দেশ বিদেশ

সিদ্ধান্ত ছাড়াই ওয়ার্কিং কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক শেষ

জটিল হয়ে গেল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন!

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১৮ মে ২০১৮, শুক্রবার, ১০:০০ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে জনমনের আশংকাই সত্য হতে চলেছে। এ নিয়ে জটিলতার বিষয়টি এতদিন ছিল মুখে মুখে। এবার পররাষ্ট্র সচিব নিজেই বললেন- প্রত্যাবাসন সব সময় খুব জটিল ও কঠিন বিষয়। তিনি এ-ও বললেন, ঢাকা আশা করছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি শুরু করা যাবে। এ নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো ‘মতবিরোধ’ না থাকার দাবি করেন তিনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় ওই বৈঠক শেষে যৌথ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান- প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় গতি আনতে উভয়পক্ষ এক সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
এদিকে বৈঠকে অংশ নেয়া একজন সিনিয়র কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের তরফে প্রত্যাবাসন নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা এবং জটিলতার বিষয়গুলো উত্থাপন করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নির্বিঘ্নে ঘরে ফেরা নিশ্চিত করতে রাখাইনে কী করছে মিয়ানমার তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। ওই কর্মকর্তা এ-ও বলেন- মিয়ানমার প্রথম তালিকার যাচাই শেষ করতে পারেনি। তাই দ্বিতীয় তালিকা দেয়া নিয়ে কোনো তাড়াহুড়া করতে চায় না বাংলাদেশ। তাছাড়া প্রথম তালিকায় থাকা অন্যদের যাচাই করতে তারা কত সময় নেবে তা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ডেডলাইন দেয়নি মিয়ানমার।
সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ: এদিকে বৈঠকে অংশ নেয়া দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা দাবি করেছেন বৈঠকে বিস্তৃত আলোচনা হলেও কোনো রকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠকটি শেষ হয়েছে। বৈঠক শেষে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতা দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব মিন্ট থোও আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার দাবি করেন। বলেন- মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে  নেয়ার বিষয়ে আমরা খোলামেলা আলোচনা করেছি। প্রত্যাবাসন নিয়ে আমাদের প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছি। তবে ঠিক কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার প্রস্তুত? সেই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান মিন্ট থো। একাধিক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- প্রত্যাবাসনের জন্য সেখানকার  লোকদের (রোহিঙ্গা) মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এটা  বৈঠকে আমরা তুলে ধরেছি। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় ওই বৈঠক হয়। সকাল ১১টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠকটি চলে বিকাল সাড়ে ৩টা অবধি। দীর্ঘ বৈঠক শেষে প্রতিনিধিদলের দুই কো-চেয়ার ইউ মিন্ট থো ও শহীদুল হক গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উভয়পক্ষ দ্রুত প্রত্যাবাসনে সম্মত হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি  রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যে তালিকা  দেয়া হয়েছিলো, সেটা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি আমরা। উভয়পক্ষে খুব  খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এদিকে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ দেখতে চেয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে  জোরালোভাবে এটি তোলা হয়েছে। তবে এ নিয়ে মিয়ানমার অনেকটা গৎবাঁধা বা দায়সারা জবাব দিয়েছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনের মুখে বিভিন্ন সময়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয়ে রয়েছে। তাদের রাখাইনে ফেরানোর জন্য গত নভেম্বরে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা সই হয়। সেই সমঝোতা বাস্তবায়নে গঠিত হয় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। যার প্রথম বৈঠক মিয়ানমারে হয়েছিল গত ১৫ই জানুয়ারি। সেই আলোচনার ধারাবাহিকায় গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মিয়ানমারের চাওয়া মতে, ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছিল বাংলাদেশ। কয়েক মাসে দফায় দফায় যাচাই-বাছাই শেষে ওই তালিকার প্রায় ১ হাজারের কম ব্যক্তিকে তাদের বাসিন্দা করে স্বীকৃতি দিলেও তালিকায় অসম্পূর্ণ তথ্য থাকার দায় ঢাকার ওপরই চাপিয়েছে নেপি’ড। অং সান সুচি সরকারের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে প্রত্যাবাসনে প্রস্তুতির কথা জানালেও কাজের কাজ কিছুই করেনি। এমনকি এখনো অল্প-বিস্তর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসছে নতুন নতুন রোহিঙ্গারা।  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status