এক্সক্লুসিভ

‘আমার হাত কোথায়’ সুমির প্রশ্ন মায়ের কাছে

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

২৭ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৯:২১ পূর্বাহ্ন

সড়ক দুর্ঘটনায় হাত হারানো সুমিকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। একটু পর পর কেটে ফেলা হাতের দিকে তাকিয়ে মাকে বলছে, মা আমার হাত কোথায়? চোখের পানি টলমল করছে মায়ের। সুমির কথায় কোনো উত্তর নেই মা মরিয়ম বেগমের। কষ্টের সংসার মরিয়ম বেগমের। সুমির বাবা উপার্জন করে ভ্যান চালিয়ে। মাসখানেক আগে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভ্যানের প্যাডেলে আর পা রাখতে পারেন না তিনি। মায়ের ঝিয়ের কাজই এখন দুই বেলার ভাত জোগারের ভরসা। এ রকম একটা সংসারে ঝড় নেমে আসবে কেউ কল্পনা করতে পারেনি। সুমির মা অনেকটা বোবা হয়ে গেছেন। শোকে পাথর হয়ে চোখ দুটো বড় করে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। মেয়ের মাথার পাশে সারাক্ষণ বসে বসে দিন রাত পার করছেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল হাসপাতালেই। হাউমাউ করে কাঁদতে দেখলাম। বাবার কান্না। ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেল উপস্থিত মানুষের হৃদয়। মেনে নিতে পারছে না কিছুতেই। মাসুম বাচ্চা। এত বড় কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা ওর নেই। তবুও তার উপর নেমে এসেছে বড় কষ্ট। আল্লাহকে তিনি বলছেন তুমি এই শিশুটির জন্য তোমার সর্বোচ্চ রহম নাজিল করো।
সুমির বাবা দুলাল মিয়া কেঁদে কেঁদে বললেন,  আমি ওর কষ্ট দেখে রাতে ঘুমাতে পারি না। খাবারো পেটে ঢুকছে না। কি করবো কূল খুঁজে পাচ্ছি না।
বগুড়ার একজন সাংবাদিক আ. ওয়াহেদ ফকির ঘটনার দিন শুরু থেকেই হাসপাতালে সুমিকে ভর্তির সময় সার্বিক সহযোগিতা করেছে। ওই সাংবাদিকের পকেটে ওই সময় যে পরিমাণ টাকা ছিল সব ওর মায়ের হাতে দিয়ে এসেছে। গতকাল আবার কয়েকজনের কাছে সহযোগিতা নিয়ে হাসপাতালে প্রয়োজন এমন সব জিনিসপত্র, সুমির জন্য গেঞ্জি, প্যান্ট কিনে দিয়ে এসেছেন।
ওর উন্নত চিকিৎসার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা প্রয়োজন। কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি ওর উন্নত চিকিৎসার জন্য হাত বাড়াতে পারেন। আমাদের দেশে এবং দেশের বাইরে অনেক মানুষ আছেন, যারা সুমির পাশে দাঁড়িয়ে ওর জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারেন। সুমির বাবা করজোরে অনুরোধ করছেন তার মেয়ের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে।
যদিও ডাক্তাররা বলছেন সুমির অবস্থা এখন ভালো। তবুও হাত হারানোর ব্যথায় সে এখনো হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে।
সুমির ছোট চাচি পারুল বেগম জানান, সুমির মা অনেকটা মানসিক প্রতিবন্ধী। মানুষের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে থাকে। ওর বাবারও বয়স হয়েছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তিনিও। আগে ভ্যান চালাত। এখন সেই কাজও করতে পারে না। সুমির মায়ের কাজের উপরেই ওদের দুই বেলা খাওয়া চলে। এমন পরিস্থিতিতে সুমিকে নিয়ে তারা ভীষণভাবে ভেঙে পরেছে। কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।  
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. রেজাউল আলম জুয়েল জানান, সুমির অবস্থা এখন আগের চেয়ে একটু ভালো। ওর জন্য হাসপাতাল থেকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।  
উল্লেখ্য, রোববার দুপুর দেড়টায় জেলার শেরপুর উপজেলার শেরুয়া বাজার থেকে মহাসড়ক ধরে হেঁটে বাড়িতে যাচ্ছিলেন মরিয়ম বেগম। মায়ের হাতে হাত রেখেই পাশাপাশি হাঁটছিল কন্যা সুমি। কিছু দূর গিয়ে মহাসড়ক ক্রস করে অন্য রাস্তায় যেতে হবে তাদের। মা মরিয়ম কন্যাকে কোলে তুলে নেয়। রাস্তার মাঝখানে গিয়ে পড়ে থাকা একটি পাথরের সঙ্গে হোঁচট লেগে দু’জনেই পড়ে যায়। পিছন থেকে দ্রুতগতির একটি ট্রাক রাস্তায় পড়ে যাওয়া সুমির বাম হাতের উপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই বাম হাত ছিঁড়ে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হতবাক হয়ে যায় মা। কন্যার এই অবস্থায় কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে সুমিকে উদ্ধার করে প্রথমে ওই এলাকার দুবলাগাড়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা তার প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। কিন্তু তার অবস্থা বেশি  খারাপ হলে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) স্থানান্তর করা হয়। সুমি এখন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। ওর জন্য সাহায্য পাঠাতে যোগাযোগ করুন প্রতীক ওমর, বগুড়া প্রতিনিধি দৈনিক মানবজমিন ০১৭১৭৮৫২৬৮২।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status