বাংলারজমিন

বিদ্যুৎ বিলের চাঁদা নিলেন প্রধান শিক্ষক অথচ বকেয়ার দায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে

১৭ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন

বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য প্রধান শিক্ষক দু’মাসে দু’দফায় চাঁদা তুলেছেন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। অথচ বকেয়া বিল না দেয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৩৫নং বালিয়াডাঙ্গার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্কুলের বিদ্যুৎ বিল সরকারিভাবে পরিশোধ করা হলেও প্রধান শিক্ষক মিতা ঘোষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের নাম করে দু’দফায় ১৫ টাকা হারে চাঁদা উত্তোলন করেন। এদিকে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় গত দু’মাস আগেই ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে দুই দফায় চাঁদা তুলে কি করলেন প্রধান শিক্ষক মিতা ঘোষ? বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সানি ও তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিলের কথা বলে সব ক্লাসের শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রধান শিক্ষিকা দু’দফায় ১৫ টাকা করে চাঁদা নিয়েছেন। অথচ এই টাকা নেয়ার পরও বিল পরিশোধ করা হয়নি। ফলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণে ২ মাস ধরে তাদের বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ নেই। গরমে ক্লাস করতেও সমস্যা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে ৪ বছর ধরে কোনো পরিচালনা কমিটি নেই। ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২১০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। ৪ বছর ধরে তিনি পরিচালনা কমিটি না থাকায় প্রধান শিক্ষক এডহক কমিটি গঠন করে নিজের ইচ্ছামতো সরকারি স্লিপের টাকা, অনুদানের টাকা, বিদ্যালয়ের নিজস্ব পুকুরের আয়ের টাকা ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে আদায়কৃত বিদ্যুৎ বিলের টাকা তছরুপ করছেন। অভিযোগ রয়েছে প্রতি বছর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠন করার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে সেই টাকাও আত্মসাৎ করা হচ্ছে। ওই স্কুলের শিক্ষকরা জানান, কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরীক্ষার ফি বাদে অন্যকোনো খাতে টাকা নেওয়া যাবে না বলে বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ বিলসহ নানা খাতে টাকা নেন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি সামসুর রহমান অভিযোগ করেন, গত ৪ বছর ধরে এই বিদ্যালয়ে কোনো পরিচালনা কমিটি নেই। তিনি এর আগে সভাপতি ছিলেন। গত ২০১৭ সালের শেষের দিকে নির্বাচন করবে বলে প্রধান শিক্ষক মিতা ঘোষ তফসিল ঘোষণা করেন। বেশ কয়েকজন ২৫০০ টাকা করে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন। যাচাই বাছাই ও মনোনয়ন প্রত্যাহার করার সময় শেষ হলে প্রধান শিক্ষক বলেন নির্বাচন ১০ দিন পরে হবে। সেই থেকে নির্বাচন তিনি আর করেননি। তার নিজের ও পলাশ নামে আরেক জনের কাছ থেকে মনোনয়ন বিক্রি বাবদ ৫ হাজার টাকা নিয়ে তিনি ৫ মাসেও পরিশোধ করেননি। বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষক মিতা ঘোষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে  টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, অন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এটি করেন। কমিটি গঠন নিয়ে তিনি বলেন, বেশ কয়েকবার স্কুল কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে দুটি গ্রুপ থাকায় তা করা হয়নি। মিতা ঘোষ জানান, শিক্ষার্থীদের কিছু অভিভাবক তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মো. আক্তারুজ্জামান জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল বাবদ বা অন্য কোনো কারণে টাকা নেওয়ার এখতিয়ার নেই। তিনি আরো জানান, এ ধরনের অভিযোগ পেয়ে আমি বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠন না করা বিষয়ে তিনি সত্যতা পেয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status