শেষের পাতা
নি র্বা চ নী হা ল চা ল সিরাজগঞ্জ ৬
দুর্গ পুনরুদ্ধার চায় বিএনপি, ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ
ইসরাইল হোসেন বাবু, সিরাজগঞ্জ থেকে
১৮ মে ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর। তাঁত শিল্প আর গো-খামার সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে রয়েছে উত্তরবঙ্গের একমাত্র বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের তেল ডিপো, বাঘাবাড়ী মিল্ক ভিটা, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়সহ উপভোগ্য নানা স্থাপনা। এ সবই সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের অন্তর্ভুক্ত। সঙ্গত কারণেই আসনটি সব রাজনৈতিক দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। ইতিমধ্যেই মাঠপর্যায়ে গণসংযোগ, পোস্টার, বিলবোর্ড ও সামাজিক ও ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এক সময় বিএনপি’র দুর্গ হিসেবে পরিচিত শাহজাদপুরে এবার হ্যাটট্রিক বিজয়ের লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বিগত দিনের ভুলগুলো শুধরিয়ে এবার যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়নের মাধ্যমে নিজেদের হারানো দুর্গ উদ্ধার করতে মরিয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে আসনটি আওয়ামী লীগের হাতে চলে যায়। আর তাই ক্ষমতাসীনদের ধারণা টানা দুই বারের জয় ও সরকারের উন্নয়নকে সামনে রেখে আগামীতেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারবেন তারা।
সিরাজগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাচারীবাড়ী ও কবির স্মৃতি বিজড়িত এ আসনটি ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও তা প্রকাশ্য রূপ পায়নি। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের একটি অংশের দাবি বর্তমান সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন এবং সাবেক এমপি চয়ন ইসলামকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে কোন্দল রয়েছে। এ ছাড়া, জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক ও শাহজাদপুর পৌরসভার সাময়িক বহিষ্কৃত মেয়র হালিমুল হক মিরুকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে দলের একটি অংশ তৎপর। বর্তমানে হালিমুল হক মিরু আলোচিত সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। চয়ন ও স্বপন দুই জনই পৃথক পৃথকভাবে সভা সমাবেশ করছেন। উভয়েই নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য স্বপন ক্ষমতায় থাকায় অনেক নেতাকর্মী প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা না করলেও গোপনে চয়ন ও পছন্দের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পক্ষে কাজ করছেন। এ অঞ্চলে বিএনপির রাজনীতিতে চলমান কোন্দল না থাকলেও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে প্রবীণদের পাশাপাশি নবীনরাও প্রার্থী হচ্ছেন। তবে, প্রার্থী যেই হোক এ আসনে মূল লড়াইটা হবে ধানের শীষ ও নৌকার মধ্যে। তাই সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে কে মনোনয়ন পাবেন তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।
আওয়ামী লীগ: দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিবুর রহমান স্বপন এগিয়ে বলে দলের অনেকে মনে করেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচার রয়েছে বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে তার শক্ত নেতৃত্বের কারণে শাহজাদপুরে বিএনপিসহ ৪ দলীয় জোটের আন্দোলনে ও নাশকতা তেমন কিছুই করতে পারেনি। তাছাড়া তার একচ্ছত্র নেতৃত্ব থাকার কারণে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি অনেকটাই তার মতামতের উপর গঠন করেছেন। তার ব্যক্তিগত ভোট ব্যাংকসহ রয়েছে অনুগত বেশ কিছু নেতাকর্মী। যে কারণে এই আসনে বিরোধী দলও কিছুটা নমনীয়। তিনি বলেন, বিভিন্ন কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে দলে নেতৃত্ব বৃদ্ধি ও সাংগঠনিক অবস্থার পরিবর্তন করেছি। এলাকার উন্নয়নে সাধারণ মানুষ ও নদী ভাঙন কবলিত মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের ভালোবাসায় দল থেকে মনোনীত হলে আবারো নৌকার জয় হবে বলে তিনি আশাবাদী।
অপরদিকে, সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলামও মনোনয়নের ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে এ আসনে তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন এমন আশাবাদ চয়ন ইসলাম সমর্থকদের। তাদের দাবি শাহজাদপুরের উন্নয়নে অতীতে চয়ন ইসলামের ভূমিকা পরীক্ষিত, শাহজাদপুরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে তার বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে চয়ন ইসলাম তার সমর্থকদের নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পৃথকভাবে গণসংযোগ ও প্রচারণার পাশাপাশি বন্যায় ত্রাণ বিতরণসহ নানা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। বিগত সময়ে নদী ভাঙন ও অসহায় মানুষের সাহায্য করায় ভোটের হিসাবে এই নেতার বাড়তি প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। চয়ন ইসলাম জানান, দলে যেন নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি না হয় সে কারণেই উপজেলা আওয়ামী লীগ রাজনীতি থেকে নিজেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম। তবে, তৃণমূলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করে এসেছি আগামীতেও করবো। দলের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছি। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেলে বিজয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী তিনি।
এ ছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান আইন সচিবের ছোট ভাই নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল সিরাজগঞ্জ জজকোর্টের পিপি শেখ আবদুুল হামিদ লাভলু। দলে রব আছে আইন পেশায় নিযুক্ত লাভলুর নিজস্ব ও পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডে শক্ত লবিং রয়েছে। লাভলু জানান, মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত এবং শিক্ষা নগরী শাহজাদপুর গড়ার স্বপ্ন তার আছে। তিনি মনোনয়ন পেলে আগামীতে নতুন নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে শাহজাদপুরবাসীর পাশে থাকতে চান।
বিএনপি: বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য কামরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিস সারোয়ার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তৃণমূল বিএনপিতে রয়েছে তার জনপ্রিয়তা। এরই মধ্যে তিনি কিছু নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। তবে, বিগত একটি নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তার বিরুদ্ধে দলের মধ্যে কিছুটা সমালোচনাও রয়েছে। সাবেক এমপি কামরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিস জানান, দলের তৃণমূলকর্মী ও নেতাদের নিয়ে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করে আসছি। বর্তমান সময়ে এখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ক্ষমতাসীনদের বাধা ও হামলা, মামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ধানের শীর্ষের জয় শতভাগ।
এদিকে, সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ও ৪ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা মরহুম ডা. এমএ মতিনের ছেলে ড. এমএ মুহিত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। শাহজাদপুর উপজেলা বিএনপির একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব তাকেই সমর্থন করছেন বলে প্রচার রয়েছে। ইতিমধ্যেই তিনি গণসংযোগ, ত্রাণ বিতরণ, পোস্টার, লিফলেট লাগিয়ে নির্বাচনী মাঠে শক্তিশালী প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। আগামীতে শক্তিশালী প্রার্থী দিয়ে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে চান দলীয় নেতৃত্ব। ড. এমএ মুহিত জানান, দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে বিএনপির পাশে থেকে কাজ করে আসছি। দলের নানা প্রতিকূলতায় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করে আসছি। নেতাকর্মীদের মাঝে আস্থা, বিশ্বাস ও সাধারণ মানুষের ভালোবাসা এবং সমর্থনে দলীয় মনোনয়ন পেলে এ আসনে বিএনপির বিজয় আনতে পারবেন বলেও তিনি আশাবাদী। তার দাবি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কার্যক্রমের স্বীকৃতি হিসেবে দল তাকেই মনোনয়ন দেবে।
এ ছাড়াও উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন সহিদ মাহমুদ গ্যাদনও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় শতভাগ আশাবাদী। দীর্ঘ ১৮ বছরে টানা তিন বার উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা এই নেতার জেলা বিএনপিতেও সক্রিয়তা রয়েছেন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে না পারলেও বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের মধ্যদিয়ে তিনি তার ভোটার জনপ্রিয়তার নজির রেখেছেন বলে দাবি তার সমর্থকদের। হোসাইন সহিদ মাহমুদ গ্যাদন জানান, আগামী নির্বাচনে জনপ্রিয়তা ও হিসাব-নিকাশ করেই দল প্রার্থী নির্ধারণ করবে। পূর্বের নির্বাচনের ফলাফল ও নিজ অঞ্চলের প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাই করে তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে এ আসনে ধানের শীর্ষের জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে এখানে বিএনপি প্রার্থীকেই সমর্থন জানাবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তাদের প্রায় ৪০ হাজার ভোট ব্যাংক বিএনপি প্রার্থীর বিজয়ের বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে। এ আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির তেমন তৎপরতা না থাকলেও উপজেলা সভাপতি মোক্তার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাহান চৌধুরী দু’জনই মনোনয়ন প্রাপ্তির আশায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আগামীকাল : সাতক্ষীরা-১
সিরাজগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাচারীবাড়ী ও কবির স্মৃতি বিজড়িত এ আসনটি ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও তা প্রকাশ্য রূপ পায়নি। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের একটি অংশের দাবি বর্তমান সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন এবং সাবেক এমপি চয়ন ইসলামকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে কোন্দল রয়েছে। এ ছাড়া, জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক ও শাহজাদপুর পৌরসভার সাময়িক বহিষ্কৃত মেয়র হালিমুল হক মিরুকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে দলের একটি অংশ তৎপর। বর্তমানে হালিমুল হক মিরু আলোচিত সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। চয়ন ও স্বপন দুই জনই পৃথক পৃথকভাবে সভা সমাবেশ করছেন। উভয়েই নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য স্বপন ক্ষমতায় থাকায় অনেক নেতাকর্মী প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা না করলেও গোপনে চয়ন ও পছন্দের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পক্ষে কাজ করছেন। এ অঞ্চলে বিএনপির রাজনীতিতে চলমান কোন্দল না থাকলেও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে প্রবীণদের পাশাপাশি নবীনরাও প্রার্থী হচ্ছেন। তবে, প্রার্থী যেই হোক এ আসনে মূল লড়াইটা হবে ধানের শীষ ও নৌকার মধ্যে। তাই সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে কে মনোনয়ন পাবেন তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।
আওয়ামী লীগ: দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিবুর রহমান স্বপন এগিয়ে বলে দলের অনেকে মনে করেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচার রয়েছে বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে তার শক্ত নেতৃত্বের কারণে শাহজাদপুরে বিএনপিসহ ৪ দলীয় জোটের আন্দোলনে ও নাশকতা তেমন কিছুই করতে পারেনি। তাছাড়া তার একচ্ছত্র নেতৃত্ব থাকার কারণে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি অনেকটাই তার মতামতের উপর গঠন করেছেন। তার ব্যক্তিগত ভোট ব্যাংকসহ রয়েছে অনুগত বেশ কিছু নেতাকর্মী। যে কারণে এই আসনে বিরোধী দলও কিছুটা নমনীয়। তিনি বলেন, বিভিন্ন কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে দলে নেতৃত্ব বৃদ্ধি ও সাংগঠনিক অবস্থার পরিবর্তন করেছি। এলাকার উন্নয়নে সাধারণ মানুষ ও নদী ভাঙন কবলিত মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের ভালোবাসায় দল থেকে মনোনীত হলে আবারো নৌকার জয় হবে বলে তিনি আশাবাদী।
অপরদিকে, সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলামও মনোনয়নের ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে এ আসনে তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন এমন আশাবাদ চয়ন ইসলাম সমর্থকদের। তাদের দাবি শাহজাদপুরের উন্নয়নে অতীতে চয়ন ইসলামের ভূমিকা পরীক্ষিত, শাহজাদপুরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে তার বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে চয়ন ইসলাম তার সমর্থকদের নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পৃথকভাবে গণসংযোগ ও প্রচারণার পাশাপাশি বন্যায় ত্রাণ বিতরণসহ নানা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। বিগত সময়ে নদী ভাঙন ও অসহায় মানুষের সাহায্য করায় ভোটের হিসাবে এই নেতার বাড়তি প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। চয়ন ইসলাম জানান, দলে যেন নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি না হয় সে কারণেই উপজেলা আওয়ামী লীগ রাজনীতি থেকে নিজেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম। তবে, তৃণমূলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করে এসেছি আগামীতেও করবো। দলের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছি। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেলে বিজয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী তিনি।
এ ছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান আইন সচিবের ছোট ভাই নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল সিরাজগঞ্জ জজকোর্টের পিপি শেখ আবদুুল হামিদ লাভলু। দলে রব আছে আইন পেশায় নিযুক্ত লাভলুর নিজস্ব ও পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডে শক্ত লবিং রয়েছে। লাভলু জানান, মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত এবং শিক্ষা নগরী শাহজাদপুর গড়ার স্বপ্ন তার আছে। তিনি মনোনয়ন পেলে আগামীতে নতুন নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে শাহজাদপুরবাসীর পাশে থাকতে চান।
বিএনপি: বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য কামরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিস সারোয়ার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তৃণমূল বিএনপিতে রয়েছে তার জনপ্রিয়তা। এরই মধ্যে তিনি কিছু নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। তবে, বিগত একটি নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তার বিরুদ্ধে দলের মধ্যে কিছুটা সমালোচনাও রয়েছে। সাবেক এমপি কামরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিস জানান, দলের তৃণমূলকর্মী ও নেতাদের নিয়ে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করে আসছি। বর্তমান সময়ে এখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ক্ষমতাসীনদের বাধা ও হামলা, মামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ধানের শীর্ষের জয় শতভাগ।
এদিকে, সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ও ৪ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা মরহুম ডা. এমএ মতিনের ছেলে ড. এমএ মুহিত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। শাহজাদপুর উপজেলা বিএনপির একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব তাকেই সমর্থন করছেন বলে প্রচার রয়েছে। ইতিমধ্যেই তিনি গণসংযোগ, ত্রাণ বিতরণ, পোস্টার, লিফলেট লাগিয়ে নির্বাচনী মাঠে শক্তিশালী প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। আগামীতে শক্তিশালী প্রার্থী দিয়ে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে চান দলীয় নেতৃত্ব। ড. এমএ মুহিত জানান, দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে বিএনপির পাশে থেকে কাজ করে আসছি। দলের নানা প্রতিকূলতায় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করে আসছি। নেতাকর্মীদের মাঝে আস্থা, বিশ্বাস ও সাধারণ মানুষের ভালোবাসা এবং সমর্থনে দলীয় মনোনয়ন পেলে এ আসনে বিএনপির বিজয় আনতে পারবেন বলেও তিনি আশাবাদী। তার দাবি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কার্যক্রমের স্বীকৃতি হিসেবে দল তাকেই মনোনয়ন দেবে।
এ ছাড়াও উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন সহিদ মাহমুদ গ্যাদনও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় শতভাগ আশাবাদী। দীর্ঘ ১৮ বছরে টানা তিন বার উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা এই নেতার জেলা বিএনপিতেও সক্রিয়তা রয়েছেন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে না পারলেও বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের মধ্যদিয়ে তিনি তার ভোটার জনপ্রিয়তার নজির রেখেছেন বলে দাবি তার সমর্থকদের। হোসাইন সহিদ মাহমুদ গ্যাদন জানান, আগামী নির্বাচনে জনপ্রিয়তা ও হিসাব-নিকাশ করেই দল প্রার্থী নির্ধারণ করবে। পূর্বের নির্বাচনের ফলাফল ও নিজ অঞ্চলের প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাই করে তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে এ আসনে ধানের শীর্ষের জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে এখানে বিএনপি প্রার্থীকেই সমর্থন জানাবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তাদের প্রায় ৪০ হাজার ভোট ব্যাংক বিএনপি প্রার্থীর বিজয়ের বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে। এ আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির তেমন তৎপরতা না থাকলেও উপজেলা সভাপতি মোক্তার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাহান চৌধুরী দু’জনই মনোনয়ন প্রাপ্তির আশায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আগামীকাল : সাতক্ষীরা-১