বাংলারজমিন

এক পরিবারে ৮ প্রতিবন্ধীর জীবনযুদ্ধের গল্প

ওমর ফারুক সুমন, হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) থেকে

২০ মে ২০১৮, রবিবার, ৮:০৩ পূর্বাহ্ন

কবির সুরে বলতে হয়- ‘দেখো মানুষ কেনো গরিব হয়! কর্ম দোষে দোষী হইয়া খুদাকে দোষী বানায়! বৃক্ষের মাঝে থাকে পোকা সেও খেতে চায়! বিধির লীলা বুঝা বড় দায়!’ জীবন কত বিচিত্র! এ সংসার সমুদ্র কতই না অদ্ভুত! কেউ থাকে রাজ প্রসাদে, কেউ থাকে ভাঙ্গা মাটির ঘরে, আবার কেউবা থাকে গাছ তলায়। জীবন নামক রেল গাড়ি তার চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে জীবনটা দুমড়ে-মুচড়ে চলতে থাকে। কেউ তাদের খোঁজ রাখে না, খোঁজ নেয়ার চেষ্টাও করে না। এবার বলি এমনই এক জীবনযুদ্ধের গল্প যা হয়তো বিরল। হয়তো এটাও বিধির লীলা! একই পরিবারে আটটি জীবন অচল। ৮ জনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। বেটে প্রকৃতির। উচ্চতা ৩ বা সাড়ে তিন ফুটের বেশি হবে না। কেউ তাদের বিয়েটাও পর্যন্ত করতে চায় না। লোভের মোহে কেউ বিয়ে করলেও স্বামী যখন দেখে তার ঘরে প্রতিবন্ধী পুত্র জন্মলাভ করেছে তখন স্ত্রী পুত্র ফেলে স্বামী হয়ে যায় উধাও। এদের জীবনটাও সেই জীবন নামক রেলগাড়ি তার চাকার নিচে পিষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হালুয়াঘাট উপজেলার ছোট দাসপাড়া গ্রামের বাইট্টা (খাঁটো) জলিলের একটি পরিবার। সকলেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। যা গত ১০০ বছরের ইতিহাস। মৃত প্রতিবন্ধী আব্দুল জলিলের কন্যা ও সাজাহানের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন (৪৮), সাজাহানের দুই মেয়ে সাজেদা বেগম (৩০) ও মাজেদা (২৫), সাজেদার কন্যা আফরিন (২), একই রক্তের সূত্র ধরে মৃত ফজুল হকের স্ত্রী হালিমা বেগম (৪০), আনারুলের স্ত্রী আছিয়া খাতুন (৩৫) ও পুত্র আশিক খান (১৬), ইয়াকুব আলীর স্ত্রী মনিরা খাতুন (৩২)। শুক্রবার সরেজমিনে ওই প্রতিবন্ধী পরিবারের বাড়িতে কথা বলতে চাইলে প্রতিবন্ধী আনোয়ারা খাতুন বলেন, আমার পিতাও শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। তার ঘর থেকে আমি হই। আমার পরে হালিমা, এরপরে আছিয়া। এইভাবেই চলতে থাকে। তিনি আফসোস করে বলেন, মাইয়ার ঘর থেইকা খাডা (খাটো) পুলা হয়েছে বিধায় বাবা তারে ফালাইয়া রাইখা চইলা গেছে। আমরাতো আর ফালাইতে পারি না! আল্লাই দিছে! এগুলারে কি মাইরা ফেলানো যাইবো! আফসোস করলে কি অইবো? মানুষ আমাদের পেছন দিয়া ইহার (ধিক্কার) দিই। রাস্তা দিয়া ঠিকমতো চলবারও পারি না। কাজকামও করবার পারি না। তিন চার মাস পর পর কিছু টাকা ভাতা পাই তা দ্বারা সংসার চলে না। এদের বিষয়ে হালুয়াঘাট সমাজ সেবা অফিসার মাহফুজ ইবনে আইয়ুব বলেন, এই পরিবারে যেহেতু তিনজন ভাতা পায় সুতরাং আমদের আর ভাতা দেয়ার সুযোগ নেই। তবে অন্যান্য কিছু সুযোগ সুবিধা আছে সেগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, আমি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status