শেষের পাতা

আরো বেড়েছে পিয়াজের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১২ মে ২০১৮, শনিবার, ৯:২৭ পূর্বাহ্ন

গত সপ্তাহে দাম বৃদ্ধির পর রাজধানীর বাজারে আরো বেড়েছে পিয়াজের দর। সপ্তাহের ব্যবধানে পিয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে সবজির দাম বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে
। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সারা দেশে চলছে বৃষ্টি। যার প্রভাব কাঁচাবাজারে পড়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে রমজানের আগেই বেগুনের দাম হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। তবে রমজানে বেশি দরকারি ছোলা, চিনিসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়ে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টি ও আসন্ন রমজান মাসকে কেন্দ্র করেই পিয়াজসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে বলে খুচরা ব্যবসায়ীদের অজুহাত। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজার থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে সম্প্রতি রমজান মাসকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে দ্রব্যমূল্য না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন দক্ষিণ ঢাকার মেয়র সাঈদ খোকন। কিন্তু বাজারের চিত্র উল্টো। অথচ পিয়াজ আমদানির প্রধান উৎস ভারতের বাজারে কোনো অস্থিরতা নেই। দেশে উৎপাদন হয়েছে পর্যাপ্ত। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই পিয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে বলে জানান ভোক্তা সাধারণ।

বাজারে দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানিকৃত এলসি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি। এছাড়া রাজধানীর শ্যামবাজারসহ অন্য পাইকারি বাজারে দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। ভারত থেকে আমদানি করা এলসি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে।

টিসিবির হিসাবে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ও আমদানিকৃত পিয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে দেশি ও আমদানিকৃত পিয়াজের দাম ছিল যথাক্রমে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা ও ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। গত এক মাস ধরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম বাড়ছে। টিসিবির হিসাবে গত এক মাসে পিয়াজের দাম বেড়েছে ৩৩.৭৭ শতাংশ। এছাড়া রসুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। দেশি রসুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও আমদানিকৃত রসুন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শ্যামবাজার বণিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ মহসিন উদ্দিন (ভুলু) মিয়া বলেন, পিয়াজের দাম বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে বৈরী আবহাওয়া। পাশাপাশি বাংলাদেশের উৎসাহী জনতা রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই কেনাকাটা শুরু করে। আর সে কারণেই বাজারে দাম বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের।
এই বাজারের মেসার্স আমানত ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী জিএস মানিক বলেন, বাংলাদেশের পিয়াজের বাজার সম্পূর্ণ ভারতের ওপর নির্ভরশীল। তারা পিয়াজের দাম বাড়ালে বাংলাদেশে দাম এমনিতেই বেড়ে যায়। ভারতীয় পিয়াজের দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকলে ব্যবসায়ীরা দেশি পিয়াজের সরবরাহ কমিয়ে দেন। দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশি পিয়াজ ছাড়তে শুরু করে। ফলে প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের সকল বাজারে।

কাওরান বাজারে আসা চাকরিজীবী নাসিম রহমান বলেন, আগের তুলনায় পিয়াজের দাম অনেকটাই বেড়েছে। শুধু পিয়াজ নয়, পাশাপাশি রসুন ও আদাসহ সবকিছুরই বাজারই চড়া। ব্যবসায়ী এবং মজুতদারদের কারসাজিতে প্রতিবছর রমজান মাসের আগে পিয়াজের দাম বেড়ে যায়। সে কারণে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের বিপাকে পড়তে হয়। এটা যেন সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে।

বাজারে গত সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া চিচিঙ্গার দাম বেড়ে ৬০-৭০ টাকা হয়েছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে ধুন্দল। বাজার ও মান ভেদে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা কেজি। তবে পেঁপে আগের সপ্তাহের মতোই ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সিংহভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপরে। ৫০ টাকা কেজির নিচে শুধু করলা ও পটল মিলছে। গত সপ্তাহে ৩৫-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পটলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বরবটি ও ঢেঁড়স আগের সপ্তাহের মতো ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দাম অপরিবর্তিত থাকা অন্য সসবজির মধ্যে- পাকা টমেটো ৪০-৫০ টাকা, করলা ৪৫-৫০ টাকা, গাজর ৪০-৫০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে লাল শাক, সবুজ ডাটা শাক, পাট শাক, কলমি শাক আগের সপ্তাহের মতো ৫-১০ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে। পুঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লাউ শাক।

সবজি বিক্রেতা তাহের বলেন, রমজানের সময় সবজির দাম বাড়বে এটা নতুন কিছু না। প্রতিবারই রমজান আসলে সব সবজির দাম বাড়ে। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি।

এদিকে বাজার ভেদে সাদা বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ১৩০-১৪০ টাকা। আর গত সপ্তাহে ১৫০-১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া লাল কক মুরগির দাম বেড়ে হয়েছে ১৮০-১৮৫ টাকা। বয়লার মুরগি ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন বলেন, আগামী সপ্তাহেই রমজান শুরু হবে। তাই এর শুরুতে মাংসের চাহিদা একটু বেশিই থাকে। তাই এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status