প্রথম পাতা

প্রজ্ঞাপন জটিলতায় আটকে গেছে নিয়োগ

দীন ইসলাম

৯ মে ২০১৮, বুধবার, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

কোটা বাতিলের ঘোষণার পর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় আটকে গেছে দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া। জাতীয় সংসদে কোটা বাতিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অঘোষিতভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) ৩৭তম বিসিএসের ভাইভা শেষ করেও কোটা সংস্কার প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় এ সংক্রান্ত কাজ বন্ধ রেখেছে। এ ছাড়া ৩৬তম বিসিএসের রেজাল্ট হলেও সরকারি আদেশ এখনো জারি করা হয়নি। পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, নন-ক্যাডার বিভিন্ন পদে ভাইভা হচ্ছে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে। এখন চলছে সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের ভাইভা। সম্প্রতি পুলিশ হাসপাতালের জন্য নার্স নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কৃষি-মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী নিয়োগ চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না কোটা সংস্কার প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ার কারণে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরই এসব নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সরকারি চাকরি নিয়োগের ৮০ শতাংশই হতো কোটায়। তবে, সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী কোটায় পদ ছিল ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলা ও নারী কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটা পাঁচ শতাংশ এবং এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা।
সমপ্রতি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। সেখানে কোনো বিশেষ কোটার কথা না বলে সব মিলিয়ে কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি তোলা হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করে। তখন ঢাকার বাইরেও সড়ক বন্ধ করে অচল করে দেয়া হয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এরপর জাতীয় সংসদে কোটা তুলে দেয়ার পক্ষে মত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংস্কার করতে গেলে, কয়দিন পর আরেক দল এসে বলবে আবার সংস্কার চাই। কোটা থাকলেই হবে সংস্কার। আর না থাকলে সংস্কারের কোনো ঝামেলাই নাই। কাজেই কোটা পদ্ধতি থাকারই দরকার নাই। এখনো পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি।

কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন চূড়ান্ত বিবেচনাধীন: জনপ্রশাসন সচিব
কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি সরকারের চূড়ান্ত বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কোটার প্রজ্ঞাপন জারির সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোটা বাতিলের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য বা অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন বা নির্দেশ দিয়েছেন সেটার চূড়ান্ত রূপ, যাকে আপনারা বলেন প্রজ্ঞাপন বা সার্কুলার, সে কাজটা একটু বাকি আছে। সেটা কোন পর্যায়ে আসবে সেজন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে এটা কি বলা যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সরকারের চূড়ান্ত বিবেচনাধীন আছে। কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সোমবার পর্যন্ত স্থগিত ছিল’- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল বলেন, যখন ছাত্ররা আন্দোলন করছিল, তখন সরকারের প্রতিনিধিরা গেলে তাদেরকে বলা হয় ৭ই মে পর্যন্ত এক মাস আন্দোলন স্থগিত করা হবে। দেখা গেল সেই কথা বলার পরও আন্দোলন থামেনি। তা হলে আমার বিবেচনায় ৭ তারিখ তো আর থাকল না। তারা যদি সেদিন আন্দোলন বন্ধ করতো তাহলে আজকে বলা যেত ৭ তারিখে কেন হলো না। এটা ঠিক কি-না? তিনি বলেন, এই বিষয়টা সরকারের মাথার মধ্যে আছে। সরকারের বিবেচনায় আছে। প্রধানমন্ত্রী যখনই নির্দেশ দেবেন সেটা বাস্তবায়িত হবে। কোটার বিষয়টি দেখার জন্য কমিটি গঠনের কোনো নির্দেশনা এসেছে কি না- জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা এখনও...চূড়ান্তভাবে না। আমরা যে কোনোভাবে প্রস্তুত- কমিটি লাগলে করব, আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হলে করব। সরকার প্রধান যেভাবে বলবেন সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নেব। পুরো প্রক্রিয়াটি কী হবে জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক খান বলেন, এত তো খোঁচানো যাবে না। আমি এখন একটা বললাম, সেটা থেকে কালকে একটু ব্যত্যয় হলো, পরে আপনি বলবেন, গতকাল এটা বলেছিল আজকে আবার এটা হচ্ছে। এত অ্যাডভান্স কথা বলার সুযোগ নেই। কোটা বাতিল হলেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হচ্ছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন বাতিলের কথা বলেছেন তার মুখ থেকেই আমরা শুনেছি তিনি সংসদে বলেছেন, যারা নৃ-গোষ্ঠী ও যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। ব্যবস্থার রূপরেখা আমরা এখনও সেভাবে প্রকাশ করিনি। সেটি আমাদের মাথায় আছে। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই সেটা চিন্তা করছেন। কোটা নিয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি হবে এটা কি বলা যায়- এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা তো আশাবাদী, দ্রুত হওয়াই ভালো। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিনই এটা নিয়ে কাজ করি। প্রতিদিনই কাজ করি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status