দেশ বিদেশ

মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান ৫ দিনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৯

স্টাফ রিপোর্টার

২০ মে ২০১৮, রবিবার, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

দেশজুড়ে চলছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান। গত কয়েকদিনে কয়েক হাজার মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে সহশ্রাধিক। মাদক নির্মূলে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব। সংস্থাটির মাদক বিরোধী অভিযান চলাকালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গত ৫ দিনে সারা দেশে ৯ মাদক ব্যবসায়ী ও বহনকারী নিহত হয়েছে হয়েছে বলে সংস্থাটির দাবি। র‌্যাব’র অভিযানে শুক্রবার দিবাগত রাতেও যশোরে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত হয়েছে তিন মাদক ব্যবসায়ী। নিহতরা হলেন- উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের কাদের আলী মোড়লের ছেলে আবুল কালাম (৪৭), একই গ্রামের আবদুল বারিক শেখের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩৮) ও আবদুস সাত্তার কাঁসারীর ছেলে মিলন কাঁসারী (৪০)। এর আগে চট্টগ্রামে দুই মাদক ব্যবসায়ী র‌্যাব’র সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। নগরীর বরিশাল কলোনীতে ওই দুই ব্যবসায়ীর অবস্থানের কথা জানতে পেরে র‌্যাব’র একটি দল টহল দিতে থাকে। এরপর র‌্যাব’র উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোঁড়ে তারা। এ সময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। গত বৃহস্পতিবার রাতে চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে র‌্যাব’র বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে র‌্যাব ৬ কেজি ৭শ’ গ্রাম গাঁজা, ২টি পিস্তল, ৭ রাউন্ড গুলি ও ২টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে। গত ১৭ই মে রাজশাহীর নবগঙ্গা এলাকায় অভিযান চালানোর সময় র‌্যাব’র সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নগরীর হাসান নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। র?্যাব’র ভাষ্যমতে, হাসান দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ওই রাত সাড়ে ১২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজশাহী নগরীর পশ্চিম নবগঙ্গা কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় অভিযান চালায় র?্যাব। এ সময় কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী সেখানে মাদক কেনাবেচার জন্য জড়ো হয়েছিল। তারা র?্যাব’র উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছুড়তে থাকে। র?্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। বন্দুকযুদ্ধের একপর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ী হাসান নিহত হন। এ সময় পালিয়ে যায় অন্যরা। অন্যদিকে র‌্যাব’র মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের ঘোষণার দু’দিনের মধ্যেই বন্দুকযুদ্ধে দু’জন নিহত হন। এদের মধ্যে একজন কুষ্টিয়ায়। অন্যজন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। র‌্যাব জানায়, তাদের অভিযানে আসার কথা টের পেয়ে অবস্থান নেয় মাদক ব্যবসায়ীরা। পালানোর পথ না পেয়ে গুলি ছোড়া শুরু করে। পরে এই সংঘর্ষে নিহত হয়েছে অস্ত্রধারীরা। গত ৩রা মে ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে র‌্যাব যেভাবে অভিযান চালিয়ে সাফল্য অর্জন করেছে, এখন মাদকের বিরুদ্ধেও সেভাবে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে মাদকের ছোবল থেকে দূরে থাকতে পারে, ব্যাপকভাবে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। র‌্যাব সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার পর র‌্যাব’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেশজুড়ে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাতদিনে র‌্যাব’র বিভিন্ন ব্যাটালিয়ান প্রায় একশ’ মাদকবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানে দেড় শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর প্রায় ৮শ’ মাদকসেবীকে আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। কাউকে কাউকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থ দণ্ডও করা হয়েছে। মাদকমদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে এখন ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ ইয়াবা সেবন করে। অন্যান্য মাদকের চাইতে দেশে ইয়াবার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। মাদক হিসেবে ইয়াবার পরের অবস্থান ফেন্সিডিলের। মাঝখানে ফেন্সিডিলের চাহিদা কমে গেলেও নতুন করে আবারও ফেন্সিডিলের ব্যবহার বেড়েছে। ইয়াবা এবং ফেন্সিডিল, এই দু’টি মাদকই দেশে আসে পাশ্ববর্তী দুই দেশ- মিয়ানমার ও ভারত থেকে। মাদকের বিরুদ্ধে এ অভিযান শুধু র‌্যাবই পরিচালনা করছে না। তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাও। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, এ গত দুইদিনে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের হেফাজত থেকে ৪ হাজার ৯৯৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৬৮৪ গ্রাম হেরোইন, ৭ কেজি ৪১০ গ্রাম গাঁজা, ৮ বোতল ফেনসিডিল ও ৪০টি ইনজেকশন উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৬৮টি মামলা হয়েছে।
এদিকে এ সাঁড়াশি অভিযান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র‌্যাব’র কর্মকর্তারা জানান, এটা নতুন কোনো অভিযান নয়। তারা বরাবরই মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে আসছে। র‌্যাব’র লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আমরা এ অভিযানগুলো বরাবরই করে আসছি। নতুন কিছু নয়। তবে এবার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করছি। আশা করছি সফল হবো। বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অভিযানে গেলে তারা গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পরবর্তীতে র‌্যাবকেও গুলি ছুড়তে হয়। এখানে সংঘর্ষে যদি কেউ নিহত হয় তাহলে তো মানবাধিকার লঙ্ঘন হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status