অনলাইন

চোপ! গণতন্ত্র চলছে

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

২৭ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ১২:৩৫ অপরাহ্ন

অবশেষে মূষিক প্রসব হল। পর্বতের মতো কোনও বিষয় অবশ্য ছিল না। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করে তুলতে নির্বাচন কমিশনের তরফে পর্বতপ্রমাণ চেষ্টা দেখা গিয়েছে এমন দাবি কেউ করবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় বিস্তর। কিন্তু বিভিন্ন বেনজির বা বিরল কাণ্ড ঘটিয়ে খেলার পরে রাজ্য সরকারের দাবি অক্ষরে অক্ষরে মেনে নিয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দেবে, ভোটগ্রহণ গোটা রাজ্যে এক দফাতেই হবে, এমনটা মোটেই প্রত্যাশিত ছিল না।

নির্বাচন কমিশন এর আগে যে নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছিল, তাতে তিন দফায় ভোটগ্রহণের কথা বলা হয়েছিল। কিছু একটা ভেবেই নিশ্চয়ই তিন দফার ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন। তিন দফায় ভোট হলে নির্বিঘ্ন হবে নির্বাচন— এমন ভাবনাই নিশ্চয় ছিল। সেই ভাবনা আচমকা অন্তর্হিত হল কেন? এই প্রশ্নের জবাব কারও কাছেই পাওয়া যাচ্ছে না।

গোটা রাজ্যে যদি একই দিনে ভোট হয়, তা হলে বুথে বুথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা যে কঠিন, তা বলাই বাহুল্য। সে কথা মাথায় রেখেই তিন দফায় ভোট নেওয়ার নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হয়েছিল প্রথমে। এ বার কমিশন জানিয়ে দিল, তিন দিনে নয়, এক দিনেই পঞ্চায়েতে সমস্ত আসনে ভোটগ্রহণ হবে। তা যদি হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা-পরিস্থিতির স্বাভাবিকতা রক্ষা করতে পারবে তো নির্বাচন কমিশন?পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে এ বার নাটকের অন্ত নেই পশ্চিমবঙ্গে। ঘটনাপ্রবাহের প্রতিটি মোড়ে যেন এক একটি বেনজির নাটক অপেক্ষায়। এত দিনে শুধুমাত্র মনোনয়ন জমা পর্ব শেষ হয়েছে। গুলি, বোমা, সন্ত্রাস, সংঘর্ষ, মৃত্যু, আইন-আদালত, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, শাসক-বিরোধী চাপানউতোর, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ, নতুন করে মনোনয়ন— বহু রকম নাটক এই নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যেই দেখে নিয়েছেন বাংলার মানুষ। এত কাণ্ড হয়ে যাওয়ার পরে কমিশন জানাবে, এক দিনেই গোটা রাজ্যে ভোটগ্রহণ হবে, এমনটা প্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু অপ্রত্যাশিত পথেই এগোল নির্বাচন কমিশন। প্রশ্ন হল, রাধা যদি নাই নাচে, সাত মন তেল পুড়িয়ে লাভ কী হল?বিরোধীদের ভূরি ভূরি অভিযোগ এই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে। এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগের সুষ্ঠু সুরাহা নির্বাচন কমিশনার দিতে পারেননি। বিরোধীদের বয়ান অন্তত তাই বলছে। নির্বাচন কমিশনার আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন, বিরোধীদের কথা বা দাবি-দাওয়া খুব মন দিয়ে শোনার সময় বা অবকাশ তাঁর নেই। যে নির্বাচনে মনোনয়নকে ঘিরেই এত অশান্তি হয়, সেই নির্বাচনে ভোটগ্রহণটা যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে না হয়, তা হলে অশান্তি এবং ভোট লুঠ কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, তা কল্পনা করা কষ্টকর নয়। তা সত্ত্বেও ভোট এক দিনেই হবে। কারণ, শাসক তেমনই চান। বিরোধী অনেক প্রশ্ন তুলতে পারেন, আপত্তি জানাতে পারেন। কিন্তু সে সব নিয়ে ভাবার সময় আপাতত নেই। কারণ— চোপ! গণতন্ত্র চলছে।

সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status