শিক্ষাঙ্গন

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় তিন মাস ধরে বন্ধ ৭৫ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ

বেরোবি প্রতিনিধি

২৭ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ২:২৭ পূর্বাহ্ন

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) প্রায় ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার ভিত্তিক দুটি প্রকল্প শেখ হাসিনা ছাত্রী হল এবং ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ  অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবনের নির্মাণ কাজ তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। অথচ প্রকল্পের কাজ দুটি শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে। এখনও প্রকল্প দুটির ২০ ভাগ কাজও শেষ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বহীনতা, সমন্বয়ের অভাব, ছাত্রলীগের চাঁদাবাজিসহ নানান কারণে প্রকল্প দুটি মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
অন্যদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, ৮ কোটি টাকা বকেয়া বিল উপাচার্য পরিশোধ না করা এবং বারবার তাগাদা দিয়েও টাকা না পাওয়ায় তারা উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে তাদের অপারগতার কথা জানিয়ে তিন মাস আগে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা ছাত্রী হল এবং ২৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ওই বছরের ২১ জুলাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কাজ দুটি চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা।
একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ তলা বিশিষ্ট ছাত্রী হল নির্মাণ করার কথা ছিল। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজেই হলটির প্রতিটি ফ্লোরে আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য কাপড় ধোয়া, রান্নাঘর, জিমন্যাসিয়ামসহ অত্যাধুনিক সকল ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ৪ঠা জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্প দুটির নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিপুল অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় নির্মাণ সামগ্রী আনতে বাধা প্রদানের মাধ্যমে কাজের গতি কমিয়ে দেয়া হয়। এরপর ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা সরাসরি চাঁদা দাবি করে না পাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করার ঘটনায় নির্মান কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাদের নামে চাঁদাবাজির মামলাও হয় সেই মামলা এখনও চলছে। তারপরেও নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকে। এর মধ্যে তৎকালীন উপাচার্য ড. নুরন্নবীর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ১০ মাস আগে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ১০ মাসে উপাচার্য একবারের জন্যেও নির্মাণাধীন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেননি বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা জানান। বরং প্রকল্প দুটির ব্যাপারে তার এক ভাগিনাকে কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা নিয়ে তিনি উঠেপড়ে লাগেন। শুধু তাই নয়, প্রকল্প দুটি সম্পন্ন হোক সে ব্যাপারে তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলতি বিল হিসেবে ৮ কোটি টাকার বিল দাখিল করলেও তিনি বিল পরিশোধ করার কোন পদক্ষেপ নেননি। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বারবার তার কাছে ধরনা দিলেও তিনি পদক্ষেপ না নেয়ায় বাধ্য হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লিখিতভাবে জানিয়ে তিন মাস আগে কাজ বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার।
প্রকল্প দুটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত সাইট ইঞ্জিনিয়ার মামুন জানান, দুটি প্রকল্পের ভিত্তির কাজ শেষ এখন শুধু একতলা করে ঢালাই করে উপরে যাওয়া। ৮ কোটি টাকা বকেয়া বিলের কথা এ কর্মকর্তাও নিশ্চিত করেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ছাত্রী হল এবং বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার নামে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে বর্তমান প্রশাসন আসলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চাইছেন। এখানে যদি কোন ত্রুটি থাকে অচিরেই তা নিরসন করা দরকার।
এদিকে সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী শরীফ পাটোয়ারী বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা।
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে সরাসরি তাঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে উপাচার্যের পিএস অপেক্ষা করতে বলেন। প্রায় দুই ঘন্টা অপেক্ষা করার পর তিনি বলেন এখন উপাচার্য দেখা করতে পারবেন না। তিনি একই দিনের সাড়ে ৪টায় যেতে বলেন। সাড়ে ৪টায় দেখা করতে গেলে তিনি জানান উপাচার্য এখন দেখা করতে পারবেন না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status