প্রথম পাতা

ঢাবি শিক্ষকদের মানববন্ধন

ছাত্রদের আটক করার আগে আমাদের আটক করতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

২৩ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রীদের হল প্রশাসন বের করে দেয়ার ঘটনাকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রাতিষ্ঠানিক নারী নির্যাতন বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধনে শিক্ষকরা কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কবি সুফিয়া কামাল হলসহ বিভিন্ন হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রশাসন ও সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন কর্তৃক হয়রানির নিন্দা জানান। তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের যে কোনো ন্যায্য দাবির 
সঙ্গে শিক্ষকরা পাশে আছে, থাকবে। যদি ছাত্রদের হয়রানি করা হয়, তাহলে শিক্ষকরা সমুচিত জবাব দিবে। তারা বলেন, ছাত্রদের আটক করার আগে শিক্ষকদের আটক করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সচেতন শিক্ষকবৃন্দ ব্যানারে ‘ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা কর’ শীর্ষক এই মানববন্ধনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকগণ। অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ এর সভাপতিত্বে ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস এর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ব্যাপারী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক সংগীতা আহমেদ, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাসরীন ওয়াদুদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান প্রমুখ।
মানববন্ধনে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি ভিসি তিনি শিক্ষার্থীদের যেমন শিক্ষক তেমন অভিভাবকও। অথচ তিনি বলেছেন অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। এটা আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মনে হয়েছে। বাংলাদেশে এই প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারী নির্যাতিত হলো। সেটা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সুতরাং এটা আমাদের সকলের জন্য লজ্জার। আমি শুধু এটা বলবো প্রাতিষ্ঠানিক নারী নির্যাতনের ঘটনা এটাই যেন সর্বশেষ হয়।’ অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে কোনো ন্যায্য দাবির সঙ্গে আমরা শিক্ষকরা আছি, পাশে  থাকবো। যদি ছাত্রদের হয়রানি করা হয়, তাহলে শিক্ষকরা সমুচিত জবাব দিবে। ছাত্রদের আটক করার আগে আমাদের আটক করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘আমরা কোনো বিশেষ রঙের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য এখানে দাঁড়াইনি। আমরা সাধারণ ছাত্র, শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ রক্ষার জন্য এখানে দাঁড়িয়েছি। যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র দায়ী। আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি ও প্রক্টরের অনুমতি ছাড়া পুলিশ ঢুকতে পারে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে যারা রয়েছেন তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। আমরা হলে হলে দেখতে পাই সামন্ত প্রভুর কর্তৃত্ব কায়েম হয়েছে। কিন্তু সেই হলের প্রভোস্ট সেই হলের হাউজ টিউটরের দায়িত্ব ছিল এই ধরনের কার্যক্রম থেকে তাদের বিরত রাখা। কিন্তু তারা দলের স্বার্থ দেখবেন নাকি ছাত্রদের স্বার্থ দেখবেন, এই দুইয়ে দোদুল্যমান রয়েছেন।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি শিক্ষকদের দাবি তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান। দাবিসমূহ হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখতে হবে; তাদের মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে; ক্যাম্পাসে সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; বিধিসম্মতভাবে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ব্যতীত কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না; রাষ্ট্রীয় বাহিনী কিংবা বেসরকারি কোনো গোষ্ঠী দ্বারা কোনো ছাত্র-ছাত্রী যেন আক্রান্ত না হয় সেজন্য অবিলম্বে একটি বিশেষ সেল গঠন করতে হবে; অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নয়, আন্দোলন চলাকালে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোর সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ভিসির বাসভবনে নারকীয় তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ভবনসহ সকল আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে এবং তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষা দিতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status