প্রথম পাতা

১০৫ কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

১৭ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

১০৫টি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচন  এবং ৪৫টি কেন্দ্রে হওয়া গুরুতর অনিয়মের তদন্ত করে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে নৌকার জয় হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, খুলনাবাসী ভোট ডাকাতির নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র আরো সংকটে পড়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। নির্বাচনোত্তর প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু এ কথা বলেন। গতকাল সকাল ১০টায় নগরীর কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
কেসিসি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গেছে, শেখ হাসিনার সরকার ও তার অনুগত নির্বাচন কমিশনের অধীনে দেশে কোনো অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। কারাবন্দি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, অবরুদ্ধ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম আরো বেগবান হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খুলনা সিটি নির্বাচনকে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির এক নতুন মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। বলেন, এ ধরনের একটি প্রহসনের আয়োজনের মধ্যদিয়ে নৈতিক পরাজয় হয়েছে সরকারের। নৈতিক পরাজয় হয়েছে নির্বাচন কমিশনের। আর বিজয় হয়েছে গণতন্ত্রের চলমান আন্দোলনের।
মঞ্জুকে নিয়েই পথ চলতে চান খালেক-বিভিন্ন গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বরাত দিয়ে ছাপা হওয়া এই নিউজ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মঞ্জু বলেন, তিনি ডাকাতির নির্বাচনের প্রধান ডাকাত। তাদের পাশে থেকে সহায়তা করার কোনো মানসিকতা নেই। এই শহরের মানুষ ভোটের দিন ভোট দিতে পারেনি। কেন্দ্রে গেলে বলা হয়েছে, ব্যালট শেষ হয়ে গেছে। কারো কারো আঙুলে কালি লাগিয়ে বলা হয়েছে, বাড়ি চলে যান আপনার ভোট হয়ে গেছে। কারো হাত থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মেরে বাক্সে ফেলা হয়েছে। যে শহরের মানুষ ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করেনি, তিনি কীভাবে ওই ভোটারদের সামনে যাবেন। তিনি কীভাবে তাদের সামনে মুখ দেখাবেন।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় শক্তিকে নিয়োজিত করে ভোটের ফলাফল পক্ষে নেয়া হয়েছে। বিজিবি ও র‌্যাব ছিল নিষ্ক্রিয়। তারা গাড়িতে বসে ঘুমিয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ছিলেন নির্বিকার। আর পুলিশ ছিল অত্যন্ত সক্রিয়। বিশেষ একটি ব্যাচের সকল পুলিশকে খুলনায় এনে একটি অভিজাত হোটেলে রাখা হয়। খুলনায় ডিউটি না থাকা সত্ত্বেও তারা ভোটের দিন সরকারি পোশাক পরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নৌকার পক্ষে ভূমিকা পালন করেছেন। বিএনপির পোলিং এজেন্ট, কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দিতে তারা কাজ করেছে।
সিইসি, নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও আজ্ঞাবহ বলে অভিহিত করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। সারা দিনে নির্বাচনের নানা অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করতে তিনি রিটার্নিং অফিসারকে অসংখ্যবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। কেন্দ্রে না গিয়েই তারা বলে দিলেন, দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী ও প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, শেখ মুজিবর রহমান, সৈয়দা নার্গিস আলী, বিজেপির সভাপতি অ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, জেপি জাফর সভাপতি মোস্তফা কামাল, জামায়াতে ইসলামীর মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম ও খান গোলাম রসুল, বিজেপির সিরাজউদ্দিন সেন্টু, মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আক্তার জাহান রুকু, খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নাসিরউদ্দিন, বিএনপি নেতা মোল্লা আবুল কাশেম, স. ম. আব্দুর রহমান, সৈয়দা রেহানা ঈসা, মনিরুজ্জামান মন্টু, অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপু, সিরাজুল হক নান্নু, এহতেশামুল হক শাওন, ইউসুফ হারুন মজনু, ইকবাল হোসেন খোকন, শামসুজ্জামান চঞ্চল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
‘এটা ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ভোটগ্রহণ’
নির্বাচনোত্তর পৃথক পৃথক বিবৃতি ও প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পর্ার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুর রহমান মুশফিক বলেন, ‘আমার দেখা এটি ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ভোটগ্রহণ হয়েছে। আমি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলাম।’ অপরদিকে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক এক প্রেস ব্রিফিং করে বলেন, ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন ও দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা যায় না। যার প্রমাণ এ নির্বাচনে দেখেছেন আপনারা। বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি, ভোটারদের হয়রানি, ভোটারকে ভোট না দিতে দেয়া, এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেয়া, এজেন্টদের মারধর, পুলিশ কর্তৃক জাল ভোট প্রদানে সহযোগিতা। নিরাপত্তার ভয়ে অনেক ভোটার ভোট কেন্দ্রেই আসেনি। অপর প্রার্থী সিপিবির মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবু এক বিবৃতিতে বলেন, ভোট গ্রহণের দিন সকাল থেকেই দেখতে পেলাম অনেক এলাকায় সরকার দলীয় ছাড়া অন্য দলের এজেন্টরা দাঁড়াতেই পারেননি। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এলাকায় এলাকায় মহড়া, রিকশায় পোস্টার লাগিয়ে ভোটার পরিবহণ ও মোড়ে মোড়ে জটলা পুরো নির্বাচনী পরিস্থিতিকে সাধারণ মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করে তোলে। এরপর কয়েকটি এলাকায় বিরোধী দলের এজেন্টদের থাকতে না দেয়া, ভাঙচুর, ভোটকেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মারার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ ভোট প্রদানের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন এক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কোথাও কোথাও নির্বাচন কমিশনকে অসহায় থেকে সরকারি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ক্রীড়ানকে পরিণত হতে দেখা গেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status