বাংলারজমিন

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাক ছাড়ছে সুবিধাবঞ্চিতরা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

২০ মে ২০১৮, রবিবার, ৯:১৫ পূর্বাহ্ন

পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নের হরিখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রোকেয়া বেগম (৫০)। এক ছেলে, ছেলের বৌ এবং তাদের দু’টি ছেলে মেয়ে নিয়ে সেখানে অতি কষ্টে বসবাস করেন। ওই এলাকায় নেই বিদ্যুৎ সংযোগ, নেই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, নেই পাকা রাস্তা, নেই স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট, আশপাশে নেই স্কুল, ব্যারাকের ঘরগুলোও পরিত্যক্ত হয়ে গেছে অনেক আগেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করায় কর্মসংস্থানের সুযোগও নেই। ফলে তাদেরকে অতি কষ্টের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। আর দীর্ঘদিনেও এসব সমস্যা সমাধান না হওয়ায় অনেকেই আশ্রয়ণ প্রকল্প ছেড়ে অনত্র চলে গেছেন। শুধু পাইকগাছার হরিখালীই নয় খুলনা জেলার ডুমুরিয়া, তেরখাদা, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, রূপসা ও কয়রা উপজেলায় ৪৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪০৮টি ব্যারাকের ৩৬৩৫টি পরিবারের মধ্যে অনেক পরিবার অন্যত্র চলে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা জেলায় ৪৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মোট ৪০৮টি ব্যারাকে ৩ হাজার ৬৩৫ জনকে আশ্রয় দিলেও বেশিরভাগ অনত্র চলে গেছেন।
এলাকার ভূমিহীন দুস্থ ও অসহায় পরিবারের বসবাসের জন্য সরকার বিভিন্ন এলাকায় ১৯৯৯ হতে আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করে। পর্যাক্রমে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প ফেজ-২’ ও ‘আশ্রয়ণ-২’ প্রকল্প নামে তিন ধাপে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলমান এ প্রকল্পে বসবাসকারীরা নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  কর্মসংস্থানের অভাব, ঘর ভালো না থাকা, পায়খানা না থাকা, পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকা, কাছাকাছি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকা, সুদসহ সমিতির ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়া, টিউবওয়েল অকেজো, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ না থাকা, বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকাসহ নানা সংকট-সমস্যায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নের হরিখালী মৌজার চক হরিখালী এলাকায় শিবসা নদীর ওয়াপদার বাঁধের নিচে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাক ৪০টি ঘর তৈরি করেছিল। ৪০টি পরিবার বসবাস শুরু করলেও কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন জায়গার কাজের স্থানে চলে গেছে অনেকে।
হরিখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পের এশার আলী গাজী (৫৬) জানান, ব্যারাকের একটিমাত্র পায়খানা, সেটা ব্যবহারের অনুপযোগী। লবণাক্ত পানি। টিউবওয়েল অকেজো। ফলে তাদেরকে নিদারুণ কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
এ ব্যারাকের মো. ছহিল উদ্দিন (৬০) জানান, এখান থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে রয়েছে স্কুল, মাদরাসা। যে কারণে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করাতে অনেক কষ্ট হয়। দূরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় অনেকে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে।
জানাগেছে, ২০০৩ সালে উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নের হরিখালী মৌজার চক হরিখালী এলাকায় শিবসা নদীর কোল ঘেঁষে ওয়াপদার বেড়িবাঁধের নিচে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলে সরকার। টিনশেড দিয়ে ৪টি ব্যারাকের প্রতিটিতে ১০টি করে মোট ৪০টি ঘর তৈরি হয়। প্রথম দিকে ৪০টি পরিবার বসবাস শুরু করলেও কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় কাজের সন্ধানে চলে গেছে অনেকে। যে কারণে এখন প্রকল্প এলাকায় মাত্র ৮টি পরিবার অনেক কষ্টে বসবাস করছে। প্রতিটি পরিবারের বৃদ্ধ মা-বাবাসহ সদস্য সংখ্যা কমপক্ষে ৫-৬ জন।
এ ব্যাপারে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কেন সঠিকভাবে তদারকি না করলে রাষ্ট্রপতির নেয়া কর্মসূচিও সফলতার মুখ দেখবে না। ভিক্ষুক ও প্রকৃত ভূমিহীন-গৃহহীনদের পুনর্বাসন করলেই হবে না। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই আশ্রয়ণ প্রকল্প সফল হবে। দেশ এগিয়ে যাবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পিছে ফেলে রেখে জাতি সামনে এগোতে পারে না। তাদেরও সঙ্গে নিয়েই অগ্রসর হতে হবে।’
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. আমিন-উল-আহসান বলেন, অনেক এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুরবস্থার কথা তিনি শুনেছেন। বসবাস অযোগ্য ব্যারাকগুলো নতুন করে করা হবে। ইতিমধ্যেই আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় কয়রা, দিঘলিয়া, পাইকগাছা ও তেরখাদা উপজেলায় ৫টি প্রকল্পে ৮৯টি পাকা ব্যারাক নির্মাণ করে ৪৪৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, পর্যাক্রমে মেরামত এবং নতুন ব্যারাক নির্মাণ করে বসবাসের উপযোগী করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status