পশ্চিমবঙ্গে তিন পর্ব পঞ্চায়েত নির্বাচন এক পর্বে ১৪ই মে

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হুমকির মুখে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সরকারের সুপারিশ অনুযায়ী তিন পর্বের নির্বাচন এক পর্বে করার ঘোষণা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন হবে ১৪ই মে। প্রয়োজন হলে পুনর্নির্বাচন ১৬ই মে। আর ফল ঘোষণা হবে ১৭ই মে। গত দু’দিন ধরে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচন কমিশন এক পর্বে নির্বাচন করার ব্যাপারে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে এক তরফাভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের হুমকি দেয়ার পরই কমিশন এক পর্বে নির্বাচনের সুপারিশ মেনে নিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছিল রমজান শুরু হয়ে গেলে নির্বাচন করা যাবে না। গত বুধবার বেশ কয়েকটি মুসলিম সংগঠনও কমিশনের সঙ্গে দেখা করে রমজান মাসে নির্বাচন না করার আরজি জানিয়েছিল। তবে একদিনে নির্বাচনে মোট ৫৮ হাজার ৪৬৭টি বুথে কিভাবে পুলিশি ব্যবস্থা করা হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, তারা ৪৬ হাজার সশস্ত্র পুলিশ এবং ১২ হাজার লাঠিধারী পুলিশ দিতে পারবে। বিরোধীরা বিষয়টি আদালতের গোচরে আনবে বলে জানিয়েছেন। বিজেপি নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আদালতের রাস্তা খোলা রয়েছে। তারা আদালতের কাছে যাবেন। এর আগে ১, ৩, ৫ই মে তিন দফায় পঞ্চায়েত ভোটের তফসিল প্রকাশ করেছিল কমিশন। কিন্তু মনোনয়ন প্রক্রিয়া ঘিরে মামলার জেরে, হাইকোর্টের নির্দেশমতো পুরনো তফসিল বাতিল করে নতুন তফসিল ঘোষণা করেছে। আদালতের নির্দেশমতো অতিরিক্ত একদিন মনোনয়নও নিতে হয় কমিশনকে।
জনমত সমীক্ষা: পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের নতুন তফসিল ঘোষণায় জটিলতা তৈরি হওয়া সত্ত্বেও জনমত সমীক্ষা প্রকাশ থেমে নেই। গত বুধবারই এবিপি আনন্দ-সি ভোটারের দ্বিতীয় দফায় জনমত সমীক্ষা প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসই এবারের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ২০টির মধ্যে ১৭টিতেই ক্ষমতায় আসছে। বাকি তিনটিতেও তারাই সবচেয়ে বেশি আসনের অধিকারী হবে। যে তিনটিতে ত্রিশঙ্কু ফল হবে বলে অনুমান সেগুলো হলো, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুর। অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার দল ১০০ শতাংশ আসনেই জয়ী হবে। সেই লক্ষ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই প্রচারে নেমে পড়েছে। আর মনোনয়ন পর্বে দলটি প্রায় ২৫ শতাংশ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় হাসিল করেছে। সর্বশেষ জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০টি জেলার ২০টি জেলা পরিষদের মোট ৮২৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পেতে পারে ৫৩২টি আসন। দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসতে পারে বিজেপি ১৬৭টি আসন জিতে। বাম দলগুলো এবং কংগ্রেসের ক্ষয় এই নির্বাচনেও অব্যাহত থাকছে বলে জনমত সমীক্ষায় জানানো হয়েছে। বামরা পেতে পারে মাত্র ৭৩টি আসন এবং কংগ্রেস পেতে পারে মাত্র ৪৩টি আসন। শতাংশের হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেস পেতে পারে  ৩৪ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে বিজেপি পেতে পারে ২৬ শতাংশ ভোট। বিজেপির এই ভোট পাওয়াকে পশ্চিমবঙ্গে দলটির উত্থানের শুরু বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন। অবশ্য জনমত সমীক্ষার ফল প্রায় সময়ই মেলে না। তবে একটা আভাস দেয়ার চেষ্টা বলে সমীক্ষকরা জানিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্য এই সমীক্ষাকে আদপেই গুরুত্ব দেয়নি।  তৃণমূল কংগ্রেস এ নিয়ে একটি কথাও বলেনি। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য বলেছেন, আমরা আরো ভালো করবো। জেলা পরিষদে ২০০ থেকে ২৫০ আসন পাবো। ৩০ শতাংশ ভোটও পাবো। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন ১০০ শতাংশ আসন জিতবেন। এর পরে যা হওয়ার তা-ই হবে। অন্য কিছু বলার নেই। প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মনোজ চক্রবর্তী বলেছেন, এই সমীক্ষা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। মনোনয়নেই এতো কাণ্ড। তার ওপর আবার ভোট ও তার ফল।