প্রথম পাতা

কোটা আন্দোলনের দুই নেতাকে হত্যার হুমকি প্রতিবাদে বিক্ষোভ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

১৭ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের গড়ে ওঠা প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের  কেন্দ্রীয় দুই যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর ও রাশেদ খানকে ‘হত্যার হুমকি’ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নেতার বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে নুরুল হক নূরের ১১৯ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন তিনি। হত্যার হুমকিদাতা ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী ও চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম হাসান লিমন। যদিও হত্যার হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা। এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতাকে হত্যার হুমকি দেয়ার প্রতিবাদে গতকালও উত্তপ্ত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন বিপুল পরিমাণ ছাত্রছাত্রী। মিছিল শেষে বেলা পৌনে ২টার দিকে শাহবাগ থানায় আন্দোলনকারীরা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ জিডি না নিয়ে আন্দোলনকারীদের কাছে সময় চায়। জিডি না নেয়ার বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ‘তাদের লিখিত অভিযোগ রাখা হয়েছে। এটি যেহেতু শুধু থানার বিষয় নয়, বিশ্ববিদ্যালয়েরও তাই বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগ নেতারা আমাদের হত্যার হুমকি দেন। আমরা এ বিষয়ে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি। আমাদের অভিযোগ শুনেছে। আধা ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছে কিন্তু জিডি নিতে বলা হলে তারা বলেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া জিডি নিতে পারব না।’ হুমকি বা হয়রানিতে আন্দোলন থামবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হলেই কেবল আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসব।’ এসময় যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, ‘প্রথমত আমি রাষ্ট্রের একজন নাগরিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। আমাদের জিডি না নিয়ে পুলিশ দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে। গণতান্ত্রিক দেশে আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।’ আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘নিরাপত্তা না দিয়ে পুলিশ যে আচরণ দেখিয়েছে, তা আমরা ভালোভাবে নিইনি। আমাদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া পুলিশের কর্তব্য।’
এর আগে মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে নুরুল হক নুরের থাকা মুহসীন হলের ১১৯ নম্বর কক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি, মহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ফাহিম লিমন-এর নেতৃত্বে ১৫-২০ জন আসে। এ সময় নূরের কক্ষে আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানও ছিলেন। ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে বাপ্পী হাফ প্যান্ট পরা ছিল। তার পকেটে পিস্তল ছিল বলেও অভিযোগ করেন নুর। এসেই বাপ্পী, সানী ও লিমনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের হুমকি দিতে থাকে। তারা বলেন, ‘আন্দোলন করছিস তোরা সরকারের বিরুদ্ধে। তোদের একটাকেও ছাড়া হবে না। প্রজ্ঞাপনটা জারি হলে তোদের কুত্তার মতো পিটানো হবে। কুকুরের মতো গুলি করে রাস্তায় মারা হবে। তোরা তো কেউ বাঁচবি না। বেশি বাড়াবাড়ি করিস না। শেষবারের মতো মা-বাবার দোয়া নিয়ে নিস। শুধু প্রজ্ঞাপনটা জারি হোক। তোদের কী অবস্থা করি। এসময় তারা বারবার তেড়ে আসেন। যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমি এবং রাশেদ রাতে আমার কক্ষে ছিলাম। রাতে হঠাৎ চারুকলা অনুষদের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লিমন ফোন দিয়ে থ্রেট দেয় যে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে। পিটাই নামাই দেওয়া হবে। আমরা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। একপর্যায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি ফোন নিয়ে বলেন, ছাত্রদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে মারছি। তোদের মতো পোলাপানকে খেয়ে দিতে দুই সেকেন্ডও লাগে না। তোগোরে গুলি কইরা মারি নাই শুধু কিছু সিনিয়রের নিষেধ ছিল।
তার ১০ মিনিট পরে রুমে পিস্তল নিয়ে এসে বলে তোরা মা-বাবা থেকে দোয়া নিয়ে নে। তোরা বাঁচবি না। তোদের গুলি করে মারবো। এসময় তারা আমাকে মারতে আসে। তারা আমার মোবাইল ফোন ও নিয়ে যায়, যাতে আমি রেকর্ড করতে না পারি। আমরা এখন জীবননাশের হুমকির মুখে আছি।’ এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ বাপ্পী বলেন, ‘তাদের কোন হুমকি দেয়া হয়নি। তাদের ফেসবুক গ্রুপে রিপোর্ট করে লিমনের আইডি নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তাই আমি জানতে চেয়েছি। এখন যদি বলে তাদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, তাহলে আমার কী করার আছে।’ এদিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের হত্যার হুমকির প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। মিছিলটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে টিএসসির রাজ ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমাদেরকে এর আগে বিভিন্ন সময়ে হত্যার হুমকি দিলে আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু আমাদের কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলো না। ছাত্রলীগের কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ইয়াবা ব্যবসায়ী আমাকে ও রাশেদকে হত্যা করে ফেলার উদ্দেশ্যে আমার কক্ষে হামলা চালিয়েছে। আমি ৯৯৯ নাম্বারে কল করেও কোনো নিরাপত্তা পাইনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করলে তারা কিছুক্ষণ পর রেসপন্স করেন। আমার হলের প্রাধ্যক্ষ স্যার রাতেই আমার কক্ষে এসেছেন এবং সকাল পর্যন্ত আমার কক্ষে ছিলেন। যেন কেউ কোনো ক্ষতি করতে না পারে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার দাবানল নিয়ে খেলা করছে। এসময় তিনি হামলাকারীদের অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। এদিকে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট পালন করেছে চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেছে। তবে পূর্বনির্ধাতির পরীক্ষাসমূহের কিছু ব্যতীত অধিকাংশই অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে গত মঙ্গলবার ও বুধবার রাতে দুই দফায় আন্দোলনকারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক ‘কোটা সংস্কার চাই (সকল চাকরি পরীক্ষায়)’ নামক গ্রুপটি হ্যাক করা হয়েছে। এরপর দুই বারই গ্রুপটি হ্যাকারের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘তারা গত রাত ৪টার দিকে আমাকে জানিয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। এবং প্রাধ্যক্ষ সকাল ৭টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ছিলেন। আমরা কোনো শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয় বললে অবশ্যই দেখি। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা হল প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status