোর সঙ্গে স্মারক উপহার বিনিময় করেন ইনিয়েস্তা। লিওনেল মেসির হাতে লা লিগায় এপ্রিল মাসের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার তুলে দেন সাবেক বার্সা তারকা জাভি হার্নান্দেজ। ইনিয়েস্তা মাঠে পা রাখতেই ‘ইনিয়েস্তা, ‘ইনিয়েস্তা’ বলে হর্ষধ্বনি তোলেন দর্শকরা। গ্যালারির দুই পাশে শোভা পায় ইনিয়েস্তার আইকনিক ৮ নম্বর জার্সি। এক পাশে লেখা ‘ইনফিনিট ইনিয়েস্তা’। ৮১ মিনিট পর্যন্ত মাঠে ছিলেন ইনিয়েস্তা। গত মাসেই শৈশবের ক্লাব বার্সা অধ্যায়ের ইতি টানার ঘোষণা দেন বিশ্বকাপ জয়ী এই স্প্যানিয়ার্ড। শেষ ম্যাচে ইনিয়েস্তার খেলায় যেন আগের সেই মুগ্ধতা ছড়ায়। পাসিং ফুটবল, ক্ষিপ্রতা, ড্রিবলিংয়ে গতিময় ফুটবল খেলেন ইনিয়েস্তা। গোল না পেলেও দারুণ কিছু সুযোগ তৈরি করেন সর্বকালের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। মাঠ ছাড়ার সময় আবেগঘন এক মুহূর্তের জন্ম নেয়। মেসিকে অধিনায়কের বাহুবন্ধনী দিয়ে দুইজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। গোটা ন্যু ক্যাম্প দাঁড়িয়ে ইনিয়েস্তাকে সম্মান প্রদর্শন করে। ৫৭ মিনিটে ইনিয়েস্তাকে জয় উপহার দেয়া দর্শনীয় গোলটি করেন ফিলিপ্পে কুটিনহো। ডি-বক্সের বাইরে থেকে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারের ডান পায়ের শট বারে লেগে জালে জড়ায়। এর ১০ মিনিট পর কুটিনহোর বদলি হিসেবে নামেন মেসি। মেসিবিহীন আগের ম্যাচে লেভান্তের মাঠে ৫-৪ গোলে হেরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড হাতছাড়া করে বার্সা। ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন সাবেক লিভারপুল তারকা কুটিনহো। সোসিয়েদাদ ম্যাচ শেষে ফ্লাডলাইট নিভিয়ে রঙিন আলোয় ট্রফি উৎসবে মাতে কাতালানরা। লাল-নীল আতশবাজিতে ছেয়ে যায় ন্যু ক্যাম্পের আকাশ। মাঠের মাঝখানে ইনিয়েস্তার নাম ও জার্সি নম্বর ফুটে ওঠে। দুইপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ইনিয়েস্তাকে গার্ড অব অনার দেয় বার্সা পরিবার। আবেগপ্রবণ মুহূর্তটিতে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি ইনিয়েস্তা। উঁচিয়ে ধরেন লা লীগা ট্রফি। পাশে ছিল কোপা দেল রে শিরোপা। ইনিয়েস্তাকে শূন্যে ছুঁড়ে শেষ বিদায়ের ক্ষণ স্মরণীয় করে রাখে টিম বার্সা। বিদায়বেলায় মাইক্রোফোন হাতে অশ্রুসিক্ত ইনিয়েস্তা বলেন, ‘আজকের দিনটি কঠিন কিন্তু অবিশ্বাস্য ২২টি বছর কাটালাম। এই ক্লাবের হয়ে খেলতে পেরে আমি গর্বিত। বার্সেলোনার প্রতিনিধিত্ব করতে পারা সম্মানের। আমার কাছে বার্সাই বিশ্বের সেরা ক্লাব। এখানে বালক হিসেবে এসেছি, মানুষ হিসেবে যাচ্ছি। বার্সাকে আজীবন বুকে লালন করবো। আমি আমার সব সতীর্থ ও স্টেডিয়ামের সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই। আমি ৩৪ বছর বয়সে বিদায় নিচ্ছি। শুধু এটুকু বলতে চাই, আমার মনটা এখানেই পড়ে থাকবে।’ বার্সা কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে বলেন, ‘ভবিষ্যতে বলতে পারবো ইনিয়েস্তার বিদায়ী ম্যাচে আমি বার্সার কোচ ছিলাম। সে এমন একজন খেলোয়াড় যার নাম পুনরাবৃত্তি হবে না। আমি মনে করি সবার কাছেই আজকের রাতটি আবেগপ্রবণ। ইনিয়েস্তা বার্সার কিংবদন্তি। সে একজন আদর্শ বাহক।’ ইনিয়েস্তার ফুটবলের হাতেখড়ি বার্সার একাডেমি ‘লা মেসিয়া’তে। ১৯৯৬ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে এখানে নাম লেখান তিনি। ছয় বছর পরেই সিনিয়র দলে অভিষেক হয়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। আজকের বার্সার সোনালী প্রজন্মের অন্যতম কাণ্ডারি ইনিয়েস্তা। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ৩২টি শিরোপা জিতেছেন তিনি। পরবর্তী ঠিকানা কোথায় হবে তা এখনো অজানা। পাড়ি জমাতে পাড়েন চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়ায়। বার্সার মুখোমুখি হওয়া এড়াতে ইউরোপের কোনো ক্লাবে না যাওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিলেন ইনিয়েস্তা।
এক নজরে ইনিয়েস্তার ক্যারিয়ার
স্পেন (২০০৬ থেকে)
শিরোপা: ২০১০ বিশ্বকাপ, ২০০৮ ও ২০১২ ইউয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ (ইউরো)
বার্সেলোনা (২০০২-১৮)
শিরোপা: ৯ লা লিগা, ৬ কোপা দেল রে, ৭ স্প্যানিশ সুপার কাপ, ৪ ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, ৩ উইয়েফা সুপার কাপ, ৩ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ।