এক্সক্লুসিভ

গাজীপুর সিটি নির্বাচন

ফ্যাক্টর শ্রমিক ভোটার

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে

২৭ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৯:২৪ পূর্বাহ্ন

শিল্প-কারখানা অধ্যুষিত মহানগর গাজীপুর। এই সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে কয়েক হাজার শিল্প-কারখানা। এর মধ্যে পোশাক কারখানা রয়েছে সহস্রাধিক। নগরের বিভিন্ন এলাকার পোশাক শ্রমিকদের বেশির ভাগ স্থানীয় নয়। জীবিকার তাগিদেই তারা এখানে বাস করছেন। ভোটার তালিকা তৈরির সময় সময়ের অভাবে আরো টাকা খরচ করে নিজ নিজ বাড়িতে না গিয়ে কর্মস্থলেই ভোটার হয়েছেন তারা। আর এই ভোটাররাই নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে। নির্বাচনে পোশাক শ্রমিকসহ নানা ধরনের কারখানার শ্রমিকদের এই ভোট, প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। তাই প্রায় দুই লাখ শ্রমিক ভোটারের ব্যালট টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাকর্মীরা। তাদের ভোট নিজেদের ঘরে তুলতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। পোশাক শ্রমিকদের ভোটকে লক্ষ্মী হিসেবে মেনে নিয়েই তাদের দিকে আলাদা নজর দিচ্ছেন বড় দু’দলের মেয়র প্রার্থীরা।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারখানা শ্রমিকদের এই ভোট মেয়র প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ে একটি বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। শ্রমিকদের মন ভোলাতে এরই মাঝে ১৪ দলীয় জোট প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম আর ২০দলীয় জোট প্রার্থী হাসান উদ্দীন সরকার শ্রমিকদের কল্যাণে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ তৈরির অঙ্গীকারও রয়েছে তাদের। প্রধান দুই দলের প্রার্থীও পোশাক শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

 নবগঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে দুটি বিসিক শিল্প এলাকা। এ ছাড়াও মহানগরের প্রায় সব দিকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা। যার অধিকাংশ তৈরি পোশাকশিল্প। আর এসব কারখানায় কাজ করছেন লাখ লাখ শ্রমিক। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত এসব শ্রমিকদের মধ্যে দেড় লাখের বেশি শ্রমিক ভোটার রয়েছে মহানগরে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ে রড় ভূমিকা রাখবে। তাই এসব ভোটারদের রায় পেতে মেয়র প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা ধরনের আকর্ষণীয় প্রতশ্রিুতি।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গির আলম নিজেকে সব সময় তরুণ ও শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে প্রচার করে থাকেন। ছাত্র রাজনীতির মাঠ থেকে উঠে আসা এ নেতা শ্রমিকদের মন কাড়তে নানা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন অনেক দিন ধরেই। বিগত কয়েকটি মে দিবসে জাহাঙ্গীরের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিবস পালন করা হয়। শ্রমিকদের বিনোদনের জন্য আনা হয় জনপ্রিয় শিল্পি। এ ছাড়া শ্রমিক রাজনীতিতে জড়িতদের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন বিশেষ ধরনের সম্পর্ক। শ্রমিক ভোটারেদের প্রসঙ্গে ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী তরুণ রাজনৈতিক নেতা জাহাঙ্গীর আলম জানান, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র হতে পারলে তিনি একটি শ্রমিক বান্ধব সিটি করপোরেশন গড়ে তুলবেন। তাদের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে আলাদা স্থানে আবাসনের ব্যবস্থা করবেন। তাদের কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার জন্য আলাদা পরিবহনের ব্যবস্থা করবেন।

অন্যদিকে, শিল্পকারখানা সমৃদ্ধ টঙ্গীতে শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে হাসান উদ্দীন সরকারের ব্যাপক জনপ্রিয়তা। একজন সাবেক শ্রমিক নেতা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে এলাকায়। শ্রমিক নেতা থেকে রাজনৈতিক নেতা হয়েও তিনি সব সময় শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভূমিকা পালন করে থাকেন। ফলে শ্রমিক শ্রেণির ভোটারদের সমর্থন ও সহানুভূতি নির্বাচনে তার পক্ষে কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদী। পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের মন জয় করে তাদের সমর্থন আদায়ে তিনি নানা পকিল্পনা প্রণয়ন করছেন। বিশ দল সমর্থিত বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দীন সরকার এ বিষয়ে জানালেন, তিনি তার জীবনের একটা বড় সময় শ্রমিক রাজনীতিতে জড়িত থেকে তাদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেছেন। এবার মেয়র নির্বাচিত হলে শ্রমিকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলবেন। এ ছাড়া তাদের স্বাস্থ্য সেবায় আলাদা হাসপাতাল এবং  সন্তানদের স্বল্প খরচে লেখাপাড়ার জন্য ব্যবস্থা করবেন তিনি নির্বাচিত হলে।
তবে কেমন মেয়র চান এমন প্রশ্নের জবাবে কয়েকজন গার্মেন্টে শ্রমিক জানান, যারা রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন ছাড়াও তাদের দাবি দাওয়া আদায়ে যিনি পাশে থকবেন এবং তাদের নিরাপত্তা দিতে পারবেন তাকেই তারা ভোট দেবেন। সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ির মালিকরা বাসা ভাড়া বাড়িয়েই যাচ্ছেন অভিযোগ করে অনেক শ্রমিক বলেন, বাসা ভাড়া কমানোর যিনি প্রতিশ্রুতি দিতে পারবেন তাকে ভোট দেব। কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেন, ওভার টাইমের কাজ শেষে  
বাড়ি ফিরতে আমাদের অনেক রাত হয়ে যায়। এ সময় আমাদের চলাফেরায় নানা সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে ছনতাইকারিরা মোবাইল ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। এ কারণে যে শ্রমিকদের যিনি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন তাকে তারা ভোট দেবেন।  

শ্রমিকরা বলছেন আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তাসহ জীবনমান উন্নয়নে যিনি পাশে থাকবেন, মেয়র ও কাউন্সিলর হিসেবে তাকেই ভোট দেবেন তারা। ভোটের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্ব বিবেচনায় সতর্ক প্রার্থীরাও। শ্রমিকদের ভোট নিজেদের বাক্সে নিতে আলাদাভাবে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে টিম করে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছে আওয়ামী শ্রমিক লীগ। আওয়ামী লীগের গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠন, একই ভাবে মাঠে আছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status