বাংলারজমিন

বৃষ্টিতে বিপাকে মানিকগঞ্জের মরিচ চাষিরা

রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে

২০ মে ২০১৮, রবিবার, ৮:০৩ পূর্বাহ্ন

মানিকগঞ্জে এবার কাঁচামরিচের বাম্পার ফলন হলেও ঝড়-বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে খেত। পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে মরে যাচ্ছে মরিচ গাছ। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে মরিচ চাষিরা।
কাঁচামরিচ চাষের জন্য বিখ্যাত মানিকগঞ্জ। জেলার হরিরামপুর, ঘিওর, শিবালয়, সাটুরিয়া ও সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচের আবাদ হয়। এসব অঞ্চলের মরিচ ঢাকার কাওরান বাজারসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় পাইকারি আড়তে সবরাহ করা হয়ে থাকে। শুধু দেশেই নয় মানিকগঞ্জের কাঁচামরিচ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দুবাই, মালয়েশিয়া, সৌদি, কুয়েত, দাম্মাম, রিয়াদসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। কিন্তু চলতি বছর ঝড়, বৃষ্টি ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ জেলায় মরিচ চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান চৌধুরী জানান, এবছর জেলায় সর্বমোট ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচের আবাদ হয়েছে। যা গেল বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মরিচের আবাদ ৬০ হেক্টর বেশি। তবে অতিবৃষ্টি আর ঝড়ের কারণে মরিচ খেতে ব্যাকটেরিয়ার (ফাঙ্গাসের) আক্রমণ হয়েছে। এতে প্রায় ১০০ হেক্টর জমির মরিচ গাছ ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের কীটনাশক গাছের গোড়ায় স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আক্রান্ত যেসব গাছ মরে যাচ্ছে সেগুলো তুলে ফেলতে বলা হচ্ছে। তবে নতুন করে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ না ঘটলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। শিবালয় উপজেলার শাইলী গ্রামের সায়েদুর রহমান তার দুই বিঘা জমিতে এবার কাঁচামরিচ আবাদ করেছে। জানালেন, ফলন বেশ ভালোই হয়েছিল। কিন্ত অতি বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে তার জমির তিন ভাগের দুই ভাগ মরিচ খেত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এ বছর মরিচ চাষ করে কোনো লাভ পাবো না।
একই উপজেলার দুবুলিয়া গ্রামের দলিল উদ্দিন জানান, লাভের আশায় প্রতি বছরই মরিচের চাষাবাদ বেশি করা হয়। এবার মরিচের ফলনও ভালো হয়েছিল। তবে প্রবল বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে মরিচ খেতে পানি জমে গেছে। এতে মরিচ গাছগুলো হেলে পড়ে যায় এবং এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ দেখা দিলে মরিচ খেত মরে যাচ্ছে। যখন গাছ থেকে মরিচ তোলা শুরু হয়েছে তখন ফলনসহ গাছ মরে যাওয়ায় আমরা বিপাকে পড়ে গেছি। ঘিওর উপজেলার শোলধারা গ্রামের আক্কাস আলী জানান, দুই বিঘা জমিতে এবছর তিনি মরিচ আবাদ করেছে। ফলন ভালও হয়েছিল। হাট-বাজারের কিছু কিছু মরিচ বিক্রিও শুরু করেন এবং দামও একটু ভালো পাচ্ছিলেন। কিন্তু বৃষ্টিতে গাছের গোড়ায় পানি জমে তার দুই বিঘার মধ্যে এক বিঘা খেতের মরিচ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন খেত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আক্কাস আলী।
মরিচ চাষি শাজাহান মিয়া জানালেন, এখন পুরোদমে মরিচ গাছে ফলন আসতে শুরু করেছে। কিন্তু ঝড় আর বৃষ্টির কারণে খেত মরে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েতে হয়েছে। এছাড়া বৃষ্টির পর রোদ উঠলে মরিচ গাছগুলোর গোড়া পচে গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। কীটনাশক ব্যবহার করেও সুফল পাচ্ছেন না। এই অবস্থা চলতে থাকলে এবার মরিচের ফলন অর্ধেকও হবে না।
মানিকগঞ্জের বরংগাইল হাটে পাইকাররা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার মরিচের ফলন বেশি দেখা গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি আর ঝড়ে কারণে ফলন কমে যাচ্ছে। তাই আড়তগুলোতে মরিচ কম আসছে। এভাবে চলতে থাকলে এবার চাহিদা অনুযায়ী মরিচের সংকট দেখা দেবে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্র হচ্ছে। ব্যবসায়ী কোরবান আলী জানান, জেলার শিবালয়, ঘিওর ও হরিরামপুর উপজেলা মরিচ চাষের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলে উৎপাদিত বিন্দু জাতের মরিচের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ মরিচ বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো বেশি পরিমাণ মরিচ বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। তবে এ বছর মরিচের ফলন ভালো হলেও বৃষ্টির কারণে মরিচ গাছগুলো মারা যাচ্ছে। যার ফলে কৃষকের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status