দেশ বিদেশ

জেনেভায় সরকারের বক্তব্যে মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ

স্টাফ রিপোর্টার

২১ মে ২০১৮, সোমবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

জেনেভায় জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে সরকারের দেয়া বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে জাতিসংঘ উদ্বেগ জানিয়ে প্রায় ২৫১টি সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশের অনেক সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার। মানবাধিকারকে অস্বীকার করে দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মনে করছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জাতিসংঘে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে সরকারের অবস্থানের ওপর উদ্বেগ জানিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অবস্থান  জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর জোট হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ। গত ১৪ই মে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের ৩০তম অধিবেশনে তৃতীয়বারের মতো সর্বজনীন পুনর্বীক্ষণ পদ্ধতি বা ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর)’এর আওতায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পর্যালোচিত হয়। এ পর্যালোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন অংশগ্রহণ করে। জেনেভাস্থ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরতে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের এক প্রতিনিধিও অংশ নেন।
বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের পর্যালোচনার সমালোচনা করে সংস্থাটির পক্ষ থেকে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন এইচআরএফবি’র সমন্বয়ক তামান্না হক রিতি। প্রবন্ধে তিনি বলেন, জেনেভায় আইনমন্ত্রীর বক্তব্য উপস্থাপনের পর পারস্পরিক অংশগ্রহণমূলক আলোচনায় ১০৫টি দেশের প্রতিনিধিগণ আগামীতে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়ন বিষয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় ২৫১টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এসব সুপারিশের মধ্য থেকে বাংলাদেশ সরকার ১৬৭টি সুপারিশ গ্রহণ করে। আর ২৩টি সুপারিশ রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রতিক্রিয়া জানাতে সময় নেয় সরকার। অন্যদিকে ৬১টি সুপারিশ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ সরকার যা আন্তর্জাতিক পরিসরে মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারকে দুর্বল করেছে বলে মনে করছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে যেসব সুপারিশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার সময় নিয়েছে তা হলো- নির্যাতন ও জোরপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম সংক্রান্ত ঘটনা প্রতিরোধ এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা, অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা এবং নতুন আইন তৈরি করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, গুমের যথাযথ তদন্ত এবং একই সঙ্গে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা সহ আরো অনেক সুপারিশ। মানবাধিকার বিষয়ে কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার না করে সময় নেয়ায় সমালোচনা করে সংস্থাটি সেই সব সুপারিশ তুলে ধরে। সুপারিশগুলো হলোÑ জোরপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদে অনুস্বাক্ষর, জাতিসংঘের সকল বিশেষ প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ ভ্রমণের অনুমতি প্রদান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তদন্ত করার ক্ষমতা প্রদান, যৌন ও লিঙ্গগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ঘটনা প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণ ও বিরোধীদল, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের ভয়ভীতিহীন ভাবে গণতান্ত্রিক চর্চার পরিসর বাড়ানো। এসব বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার বলেন, বাংলাদেশে আইনের অপপ্রয়োগ ও সঠিক বাস্তবায়নের অভাব রয়েছে জাতিসংঘের এমন দাবি অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ সরকার। যা দেশের মানুষের মানবাধিকার বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ। মানবাধিকার বাস্তবায়নে সরকাররের পক্ষ থেকে সময় নেয়াতে উদ্বেগ জানিয়ে নাগরিক উদ্যোক্তার প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, ৫৭ ধারা বাতিল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও গুম হত্যার বিচারের তদন্তে সময় নেয়ায় মানবাধিকার বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। মানবাধিকার বাস্তবায়নে এসব সুপারিশ অতি দ্রুত মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নের দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আরো আলোচনা করেন জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নেয়া হিউম্যান রাইটস ফোরামের প্রতিনিধি বন্ধু সোস্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সালেহ আহমেদ, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব সং প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status