ভারত
পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিপত্য
কলকাতা প্রতিনিধি
১৮ মে ২০১৮, শুক্রবার, ২:১৭ পূর্বাহ্ন
পশ্চিমবঙ্গে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস একাধিপত্য করেছে। শাসক দল জেলা পরিষদ স্তরে ৯৫ শতাংশ আসনে, পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ৯০ শতাংশ আসনে এবং গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ৭৩ শতাংশ আসনে বিজয়ী হয়েছে। বিরোধীরা তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে অনেক পিছিয়ে থাকলেও বাম ও কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে বিজেপি স্থানে উঠে এসেছে। বিজেপি গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ১৩ শতাংশ আসন পেয়েছে। এমনকি জঙ্গল মহল বলে পরিচিত এলাকা এবং চা বলয় বলে পরিচিত আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে বিজেপি তাদের আধিপত্যের প্রমাণ দিয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আদিবাসী ও তফসিলি জাতি অধ্যূষিত এলাকাতে বিজেপি তাদের প্রভাব বিপুলভাবে প্রতিফলিত করতে পেরেছে। অন্যদিকে নির্দল প্রার্থীরা এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে চমক সৃষ্টি করেছে। নির্দলরা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ১৭৭৯টি আসনে জয়লাভ করেছে। পঞ্চায়েত সমিতিতেও তারা ৮৪টি আসন পেয়েছে। অবশ্য এই নির্দলদের অধিকাংশই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেসের লোক বলে পরিচিত। ফল গণনার কাজ শেষ হতে হতে আজ শুক্রবার বিকেল গড়িয়ে যাবে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। রাজ্যে এই নবম পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথম বিরোধীদের হাতে একটিও জেলা পরিষদ নেই। গতবারের ভোটে বিরোধীদের জেতা তিনটি জেলা পরিষদও চলে গিয়েছে শাসকের হাতে। গত ১৪ই মে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ৩৮,৫৪৬ টি আসনে নির্বাচন হয়েছে। তবে বিরোধীরা ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ করার পরিপ্রেক্ষিতে পরে ৫৭৩টি বুথে পুনঃনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের ছবিটি স্পষ্ট হযেছে। দুপুরের পর পরিষ্কার হয়ে গিযেছে যে, শাসক দল গ্রামবাংলা জুড়ে তাদের একাধিপত্য বজায় রেখেছে। তবে গত সোমবার ৬৬ শতাংশ আসনে নির্বাচন হযেছে। বাকী ৩৪ শতাংশ আসনে শাসক দলের প্রার্থীরা আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দিবতায় জয়ী হয়েছেন। তবে সেই সব প্রার্থীদের ভাগ্য আদালতের হাতে ঝুলে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩১,৮১৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ২০,৭৩৯ টি আসনে জয়ী হয়েছে । বিজেপি জয়ী হযেছে ৫,৫৭৯টি আসনে । বামরা জয়ী হয়েছে ১,৬৭০টি আসনে। কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ১,০১৯টি আসনে। আশ্চর্যজনকভাবে ১,৭৭৯ জন নির্দল প্রার্থী এবারের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই নির্দলদের অধিকাংশ শাসক দলের সিদ্ধান্তে খুশি না হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। গোষ্ঠী বিরোধের কারণেই এরা প্রার্থী হয়েছিলেন। পঞ্চায়েত সমিতির ৬,১২৫ আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়েছে ৩,৮০০ আসনে। অন্যদিকে বিজেপি পেয়েছে ৫১১, বামফ্রন্ট ৮৩, কংগ্রেস ৮৪টি এবং নির্দলরা পেয়েছে ৮৪টি আসন। জেলা পরিষদের ২০টিতেই তৃণমূল কংগ্রেস জয় পেয়েছে। গতকাল বৃহষ্পতিবার অবশ্য গণনাতেও ব্যাপক গোলমাল হয়েছে। অনেক জায়গাতেই বিরোধী এজেন্টদের গণনাকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কোথাও কোথাও তাদের মেরে বের করে দেয়া হয়েছে। নদীয়ার মাজদিয়ায় একটি গণনা কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে ছাপ্পা ভোট দিতে দেখা গেছে। নির্বাচন কমিশন অবশ্য সংশ্লিষ্ট ২টি বুথের গণনা স্থগিত করে দিয়েছে। অন্য দিকে কোচবিহারে দুটি ব্যালট বাক্স থেকে ভোটারের চেয়ে বেশি ব্যালট পেপার পাওয়া গিযেছে বলে নির্বাচন কমিশন সুত্রে জানা গেছে। রাজ্য জুড়ে সহিংসতা ঠেকাতে বিরোধী কংগ্রেস এবং বামরা রাষ্ট্রপতি শাসন কায়েম করার দাবি জানিয়েছেন।