দেশ বিদেশ

বিড়ি শিল্প বন্ধের প্রস্তাবে সারা দেশে প্রতিবাদ

স্টাফ রিপোর্টার

২৭ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

দুই বছরের মধ্যে বিড়ি শিল্প বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন বিড়ি শ্রমিক ও বিড়ি ভোক্তারা। অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের পরপরই দেশজুড়ে চলছে তাদের প্রতিবাদ, গণস্বাক্ষর গ্রহণ ও মানববন্ধনের মতো নানা কর্মসূচি। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও  প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব প্রতিবাদ সমাবেশে বিড়ি শ্রমিক ও ভোক্তারা বলছেন, সিগারেট চালু রেখে কোনোভাবেই বিড়ি বন্ধ করতে দেয়া হবে না। কারণ বিড়ি শিল্পের সঙ্গে হতদরিদ্র ও নিম্ন শ্রেণির মানুষ জড়িত। নদী ভাঙা, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা শ্রমিকরা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এটি বন্ধ করে দেয়া হলে এসব ভাগ্যাহত মানুষের জীবনে চরম দুঃখ-দুর্দশা নেমে আসবে।
প্রতিবাদকারীরা বলছেন, ভারতে বিড়ি শিল্পকে কুটির শিল্প হিসেবে ঘোষণা করে তার সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে বিড়ি শিল্প বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তারা বলেন, ভারতে প্রতি হাজার বিড়িতে শুল্ক নেয়া হয় ১৪ টাকা বাংলাদেশে ২৫২ টাকা। তারা বাংলাদেশে বিড়িকে কুটির শিল্প ঘোষণা এবং প্রতি হাজার বিড়িতে ১৪ টাকা শুল্ক নির্ধারণের দাবি জানান। এদিকে অর্থমন্ত্রী ঘোষণায় গত ৭ই এপ্রিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিড়ি শ্রমিকরা মহা সমাবেশ করেছে। সেখানে অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তা প্রত্যারের দাবি জানানো হয়। না হলে বৃহত্তর আন্দোনের ঘোষণা দেয়া হবে বলে শ্রমিক প্রতিনিধিরা জানান। গত ২৩শে এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে মহাসমাবেশ করেছেন তামাকচাষি ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, অর্থমন্ত্রী একতরফাভাবে বৃটিশ- আমেরিকান কোম্পানির পক্ষ নিয়ে বিড়ি শিল্প বন্ধের পাঁয়তারা করছেন। তিনি বিড়ি বন্ধ করে বৃটিশ- আমেরিকান কোম্পানিকে একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন। তার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে আমরা বৃহত্তর রংপুরের তামাক  চাষি ও ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বিপদে পড়ে যাবো। কারণ এই অঞ্চলে তামাক হচ্ছে একমাত্র ফসল। তারা বলেন, কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করে এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে লাখ লাখ তামাকচাষি বিপাকে পড়বেন। বিড়ি ও সিগারেট একই সময়ে বন্ধ করার দাবি জানান তামাকচাষি ও ব্যবসায়ীরা। সিগারেট শিল্প রেখে দুই বছররে মধ্যে বিড়ি শিল্প বন্ধ করা হলে সারা দেশে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে ময়মনসংিহরে বিড়ি শ্রমিক ও ভোক্তারা। ভারতের মতো বাংলাদেশে বিড়ি শিল্পকে কুটির শিল্প ঘোষণা করা এবং বিড়ি শিল্প বন্ধ না করার দাবিতে মানববন্ধন করেেছ নেত্রকোনার বিড়ি ভোক্তা ও শ্রমিকরা। এছাড়াও গণ-স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়েছে।  মঙ্গলবার নেত্রকোনা প্রেস ক্লাবে এই মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
দুই বছররে মধ্যে বিড়িশিল্প বন্ধ এবং সিগারেট শিল্পকে ২২ বছর সময় দেয়ার প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জে এক প্রতিবাদ ও গণ-স্বাক্ষর গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জ পৌর সুপার মার্কেটে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় উপস্থতি ছিলেন- কিশোরগঞ্জ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বিড়ি ভোক্তা পক্ষের মোফাজ্জল, বিড়ি ব্যবসায়ীর পক্ষে রতন মিয়া, শ্রমিকলীগ  নেতা- কামরুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ মোটরচালক শ্রমিকলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম। কিশোরগঞ্জের বিড়ি ভোক্তা পক্ষ, বিড়ি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা এই প্রতিবাদ সভা ও গণ-স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।  
বক্তরা বলেন,, বিড়ি শিল্প ২ বছররে মধ্যে বা ২০২০ সালে এবং সিগারেট শিল্প ২০ বছররে মধ্যে বা ২০৩৮ সালে বন্ধ করা হবে। এটা একটি বৈষম্যমূলক প্রস্তাব। এতে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন।  তারা বলনে, ভারতে বিড়িকে কুটির শিল্প ঘোষণা করা হয়েছে এবং হাজার প্রতি ট্যাক্স ১৪ টাকা এবং বাংলাদেেশ হাজার প্রতি ট্যাক্স ২৫৬ টাকা দিতে হয়। বৃটিশ-আমরেকিান টোব্যাকো ১৯২৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। তাদের নিম্ন স্লাবের সিগারেট (ডার্বি, হলিউড এবং পাইলট) ৩৫ টাকা বিক্রির কথা থাকলেও ২৭ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে বিড়ি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে এক হাজার মানুষ স্বাক্ষর করে।
সিলেটে প্রতিবাদ সমাবশে, গণস্বাক্ষর অনুষ্ঠান
বিড়ি শিল্প বন্ধ না করা এবং বিড়ি ও সিগারেটের মধ্যে  বৈষম্য দূর করার প্রতিবাদে সিলেট অঞ্চলে ব্যবসায়ী ও বিড়ি ভোক্তাদের উদ্যোগে গত বৃহস্পতবিার সিলেট নগরীর ধোপা দিঘির পাড়ে হাফিজ কমপ্লেক্সের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবশে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। জেলা মোটর শ্রমিক ইউনয়িন ১৩২৬ এর সাধারণ সম্পাদক ইনছার আলীর সভাপতিত্বে ও রিকশা শ্রমিক সংঘের সভাপতি শাহ্‌জাহান মাস্টারের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ী কামাল আহমদ। ভোক্তা পক্ষের সভাপতি মোঃ জাকির সহ বিপুল সংখ্যক ভোক্তারা উপস্থতি ছিলেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিড়ি শিল্প বন্ধ হবে ২ বছররে মধ্যে তথা সিগারটে বন্ধ হবে ২০ বছররে মধ্যে তাও আবার ভারত এবং মিয়ানমারের সাথে আলোচনা করে। এই সিদ্ধান্ত চরম বৈষম্যমূলক। ভারত যেখানে বিড়ি শিল্পকে কুটির শিল্প ঘোষণা করেছে ট্যাক্স নিচ্ছে ১৪ টাকা। পক্ষান্তরে বাংলাদশেরে প্রতি হাজার বিড়িতে ট্যাক্স দিতে হয় ২৫৬ টাকা। বক্তারা আরো বলনে, বৃটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কতৃক ১৯শ ২৪ কোটি টাকা কর ফাঁকির পাশাপাশি ৩৫ টাকার মূল্যের সিগারেট ২৭ টাকায় বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে র্অথমন্ত্রী কোন গুরুত্ব না  দিয়ে শ্রমঘন বিড়ি শিল্পকে বন্ধের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন।
শেরপুরে বিড়ি শ্রমিক ও ভোক্তাদের মানববন্ধন
শেরপুর হাসপাতাল রোডের সামনে বিড়ির শ্রমিক ভোক্তা  ও ব্যবসায়ীরা অর্থমন্ত্রীর ২ বছরের মধ্যে বিড়ি বন্ধের ঘোষণাসহ বৈসম্যমূলক করনীতি ও সিগারেটের পক্ষপাতমূলক আচরণের বিরুদ্ধে মানববন্ধন সমাবেশ ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে। বুধবার (২৫ এপ্রিল) সকালে কর্মসূচি উদ্বোধন করেন শেরপুর জেলা প্রেস ক্লাব ও আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার। বক্তব্য রাখেন জাতীয়  ভোক্তা পক্ষের নেতা নাসরুল্লাহ খান তাজ ও জেলা বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি তালাত মাহমুদ এবং জেলার সেক্রেটারি লুৎফর রহমান ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিল প্রায় ২ হাজার বিড়ি পক্ষের লোক। এবং দিনব্যাপী গণস্বাক্ষর কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। নেতারা বিড়ির উপর বৈষম্য মূলক আচরণ প্রত্যাহার করা না করলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status